চট্টগ্রামে মনিটরিংয়ের অভাবে দিন দিন অস্থির হয়ে পড়ছে ভোগ্যপণ্যের বাজার। সরকার নির্ধারিত দাম কাগজে-কলমে থাকলেও বাজারের কোথাও এই দামে পণ্য বিক্রি হচ্ছে না। কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণে আসছে না ডিম, আলু, পেঁয়াজ ও কাঁচা মরিচের দাম। বাড়তি দামে এসব পণ্য কিনতে ক্রেতাদের নাভিশ্বাস উঠছে। এ অবস্থায় অনেকেই পণ্য না কিনে ফিরে যাচ্ছেন। সরকার কয়েকটি নিত্যপণ্যের দাম ঠিক করে দিলেও বাজারে নেই তার কোনো প্রভাব। বিক্রেতারা বলছেন, উৎপাদন খরচ বাড়ায় কৃষকপর্যায়েই দাম বেশি। তার প্রভাব পড়েছে বাজারে। সরবরাহ সংকটে নতুন করে বেড়েছে সব ধরনের সবজির দামও। এতে বিপাকে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। সবচেয়ে কষ্টে আছেন স্বল্প আয়ের লোকজন। ক্রেতারা বলছেন, সরকার কোনো পণ্যের দাম বাড়ালে ব্যবসায়ীরা মিনিটের মধ্যে কার্যকর করে। আর দাম কমালে দিনের পর দিনেও কার্যকর হয় না। সরকার নির্ধারিত দাম কাগজে-কলমেই সীমাবদ্ধ থাকে। বেঁধে দেওয়া দাম বাজারে কার্যকর হয়েছে কী-না, তা যাচাই-বাছাই করারও যেন কেউ নেই। সাধারণ মানুষ অসহায় অসাধু ব্যবসায়ীদের কাছে। তবে ভোজ্যতেলের ব্যবসায়ীরা বলছেন, নতুন নির্ধারণ করা দামের ভোজ্যতেল এখনো বাজারে আসেনি। ফলে অতিরিক্ত দামে ভোজ্যতেল বিক্রি করতে হচ্ছে। গত ১৪ সেপ্টেম্বর পেঁয়াজ, আলু ও ডিম-এই তিন পণ্যের দাম নির্ধারণ করে প্রজ্ঞাপন জারি করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছিল-প্রতি কেজি আলুর কোল্ড স্টোরেজ পর্যায়ে দাম হবে ২৬ থেকে ২৭ টাকা এবং খুচরা মূল্য হবে ৩৫ থেকে ৩৬ টাকা। কেজি প্রতি দেশি পেঁয়াজের পাইকারি দাম হবে ৫৩ থেকে ৫৪ টাকা এবং খুচরা দাম হবে ৬৪ থেকে ৬৫ টাকা। এছাড়া প্রতি পিস ডিমের উৎপাদন পর্যায়ে দাম হবে সাড়ে ১০ টাকা এবং খুচরা দাম হবে ১২ টাকা। চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের একাধিক ব্যবসায়ী জানান, দেশের বৃহৎ ভোগ্যপণ্যের বাজার চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে আগের মতো এখন তদারকি নেই। ফলে একাধিক আমদানিকারক, কমিশন এজেন্ট ও আড়তদার তাদের ইচ্ছামতো ভোগ্যপণ্যের দাম আদায় করছেন। তারা সরকার নির্ধারিত দামের তোয়াক্কা করছেন না। ফলে বাজারে অস্থিরতা সৃষ্টি হচ্ছে। প্রতি কেজি ভালোমানের ভারত থেকে আমদানি করা পেঁয়াজ পাইকারিতে বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকা থেকে ৭২ টাকা। খুচরায় তা বিক্রি হচ্ছে ৮৫ টাকার বেশি দামে। তবে কিছু নিুমানের পেঁয়াজ সরকার নির্ধারিত দামে বিক্রি হচ্ছে। দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৯০ টাকা থেকে ১০০ টাকা দরে। এছাড়া সিন্ডিকেটের প্রভাবে ও বাজার তদারকির অভাবে দাম বেড়েছে আদা ও রসুনসহ বিভিন্ন ভোগ্যপণ্যের। চট্টগ্রামে ভারতীয় আদা ২৪০ টাকা, চায়না রসুন ১৯০-২০০, দেশি রসুন ২৪০ টাকা দরে, মসুর ডাল ১৩০ টাকা, মোটা মসুর ডাল ১০৫ টাকা, মুগ ডাল ১৩০ টাকা, খেসারি ডাল ৯০ টাকা, বুটের ডাল ১০০ টাকা, ছোলা ৭৫ টাকা, প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৭৫ টাকা, চিনি ১৪০ টাকা, দুই কেজি প্যাকেট ময়দা ১৪০ টাকা, আটা দুই কেজির প্যাকেট ১২০ টাকা, খোলা সরিষার তেল প্রতি লিটার ২৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। নগরীর একাধিক কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা গেছে, সরকার নির্ধারিত দামে কোথাও ডিম বিক্রি হচ্ছে না। বাজারে প্রতি পিস ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৪ টাকায়। প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকার বেশি দামে। চট্টগ্রামে আলুর কৃত্রিম সংকট তৈরি করে অতিরিক্ত মুনাফা হাতিয়ে সিন্ডিকেটটি উত্তরবঙ্গ থেকে আলুর সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে। খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ী কামরুল হাসান বলেন, চাক্তাই-খাতুনগঞ্জসহ বিভিন্ন বাজারে কঠোর মনিটরিংয়ের অভাবে নিত্য ও ভোগ্যপণ্যের বাজারে অস্থিরতা বিরাজ করছে। সিন্ডিকেটের মাধ্যমে এখানে বেশিরভাগ জিনিসের দাম বাড়ানো হচ্ছে। বাজারদর : বাজারে বেড়েছে মাছ ও মুরগির দাম। ব্রয়লারের কেজি বাজার ভেদে ১৯০ টাকা থেকে ২০০ টাকা, সোনালী ৩০০ টাকা। এদিকে বাজারে শীতকালীন সবজি উঠতে শুরু করলেও ক্রেতা পর্যায়ে নাগালে আসছে না দাম। বাজারে সিম বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকা কেজি, টমেটো ১০০ টাকা, ঢ্যাঁড়শ ৮০ টাকা, করলা ৮০ টাকা, বেগুন ৮০ টাকা, মুলা ৭০ টাকা, পটল ৮০, মিষ্টি কুমড়া ৫০ (কেজি), পেঁপে ৩৫-৪০ টাকা, কাঁচামরিচ ২০০ টাকা কেজি। এ ছাড়া শসা ৮০ টাকা, গাজর ১২০ টাকা, বরবটি ১২০ টাকা, ফুলকপি ৪০ টাকা (ছোট), বাঁধাকপি ৩০ টাকা (ছোট) দরে বিক্রি হচ্ছে। রুই মাছ ৬০০ টাকা, কাতল মাছ ৬০০ টাকা, কালিবাউশ ৪৫০ টাকা, চিংড়ি মাছ ৮০০-১০০০ টাকা, কাঁচকি মাছ ৫০০ টাকা, কৈ মাছ ৪০০ টাকা, পাবদা মাছ ৪৫০ টাকা, শিং মাছ ৪৫০-৬০০ টাকা।