আসন্ন দুর্গাপূজা ও কমিউনিটি পুলিশ ডে উদযাপনের নামে সাড়ে ১০ লাখ টাকা চাঁদা চেয়েছেন হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জ থানার ওসি মোহাম্মদ নাজমুল হক কামাল। জেলার তিনটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে লিখিতভাবে নিজের পরিচয় ও সিল-স্বাক্ষর দিয়ে এই টাকা দাবি করা হয়। সরকারি বরাদ্দ থাকা সত্ত্বেও ওসির এমন কাণ্ডে জেলার সর্বত্র সমালোচনার ঝড় বইছে। একজন থানার ওসি এভাবে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে টাকা চাইতে পারেন কিনা জানতে চাইলে সিলেট রেঞ্জ ডিআইজি শাহ মিজান শাফিউর রহমান শুক্রবার বলেন, ‘এভাবে টাকা চাওয়ার প্রশ্নই আসে না। বিষয়টি সত্য হলে ওসির বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ শায়েস্তাগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ নাজমুল হক কামাল শায়েস্তাগঞ্জের অলিপুরে অবস্থিত হবিগঞ্জ ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের জিএম (অ্যাডমিন), স্কয়ার ডেনিমস্ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও তাফরিদ কটন মিলসের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কাছে সহযোগিতা চেয়ে পৃথক তিনটি চিঠি লেখেন। ১০ অক্টোবর ওই চিঠিতে ওসির স্বাক্ষর রয়েছে। চিঠিতে বলা হয়, ‘শারদীয় দুর্গাপূজা ও কমিউনিটি পুলিশ ডে উপলক্ষ্যে প্রত্যেকের কাছে সাড়ে তিন লাখ টাকার হিসাব দেওয়া হয়। নাস্তা-পানীয় সরবরাহ করার বিষয় উল্লেখ করে পূজা ও কমিউনিটি পুলিশ ডে’র নামে টাকা চাওয়া হয়। তিনটি চিঠির ভাষা একই। চিঠিতে বলা হয়, ‘আগামী ১৪ অক্টোবর (আজ) শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষ্যে পূজা কমিটির সভাপতি, সহসভাপতি, কমিটির অন্যান্য সদস্যসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, সুশীল সমাজের ব্যক্তিবর্গদের নিয়ে একটি মিটিংয়ের আয়োজন করা হয়েছে। পূজা সংক্রান্ত উক্ত অনুষ্ঠানে আপনার উপস্থিতি একান্ত কাম্য। অনুষ্ঠানে উপস্থিত লোকজনদের নাস্তা এবং আপ্যায়নের জন্য বর্ণিত মালামাল সরবরাহ করে পুলিশের সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করার অনুরোধ করা হলো। চিঠিতে ওসি কামাল খাবারের ৬টি আইটেমের উল্লেখ করেন। পূজা উদযাপনের নামে কাচ্চি বিরিয়ানি, জিলাপি, মিষ্টি, দই, পানি, বিভিন্ন প্রকার ফলের খরচ বাবদ ১ লাখ টাকা এবং একই চিঠিতে আলাদাভাবে আগামী ২৮ অক্টোবর কমিউনিটি পুলিশিং ডে উদযাপনের আড়াই লাখ টাকার ফিরিস্তি তুলে ধরা হয়। পুলিশিং ডে’র কথা উল্লেখ করে প্রত্যেক চিঠিতেই ৫শ লোকের সমাগমের কথা বলা হয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত লোকজনদের আপ্যায়নে নানা ধরনের খাবারের আয়োজনের কথা বলেন। এই আইটেমে রাখা হয়, কাচ্চি বিরিয়ানি, কেক, মিষ্টি, পানি ও বিভিন্ন প্রকার ফল। কমিউনিটি পুলিশ ডে উপলক্ষ্যে ব্যানার, ফেস্টুন, মাইকিং, ফিল্ড ক্যাপও এই চাঁদার মধ্যে ধরা হয়। তিন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের একজন কর্মকর্তা বলেন, এর আগে এভাবে কোনো থানার ওসিকে চাঁদা বা সহযোগিতা চাইতে দেখিনি। শুনেছি তিনটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে একই ধরনের চিঠি দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, ওসি যে সিল বানিয়েছেন সেখানে শিক্ষাগত যোগ্যতার ডিগ্রি উপস্থাপন করে নিজেকে জানান দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। ওসির এমন কাণ্ড পুলিশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন্ন করেছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দেখা উচিত। অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ওসি মোহাম্মদ নাজমুল হক কামাল প্রথমে অনেকটা রাগান্বিত হয়ে বলেন, কে দিয়েছে আপনাকে সেই চিঠি। নাম বলেন। এমন চিঠি দিতে পারেন কিনা প্রশ্ন করা হলে বলেন আমি চিঠি দিইনি। গলার স্বর নরম করে আবার বলেন, ভাই থানায় চা খেয়ে যাবেন।