নেত্রকোনার কেন্দুয়ায় ১২০০ সালে প্রতিষ্ঠিত ৮২৩ বছরের পুরোনো মসজিদটি উপজেলার মোফাফরপুর ইউনিয়নে হারুলিয়া গ্রামে হারুলিয়া পুরাতন মসজিদ নামে পরিচিত। দিল্লিতে তখন সুলতানদের যুগ। স্থানীয় লোকজনের ধারণা, মুঘল আমলে নির্মিত পুরোনো মসজিদটি ইসলামী ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক। মসজিদটি মুঘলদের রাজত্বকালে ইখতিয়ার উদ্দিন মুহাম্মদ বিন বখতিয়ার খিলজির স্নেহধন্য শাইখ মুহাম্মদ ইয়ার নামে এক ব্যক্তি ১২০০ খ্রিস্টাব্দে মসজিদটি প্রতিষ্ঠা করেন কেন্দুয়া উপজেলার হারুলিয়া গ্রামে। এ মসজিদের ভেতরের দেয়ালে ফার্সিতে লেখা শাইখ মোহাম্মদ ইয়ারের নাম এবং ১২০০ খ্রিস্টাব্দের কথা উল্লেখ থাকায় শাইখ মুহাম্মদ ইয়ারকে এ মসজিদটির প্রতিষ্ঠাতা মনে করা হয়। মসজিদটি ৭ শতাংশ ভূমির ওপর নির্মিত। মসজিদের চারকোনায় রয়েছে চারটি পিলার। যার ওপরে কলসির আকৃতিতে গম্বুজের কারুকার্য করা। মসজিদের ছাদজুড়ে বিশাল একটি গম্বুজও রয়েছে। মসজিদের নির্মাণশৈলী ও অবকাঠামো পোড়ামাটি, লালি, চুন, চিনি, চিটাগুড়, কষ এবং এক ধরনের রাসায়নিক পদার্থ দ্বারা নির্মাণ করা হয়েছে। মুঘল আমলে নির্মিত মসজিদগুলোর মধ্যে হারুলিয়া মসজিদও একটি। মসজিদটির সামনে রয়েছে সুবিশাল জালিয়ার হাওর। হাওর সংলগ্ন এ মসজিদটি মুঘল আমলের মানুষের ইবাদত-বন্দেগির স্মৃতিচিহ্ন ধারণ করে রয়েছে। কেন্দুয়া পৌর শহর থেকে প্রায় ৮ কিলোমিটার পূর্বদিকে মসজিদের অবস্থান। প্রতিদিন অনেকে মসজিদটি দেখতে আসেন। মসজিদের ইমাম মাওলানা মুহাম্মদ আবদুল্লাহ বলেন, মসজিদে দেয়ালে ফার্সিতে লেখা শাইখ মোহাম্মদ ইয়ারের নাম এবং ১২০০ খ্রিস্টাব্দের কথা উল্লেখ করা একটি পাথর ছিল। পরবর্তী সময়ে পাথরটি কে বা কারা চুরি করে নিয়ে যায়। বহুকাল আগে নির্মিত মসজিদটি জরাজীর্ণ হয়ে পড়ায় মূল অবকাঠামো অক্ষত রেখে বেশ কয়েকবার সংস্কার করা হয়েছে। মসজিদের ভেতরে অংশে ১৭ জন মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারেন। পরবর্তী সময়ে মসজিদের সামনের অংশে ছোট্ট একটি চার চালা টিনের ঘর তৈরি করা হয়েছিল। এরপর ওই চার চালা টিনের ঘরটি ভেঙে মানুষের কাজ থেকে সহযোগিতা এনে একটি পাকা বেডিং নির্মাণ করা হয়েছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিগণ আশ্বাস দিয়েছেন ভবন সম্প্রসারণের। এখন একসঙ্গে অনেক মানুষ নামাজ আদায় করতে পারেন। ১২০০ সালে প্রতিষ্ঠিত ঐতিহাসিক মসজিদটি ইসলামী ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক। মোজাফরপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোঃ জাকির আলম ভূঞা জানান এই মসজিদ রক্ষণাবেক্ষনের দায়িত্ব প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর নিলে মসজিদ টি পরবর্তী প্রজন্মের জন্য সংরক্ষণ করা সম্ভব হতো। এটি ইসলামী ঐতিহ্যের প্রাচীন নিদর্শন।