গাজায় জরুরিভিত্তিতে ওষুধ সহায়তার জন্য বাংলাদেশের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ঢাকায় নিযুক্ত ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রদূত ইউসেফ এসওয়াই রামাদান। তিনি বলেছেন, হাসপাতালে কোনো ওষুধ নেই। অনেক হাসপাতাল ধ্বংস করা হয়েছে। আহত নয় হাজার মানুষের চিকিৎসা এখন জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োজন। পুরো গাজা এখন কাঁদছে, ওদের কান্নার জবাব দিন। ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রদূত রোববার সঙ্গে একান্ত আলাপকালে এসব কথা বলেন। গাজার সর্বশেষ পরিস্থিতি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ফিলিস্তিনে বিশেষ করে গাজা উপত্যকায় মৌলিক মানবিক সহায়তা প্রয়োজন। এই মুহূর্তে প্রধানত ওষুধের প্রয়োজন সবচেয়ে বেশি। কারণ হাসপাতালে কোনো ওষুধ নেই। নয় হাজারের বেশি মানুষ আহত হয়েছেন। সাতটি হাসপাতাল ধ্বংস করা হয়েছে। আমাদের খুব কম হাসপাতাল অবশিষ্ট আছে। আহত মানুষের জন্য আমাদের কোনো ওষুধ নেই। এই নয় হাজার মানুষের চিকিৎসার জন্য চিকিৎসকও নেই। ভয়াবহ ঘটনা ঘটছে। রাষ্ট্রদূত ইউসেফ এসওয়াই রামাদান বলেন, গাজায় কোনো বিদ্যুৎ নেই। বিদ্যুৎ না থাকায় হাসপাতালে অপারেশন করা সম্ভব হচ্ছে না। অক্সিজেন ব্যবহারেও সমস্যা হচ্ছে। আমাদের অক্সিজেন প্রয়োজন। হাসপাতালে যা কিছু প্রয়োজন তা গাজায় নেই। মানুষের মৌলিক চাহিদা মেটাতে যা কিছু প্রয়োজন, তা গাজায় নেই। এটা একটা ভয়াবহ বিপর্যয়। যারা মারা গেছেন তাদের ৪২ শতাংশ শিশু। এটা স্পষ্ট যে, ইসরাইল ইচ্ছাকৃতভাবে শিশুদের টার্গেট করেছে। চাপ সৃষ্টি করার জন্য তারা শিশুদের টার্গেট করেছে। পশ্চিমা বিশ্বের কাছে আমার প্রশ্ন, আমরাও মানুষ। আমাদের একইভাবে বিবেচনা করুন যেভাবে অন্য জাতিকে বিবেচনা করেন। আপনারা ইউক্রেনকে যেভাবে দেখেন আমাদেরকেও একইভাবে দেখেন। আমাদেরকে এমনভাবে দেখবেন না যে আমরা আপনাদের চেয়ে মানুষ হিসাবে কম মর্যাদাসম্পন্ন। বাংলাদেশের কাছে এ মুহূর্তে ফিলিস্তিন কী চায় জানতে চাইলে রাষ্ট্রদূত রামাদান বলেন, বাংলাদেশ সরকার সবই করছে যা তারা পারে। আমি এই মাত্র বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে বলেছি- আমাদের যুদ্ধ, রক্তপাত এবং গণহত্যা বন্ধ করা প্রয়োজন। ইসরাইল অপরাধ করছে। আমাদের হাসপাতালে সহায়তা করুন। হাসপাতালে অনেক কিছু প্রয়োজন। প্লিজ, এগুলোকে সহায়তা করুন। আমাদের বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও মানুষের খাবার প্রয়োজন। খাবার পানিরও তীব্র সংকট চলছে। জরুরিভিত্তিতে এগুলো বেশি প্রয়োজন। তিনি বলেন, আমরা রাজনীতি নিয়ে কথা বলতে পারি। দুই রাষ্ট্র সমাধানের কথা বলতে পারি। কিন্তু এখন আমার মানুষ মারা যাচ্ছে। তারা মারা যাচ্ছে কারণ আমাদের পানি নেই, বিদ্যুৎ নেই, চিকিৎসার জন্য পর্যাপ্ত ডাক্তার নেই, হাসপাতালে ওষুধ নেই। তাদের প্রয়োজন সহায়তা। মানবিক সহায়তা পৌঁছানো যাচ্ছে না : ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা রোববার বলেন, বাংলাদেশ গাজা উপত্যকায় ওষুধ পাঠাতে চায়। কিন্তু সেখানে ওষুধসহ মানবিক সহায়তার পথ বন্ধ। গাজায় কোনো সামগ্রী পাঠানোর দুটি পথ রয়েছে। দুটি পথই এখন বন্ধ। এদিকে ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রদূত ইউসেফ রামাদান রোববার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। বৈঠকের পর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তরফ থেকে একটি বিবৃতি দেওয়া হয়। বিবৃতিতে বলা হয়, গাজায় নির্বিচারে বলপ্রয়োগের মাধ্যমে নারী ও শিশুসহ বেসামরিক মানুষের হতাহতের ঘটনা বাড়িয়ে তোলায় বাংলাদেশ তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে। মানবিক বিপর্যয় মোকাবিলায় অবরুদ্ধ গাজায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মানবিক সহায়তা গ্রহণে অনুমতি দেওয়ার জন্যও বাংলাদেশ আহ্বান জানায়। দীর্ঘমেয়াদি শান্তির জন্য বাংলাদেশ জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের সিদ্ধান্ত মোতাবেক দুই রাষ্ট্র সমাধান করার আহ্বানও জানায়।