চাঁদাবাজি-হাতুড়িপেটা করাসহ ১৭ অভিযোগ এমপি’র বিরুদ্ধে

প্রকাশিতঃ অক্টোবর ১৭, ২০২৩ | ৮:৪৯ পূর্বাহ্ন
অনলাইন নিউজ ডেক্স

দলীয় কার্যালয়ের টাকা আটকে রাখা, নেতাকর্মীদের মাঝে বিভাজন সৃষ্টি, পৌরসভা থেকে শুরু করে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী দেওয়া, যুবলীগ নেতাকে হাতুড়িপেটা, বীর মুক্তিযোদ্ধার বাড়ি দখল, ইটভাটা ও ঠিকাদারি কাজ থেকে চাঁদাবাজি, খাল দখল করে বাড়ির সীমানা প্রাচীর নির্মাণের মতো ১৭টি অভিযোগ তোলা হয়েছে বরিশাল-২ (বানারীপাড়া-উজিরপুর) আসনের সংসদ সদস্য এবং বানারীপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য শাহে আলমের বিরুদ্ধে। এসব অভিযোগে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে তাকে। দলীয় প্যাডে কারণ দর্শানোর নোটিশে স্বাক্ষর করেছেন বানারীপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান গোলাম ফারুক এবং সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মাওলাদ হোসেন সানা। গত ৩ অক্টোবর এ কারণ দর্শানোর দেওয়া হলেও রবিবার রাতে তা সাংবাদিকদের জানানো হয়। তবে শাহে আলম বলছেন, তিনি এরকম কোনও নোটিশ পাননি। সাংবাদিকদের দেওয়া দলীয় প্যাডে লেখা নোটিশের কপিতে উল্লেখ রয়েছে, ২৯ সেপ্টেম্বর উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত আপনি ওই সব শৃঙ্খলাবিরোধী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত রয়েছেন। আপনার অশোভন ও ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণে অনেকেই রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে আসতে বিব্রতবোধ করেন। এ কারণে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে। ১৭টি অভিযোগের ভিত্তিতে কেন তার বিরুদ্ধে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে না- সেব্যাপারে নোটিশ প্রাপ্তির ১৫ দিনের মধ্যে লিখিতভাবে জবাব দেওয়ার অনুরোধ করা হয়। অভিযোগগুলো হলো—১. উপজেলা আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয় নির্মাণে দুই লাখ টাকা নিজের কাছে রেখে দেওয়া; ২. দলীয় নেতাকর্মীদের মাঝে বিভাজন সৃষ্টি করে নিজস্ব বলয় তৈরির চেষ্টা, (এ পয়েন্টে বিভাজনের কিছু উদাহরণ তুলে ধরা হয়); ৩. বানারীপাড়া পৌরসভা, চাখার ও সৈয়দকাঠী ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নৌকার বিপক্ষে বিদ্রোহী প্রার্থী দেওয়া; ৪. বন্দর বাজারে যুবলীগ নেতা আতিক বাপ্পীকে এমপির অনুসারীদের দিয়ে পিটিয়ে হাত-পা ভেঙে দেওয়া এবং পরবর্তীতে বাপ্পী ও তার স্ত্রীকে নামে মিথ্যা মামলা দিয়ে গ্রেফতার করানো। ৫. এ বছর জাতীয় শোকসভা চলাকালে এমপির সামনে তার অনুসারীরা উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সদস্য শের-ই-বাংলা একে ফজলুল হকের নাতি ফাইয়াজুল হক রাজুকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করে, এমনকি এমপি শাহে আলমও রাজুর সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেন বলে উল্লেখ করা হয়। ৬. এমপির চাচাতো ভাই নুরুল হুদা উপজেলা আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ের চাবি জোর করে কেয়ারটেকারের কাছ থেকে নিয়ে যাওয়ায় দলীয় কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হওয়া; ৭. এমপির কারণে মডেল মসজিদ নির্মাণ শুরু না হওয়া; ৮. মুক্তিযুদ্ধের প্রথম শহীদ বুদ্ধিজীবী ড. জ্যোতির্ময় গুহর শেষ সম্বলটুকু জোর করে একটি স্কুলের নামে দখল; ৯. উপজেলা আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ের উন্নয়নমূলক কাজের জন্য রাখা ৫৪ লাখ টাকা নিজের পকেটে নেওয়া; ১০. বানারীপাড়া হাইস্কুলের অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের নামে ২০টি ইটভাটা থেকে ৫০ হাজার টাকা করে চাঁদা আদায়। ১১. বাকপুর ইউনিয়নে ঈদগাহ মাঠের উন্নয়নে ইটভাটা থেকে ৪০ হাজার টাকা করে উত্তোলন; ১২. বানারীপাড়া পিআইও অফিসের ৪০ দিনের কর্মসূচির ৫ শতাংশ বিতরণ না করা; ১৩. পহেলা বৈশাখের নামে পিঠা উৎসব পালনে এক চেয়ারম্যানের কাছ থেকে এমপির প্রতিনিধি ডা. সেলিমের ৫০ হাজার টাকা চাঁদা উত্তোলন; ১৪. বানারীপাড়া বন্দর বাজার, চাখার সরকারি ফজলুল হক কলেজে ছয়তলা ভবন নির্মাণ কাজের জন্য ঠিকাদার সৈয়দ মজিবুর হক টুকুর কাছ থেকে ১০ লাখ টাকা আদায় করতে চেয়ারম্যানকে নির্দেশ দেওয়া। ১৫. সরকারি খাল দখল করে এমপির বাড়ির সীমানা প্রাচীর নির্মাণ; ১৬. এমপির ছোট ভাই রিয়াজ বিএনপির ব্যবসায়ীদের নিয়ে ঠিকাদারি কাজ করে, এছাড়া তার ভাগ্নে রুথেন আত্মীয়স্বজনের মাঝে ঠিকাদারি কাজ ভাগবাটোয়ারা করে; ১৭. বানারীপাড়ার কোনও ঠিকাদার কাজ পেলে এমপির নামে উপজেলা ইঞ্জিনিয়ার হুমায়ুন কবিরের ২ থেকে ৫ শতাংশ পর্যন্ত ভাগ আদায় করা। উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম ফারুক ও সাধারণ সম্পাদক মাওলাদ হোসেন ছানা এমপি শাহে আলমকে নোটিশ দেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেছেন। মাওলাদ হোসেন ছানা বলেন, এমপি শাহে আলমের কর্মকাণ্ডে নেতাকর্মী থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ পর্যন্ত ক্ষুব্ধ। এ নিয়ে দলীয় ফোরামে অভিযোগ উত্থাপিত হলেও এমপি শাহে আলম তাতে ভ্রুক্ষেপ করেননি। এ কারণে তাকে নোটিশ দেওয়া হয়েছে। আর ১৭টি পয়েন্ট উল্লেখ করা হয়েছে। তার প্রমাণ রয়েছে উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দের হাতে। আমরা আশা করছি তিনি প্রতিটি পয়েন্টের সন্তোষজনক উত্তর দেবেন। উত্তর না দিলে তার বিরুদ্ধে দলীয় নিয়মানুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। ছানা আরও বলেন, নোটিশের অনুলিপি বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের কাছেও পাঠানো হয়েছে। এ ব্যাপারে এমপি শাহে আলম বলেন, তিনি কোনও কারণ দর্শানোর নোটিশ পাননি। আর নোটিশের বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না। এ সময় শাহে আলমের পাশে থাকা উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জাকির হোসেন বলেন, দলীয় ফোরামে এ ধরনের কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি। আর নোটিশ প্রাপ্তির বিষয়টি আমার জানা নেই।