দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে যুক্তরাজ্যপ্রবাসী আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির শীর্ষ নেতারা দলীয় মনোনয়ন পেতে জোরেশোরে মাঠে নেমেছেন। প্রধান দুটি দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির প্রায় দেড় ডজন নেতা জাতীয় নির্বাচনে দেশের বিভিন্ন আসনে মনোনয়ন পেতে বিদেশে থেকেই প্রচারণা চালাচ্ছেন। দেশেও সরাসরি নির্বাচনি মাঠে আছেন কয়েকজন সম্ভাব্যপ্রার্থী। প্রবাসী প্রার্থীরা ইউরোপসহ যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন শহরে নিজ এলাকার প্রবাসীদের নিয়ে সভা ও মতবিনিময় করছেন। বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীরা সরাসরি মনোনয়ন লড়াইয়ে না নামলেও নিজ নিজ এলাকায় দলীয় ও বিভিন্ন পর্যায়ের কমিটিতে অনুসারীদের জায়গা করে দিয়ে নিজেদের অবস্থান মজবুত করছেন। দীর্ঘদিন যুক্তরাজ্যে প্রবাসজীবন কাটিয়ে ২০১৪ সালের নির্বাচনে সংসদ সদস্য হয়েছেন জাতীয় পার্টির তিন নেতা। যুক্তরাজ্য মহিলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি রহিমা আক্তার সংরক্ষিত মহিলা আসনে ২০১৪ সালের নির্বাচনে সংসদ সদস্য হন। সিলেট সিটি করপোরেশনের বর্তমান মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীও যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। হবিগঞ্জ-১ (নবীগঞ্জ-বাহুবল) আসনে ২০১৪ সালের নির্বাচনে সংসদ সদস্য জাতীয় পার্টির মুনিম চৌধুরী বাবু, সিলেট-৫ (জকিগঞ্জ-কানাইঘাট) আসনের সাবেক এমপি ও জাতীয় পার্টির হুইপ সেলিম উদ্দীনও দীর্ঘদিন যুক্তরাজ্য প্রবাসী ছিলেন। ছিলেন যুক্তরাজ্য জাতীয় পার্টির বিভিন্ন পদে। তিনি ২০১৪ সালের নির্বাচনে এমপি হয়েছিলেন। হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ-বাহুবল আসনে বিএনপির সাবেক এমপি শেখ সুজাত মিয়াও দীর্ঘদিন যুক্তরাজ্যপ্রবাসী ছিলেন। সিলেট-৩ আসনের সাবেক দুই এমপি ইয়াহিয়া চৌধুরী ও শফিক চৌধুরীর মতো বাবু ও সেলিম দলীয় টিকিটে এমপি হওয়ার পর দেশে স্থায়ী হয়েছেন। যদিও তাদের স্ত্রী-সন্তানরা এখনও যুক্তরাজ্যপ্রবাসী। FB_IMG_1697446403758 পর্তুগালে নিজ এলাকার মানুষজনকে নিয়ে সভা করছেন সিলেট-৩ আসনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী ব্যারিস্টার এম এ সালাম সিলেট-৩ আসনের বর্তমান এমপি হাবিবুর রহমান হাবিব যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের নেতা। এবার এ আসনে হাবিবের সঙ্গে যুক্তরাজ্যপ্রবাসী নেতারাও নৌকার প্রতীকের লড়াইয়ে আছেন। যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মুহাম্মদ মনির হোসাইন ও যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক সম্পাদক আ স ম মিসবাহও মনোনয়ন প্রত্যাশী। এ আসনে বিএনপির টিকিট পেতে দীর্ঘদিন ধরে মাঠে আছেন কেন্দ্রীয় কমিটির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা ব্যারিস্টার এমএ সালাম। সিলেট-২ আসনে বর্তমান এমপি গণফোরাম থেকে নির্বাচিত মোকাব্বির খানও যুক্তরাজ্য প্রবাসী। মোকাব্বির খানের সঙ্গে মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করে হেরে যাওয়া জাতীয় পার্টির সাবেক এমপি ইয়াহিয়া চৌধুরীও যুক্তরাজ্য প্রবাসী ছিলেন। এ আসনে গতবার নৌকার মনোনয়ন পেতে দুই মূল প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন সাবেক এমপি ও সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের এক সময়ের কাণ্ডারি শফিকুর রহমান চৌধুরী ও আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। আনোয়ারুজ্জামান সিলেট সিটির মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর এ আসনে এখন দলীয় প্রার্থিতার লড়াইয়ে এগিয়ে আছেন শফিক চৌধুরী। সিলেট-৬ আসনে যুক্তরাজ্য প্রবাসীদের মধ্যে জাতীয় পার্টির সাবেক এমপি সেলিম উদ্দীন মাঠে রয়েছেন। প্রবাসী নেতাদের মধ্যে মৌলভীবাজার-৩ সদর রাজনগর সংসদীয় আসনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা, দলের তিনবারের কেন্দ্রীয় আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক মাহিদুর রহমান ও যুক্তরাজ্য স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি ও কেন্দ্রীয় সহসভাপতি নাসির আহমেদ শাহীন। সুনামগঞ্জের নিজ নিজ আসন থেকে মনোনয়ন চান যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ সাজিদুর রহমান ফারুক, যুক্তরাজ্য বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কয়সর এম আহমেদ, যুক্তরাজ্য বিএনপির নেতা অ্যাডভোকেট তাহির রায়হান চৌধুরী। কুমিল্লার একটি আসন থেকে বিএনপি নেতা সলিসিটর একরাম মজুমদার বিএনপির মনোনয়ন চান। এছাড়া যুক্তরাজ্যপ্রবাসী নেতাদের মধ্যে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য এটিইউ তাজ রহমানের নাম আলোচনায় আছে। যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ সাজিদুর রহমান ফারুক সুনামগঞ্জ-৩ (দক্ষিণ সুনামগঞ্জ-জগন্নাথপুর) আসনের দলের মনোনয়ন প্রত্যাশী উল্লেখ করে সোমবার (১৬ অক্টোবর)বলেন, ‘গত নির্বাচনে মনোনয়ন পাওয়ার কথা থাকলেও বঞ্চিত হয়েছি। এবার নৌকা পেলে বিজয়ী হবো বলে আশা আছে। গত কয়েক বছর ধরে বছরের ৬ মাস নির্বাচনি এলাকায় থেকে মানুষের জন্য কাজ করছি।’ বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মাহিদুর রহমান বলেন, ‘দেশে সুষ্ঠু অবাধ নির্বাচন হলে মৌলভীবাজার সদর আসন থেকে দলের মনোনয়ন প্রত্যাশা করি। বিএনপি নির্বাচনে যেতে চায়। কিন্তু বিএনপি যাতে নির্বাচনে না যায়, সরকার তার সব আয়োজন করছে। নির্বাচনের লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড না থাকায় আমরা এখন নির্বাচন নয়, আন্দোলনে মনোযোগী।’