সরকার পতনের একদফা দাবিতে চলমান আন্দোলনে আবারও একইদিনে কর্মসূচি দেওয়ার আলোচনা চলছে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর মধ্যে। দুই দলের শীর্ষ নেতৃত্বের সরাসরি আগ্রহের কারণে উভয়পক্ষ একদিনে কর্মসূচির দেওয়ার পক্ষে মত দিয়েছে। আন্দোলনের চূড়ান্ত ধাপে সরকার পতন ত্বরান্বিত করার পর্যায়ে নেওয়ার জন্য দুই দলের শীর্ষ নেতাদের যোগাযোগ অব্যাহত রয়েছে। বিএনপি ও জামায়াতের প্রভাবশালী ও নির্ভরযোগ্য দুটি সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। বিএনপির দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে জামায়াত নেতাদের যোগাযোগ অব্যাহত রয়েছে। বিগত প্রায় দুই বছরের বেশি সময় ধরে প্রকাশ্যে বিএনপির নেতারা জামায়াত সম্পর্কে নানা নেতিবাচক মন্তব্য করলেও এবার তারা বিরত রয়েছেন। জামায়াতের রাজনীতির একজন ঘনিষ্ঠ পর্যবেক্ষক সোমবার (১৬ অক্টোবর) দুপুরে এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যকার দূরত্ব কমছে। দু’দলই কাছাকাছি এসেছে। নতুন করে কর্মসূচির ক্ষেত্রে কীভাবে একইদিনে প্রোগ্রাম করা যায়, এ বিষয়ে তারা একমত হয়েছে।’ বিষয়টি স্বীকার করে জামায়াতের কেন্দ্রীয় একজন প্রভাবশালী নেতা সোমবার রাতে বলেন, ‘বিএনপির নেতৃত্বের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ হচ্ছে। তবে একইদিনে কর্মসূচি দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়নি। এটা ফাইনাল হয়নি, আলোচনা চলছে।’ তিনি দাবি করেন, বিএনপির পক্ষ থেকে এখনও একইদিনে কর্মসূচি দেওয়ার বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে বলা হয়নি। যুগপতের সিদ্ধান্ত শুরুর দিকে ছিল। পরে সেটি আর বহাল থাকেনি।’ সরকার বিরোধী যুগপৎ আন্দোলনের প্রথম কর্মসূচি ছিল গত বছরের ৩০ ডিসেম্বর। সেদিন জামায়াতও গণমিছিল করেছিল। পরে বিএনপির অনাগ্রহে দলটি আর যুগপৎ কর্মসূচির সঙ্গে মিল রেখে কোনও প্রোগ্রাম দেয়নি। বিএনপির সঙ্গে যুগপতে যুক্ত গণতন্ত্র মঞ্চের প্রভাবশালী এক নেতার ভাষ্য— প্রকাশ্যে জামায়াতের সঙ্গে বিএনপি হয়তো প্রোগ্রাম করবে না। তবে তারা চেষ্টা করছে সবগুলো দলকে মাঠে নামাতে। সেক্ষেত্রে জামায়াত কর্মসূচি দিলে সেটাতে আমাদের বলার কিছু নেই।’ গত জুনের শুরুতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির উচ্চ পর্যায়ের দুই নেতার সঙ্গে জামায়াতের একাধিক নেতার আলাপ হয়। ওই সময় সঙ্গে আলাপকালে জামায়াতের নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেছেন, ‘বিএনপি ও জামায়াত পারস্পরিকভাবে যোগাযোগ করছে। উভয় দলের মধ্যে যোগাযোগ হচ্ছে।’ সূত্র উল্লেখ করেছে, ইতোমধ্যে বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ে থাকা নেতারা আন্দোলনে গতি বাড়াতে জামায়াতকেও রাজপথে সক্রিয় দেখতে চান। বিএনপির কোনও কোনও নেতা জামায়াতকে পরামর্শ দিচ্ছেন, আগে-ভাগেই রাজপথে নামতে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু সোমবার বলেন, ‘বিএনপি ও অন্যান্য বিরোধী দল যুগপৎ আন্দোলনে আছে, কারা আছে এটা পরিষ্কার। এখন যদি কেউ সরকার পতনের দাবিতে একইদিনে কর্মসূচি দেয়, আমাদের তো কিছু বলার নেই।’ ছাত্র ঐক্যে ঢুকতে চায় ছাত্রশিবির ছাত্রদলের নেতৃত্বে গঠিত ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র ঐক্যে যুক্ত হতে চায় ছাত্রশিবির। একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী জামায়াতের অনুজ এই সংগঠনটি ছাত্র ঐক্যে যুক্ত হওয়ার জোরালো তৎপরতা শুরু করেছে। এসব তৎপরতার মধ্যে উল্লেখযোগ্য— প্রভাবিত কিছু ছাত্র সংগঠনের মাধ্যমে ছাত্রদলের ওপর চাপ প্রয়োগ। ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র ঐক্যের একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা বলেন, ‘ছাত্রশিবির কয়েকটি সংগঠনের মাধ্যমে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় নেতাদের চাপ প্রয়োগ করছে। কীভাবে শিবিরকে এই ঐক্যে নেওয়া যায়, শিবির ছাড়া ছাত্র ঐক্য অকার্যকর ইত্যাদি কথা বলে নেতাদের চাপ দেওয়া হচ্ছে।’ ভোটের অধিকার, সন্ত্রাস-দখলদারমুক্ত নিরাপদ ক্যাম্পাস, সর্বজনীন শিক্ষা ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দাবিতে গত ২৯ সেপ্টেম্বর ১৫টি ছাত্র সংগঠনের নেতৃত্বে ‘ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র ঐক্য’ আত্মপ্রকাশ করে। চলতি বছরের জুন-জুলাইয়ে ছাত্রদের সমন্বিত উদ্যোগ নিয়ে ছাত্রদল, ছাত্র ফেডারেশনসহ বিভিন্ন সংগঠন কাজ শুরু করে। গত আগস্টে প্রক্রিয়াটি একটি গঠনের মধ্যে আসে। এতে রাখা হয়নি ছাত্রশিবিরকে। ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র ঐক্যের ১৫টি সংগঠন হলো— জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, ছাত্র ফেডারেশন, ছাত্র অধিকার পরিষদ, ছাত্রলীগ (জেএসডি), গণতান্ত্রিক ছাত্রদল (এলডিপি), নাগরিক ছাত্র ঐক্য, জাগপা ছাত্রলীগ, ছাত্র ফোরাম (গণফোরাম, মন্টু), ভাসানী ছাত্র পরিষদ, জাতীয় ছাত্রসমাজ (কাজী জাফর), জাতীয় ছাত্রসমাজ (বিজেপি-পার্থ), জাগপা ছাত্রলীগ (খন্দকার লুৎফর), ছাত্র জমিয়ত বাংলাদেশ, বিপ্লবী ছাত্র সংহতি এবং রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন। ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র ঐক্যের একাধিক নেতা উল্লেখ করেন, ছাত্রশিবিরকে যুক্ত করার চাপের বিষয়টি স্পষ্ট হয়েছে গত ১১ অক্টোবর। সেদিন ছাত্রশিবিরের ঝটিকা মিছিল থেকে সংগঠনটির ১২ জন নেতাকর্মীকে গ্রেফতারের প্রতিবাদ জানিয়ে আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেয় ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র ঐক্য। জাগপা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও ছাত্র ঐক্যের সমন্বয় পরিষদের সদস্য শ্যামল চন্দ্র সরকারের সই করা সেই বিবৃতি দেন ছাত্র ঐক্যের সমন্বয়ক রাশেদ ইকবাল খান (ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ছাত্রদল), মশিউর রহমান রিচার্ড (সভাপতি-ছাত্র ফেডারেশন) ও আরিফুল ইসলাম আদীব (সাধারণ সম্পাদক, ছাত্র অধিকার পরিষদ)। ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র ঐক্যের সমন্বয়ক আরিফুল ইসলাম আদীব বলেন, ‘ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র ঐক্য গঠিত হয়েছে যুগপৎ আন্দোলনে যুক্ত রাজনৈতিক দলগুলোর ছাত্র সংগঠনের সমন্বয়ে, সেই জায়গা থেকে আমরা ঐক্যে আছি। সেক্ষেত্রে শিবির এই ঐক্যে নেই। তবে বিএনপি-জামায়াতের মধ্যে যুগপৎ নিয়ে জটিলতা কেটে গেলে অবস্থার পরিবর্তন আসতে পারে।’