এক আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ৫০ লাখ টাকার বেশি আমানত নয়

প্রকাশিতঃ নভেম্বর ১, ২০২৩ | ৮:১৫ পূর্বাহ্ন
অনলাইন নিউজ ডেক্স

কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠানে একজন ব্যক্তি ৫০ লাখ টাকার বেশি আমানত রাখতে পারবেন না। বেনামি, অস্তিত্বহীন বা প্রতারণামূলক ঋণ অনুমোদনে সম্পৃক্ত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান, পরিচালক বা এমডিকে অপসারণ করতে পারবে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ ছাড়া এক পরিবার থেকে পরিচালক ও শেয়ার ধারণ, ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপির বিরুদ্ধে ব্যবস্থাসহ বিভিন্ন বিষয় যুক্ত করে ফাইন্যান্স কোম্পানি আইন-২০২৩ প্রণয়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন প্রক্রিয়া শেষে গত রোববার ‘ফাইন্যান্স কোম্পানি বিল-২০২৩’ সংসদে তোলেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। পরে বিলটি পরীক্ষা করে তিন দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়। ১৯৯৩ সালের এ-সংক্রান্ত আইন রহিত করে নতুনভাবে আইনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। চলতি অধিবেশনে এটি পাস হতে পারে। বিদ্যমান আইন অনুসারে, একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানে একজন ব্যক্তি যে কোনো অঙ্কের টাকা রাখতে পারেন। অবশ্য অন্য সব প্রতিষ্ঠানের মতো এ ক্ষেত্রেও আয়ের উৎস দেখাতে হয়। তবে নতুন আইনের খসড়ার পঞ্চম অনুচ্ছেদের ২৪(২) ধারায় বলা হয়েছে, ‘কোনো ফাইন্যান্স কোম্পানি কোনো ব্যক্তির কাছ থেকে একক নামে সর্বোচ্চ ৫০ লাখ টাকা বা যৌথ নামে সর্বোচ্চ ১ কোটি টাকা বা সময় সময় বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক নির্ধারিত সীমার অধিক আমানত গ্রহণ করিতে পারবে না।’ এমনিতেই এ ধরনের প্রতিষ্ঠান চলতি আমানত নিতে পারে না। সর্বনিম্ন ৩ মাস মেয়াদি আমানত নিতে পারে। বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, উচ্চ সুদের প্রলোভন, আত্মীয়তার সম্পর্কসহ বিভিন্ন উপায়ে অনেক আর্থিক প্রতিষ্ঠান মানুষের কাছ থেকে সঞ্চয় নিয়ে আর ফেরত দিচ্ছে না। ব্যাংক বা অন্য প্রতিষ্ঠানের তুলনায় বেশি লাভের কারণে অনেকেই জীবনের সব সঞ্চয় এক প্রতিষ্ঠানে রেখে আটকে গেছেন। তাঁর হয়তো ৫ কোটি টাকা সঞ্চয় আছে, অথচ সুদ-আসল কোনোটাই ফেরত না পাওয়ায় সংসার চালাতে পারছেন না। এখন টাকা তুলে দেওয়ার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকে অভিযোগের পর অভিযোগ করেন। তবে এ নিয়ে কিছু করা যাচ্ছে না। আগামীতে যেন কারও ক্ষেত্রে এ রকম না হয়, সে জন্য এমন ধারা যুক্ত করা হয়েছে। ফাইন্যান্স কোম্পানি আইনের খসড়ার ১৯ ধারায় বলা হয়েছে, কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে বেনামি ঋণ মঞ্জুর, কোনো জালিয়াতি বা প্রতারণার সঙ্গে সম্পৃক্ততা পাওয়া গেলে বাংলাদেশ ব্যাংক সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান, পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে অপসারণ করতে পারবে। অবশ্য অপসারণের আগে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে লিখিত নোটিশ এবং শুনানির সুযোগ দিতে হবে। এ ছাড়া কোনো ব্যক্তি বেনামি, অস্তিত্বহীন, নামসর্বস্ব বা ব্যবসায়িক কার্যক্রমে নিয়োজিত নয় এ রকম প্রতিষ্ঠানের নামে লিজিং কোম্পানির শেয়ার কিনলে তা সরকারের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত হবে। এ ছাড়া আমানতকারী বা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের স্বার্থে পরিপন্থি কাজ করলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদ অপসারণ করতে পারবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। আইনের খসড়ায় বলা হয়েছে, প্রত্যেক প্রতিষ্ঠান ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপির একটি তালিকা তৈরি করে বাংলাদেশ ব্যাংকে পাঠাবে। বাংলাদেশ ব্যাংক ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপির তালিকা ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বিভিন্ন সংস্থায় পাঠাবে। সংশ্লিষ্ট সংস্থা বিদেশ ভ্রমণ এবং ট্রেড লাইসেন্স ও কোম্পানি নিবন্ধনে নিষেধাজ্ঞা দিতে পারবে। এ ধরনের খেলাপিরা ৫ বছর পর্যন্ত ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে পরিচালক হতে পারবেন না। এ ধরনের ব্যক্তির কাছে সমুদয় পাওনা দুই মাসের মধ্যে পরিশোধে ব্যর্থ হলে তাঁর বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা করতে পারবে আর্থিক প্রতিষ্ঠান। সামর্থ্য থাকার পরও ঋণের অর্থ ফেরত না দিলে, ঋণের অপব্যবহার করলে এবং ভুয়া কাগজপত্রে ঋণ নেওয়ার বিষয় প্রমাণিত হলে তিনি ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি হিসেবে বিবেচিত হবেন। আগের আইনে এক পরিবার থেকে পরিচালক, শেয়ার ধারণ বিষয়ে কিছু বলা ছিল না। নতুন আইনের খসড়ায় বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি বা তাঁর স্বার্থসংশ্লিষ্ট পক্ষ অথবা একই পরিবারের সদস্যরা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে একক বা যৌথভাবে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ১৫ ভাগের বেশি শেয়ার কিনতে পারবেন না। একই পরিবার থেকে দু’জনের বেশি পরিচালক হতে পারবেন না। আর কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠানে উল্লেখযোগ্য শেয়ার ধারক তথা ৫ শতাংশের বেশি শেয়ার থাকলে একই সময়ে আর অন্য ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের উল্লেখযোগ্য শেয়ার ধারক হতে পারবেন না।