খুনিদের সঙ্গে সংলাপ নয় সময়মতোই নির্বাচন হবে

প্রকাশিতঃ নভেম্বর ১, ২০২৩ | ৮:১৬ পূর্বাহ্ন
অনলাইন নিউজ ডেক্স

আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে বিএনপির সঙ্গে সংলাপের সম্ভাবনা নাকচ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, কার সঙ্গে সংলাপ? খুনিদের সঙ্গে কীসের সংলাপ, কীসের আলোচনা? খুনিদের সঙ্গে সংলাপ– এটি বাংলাদেশের জনগণও চাইবে না। বরং এ দেশের মানুষ বিএনপি-জামায়াতকে ঘৃণা করে। তারা ঘৃণার পাত্র। নির্বাচন নিয়ে সব সংশয় ও অনিশ্চয়তা দূর করে দিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেছেন, একটি কথাই বলব– নির্বাচন হবে এবং সময়মতোই হবে। কে চোখ রাঙালো, আর কে বাঁকালো, আমরা ওটার পরোয়া করি না। অনেক সংগ্রাম করে আমরাই মানুষের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছি, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছি। গতকাল মঙ্গলবার তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবনে এক জনাকীর্ণ সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন শেখ হাসিনা। সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে বিএনপিকে কঠোর শিক্ষা দেওয়ার ঘোষণা দিয়ে তিনি বলেন, বিএনপি সন্ত্রাসী সংগঠন– কানাডার আদালত একাধিকবার সেই রায় দিয়েছে। তাই সন্ত্রাসীদের কীভাবে শিক্ষা দিতে হয়, সে ব্যবস্থাই নেওয়া উচিত। এবার আমরা সেটিই দেব। নির্বাচনকালীন সরকারের মন্ত্রিসভা সংক্ষিপ্ত হচ্ছে না জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইংল্যান্ডসহ ওয়েস্টমিনস্টার পদ্ধতিতে দেশগুলোতে যেভাবে হয়, বাংলাদেশেও সেটিই হবে। তবে নির্বাচন চলাকালে সরকারের মন্ত্রীরা শুধু রুটিন দায়িত্ব পালন করবেন। যারা প্রার্থী হবেন, তারা কোনো সরকারি সুযোগ-সুবিধাও নেবেন না। গ্লোবাল গেটওয়ে ফোরামে অংশ নিতে তাঁর সদ্যসমাপ্ত তিন দিনের বেলজিয়াম সফরের অভিজ্ঞতা তুলে ধরতে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন প্রধানমন্ত্রী। সেখানে বেলজিয়াম সফর বিষয়ে কথা বলার পাশাপাশি সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবও দেন তিনি। প্রশ্নোত্তর পর্বে আগামী জাতীয় নির্বাচন ও এ নিয়ে বিদেশিদের তৎপরতা, বিএনপি ও তার মিত্রদের আন্দোলনের নামে গত ২৮-২৯ অক্টোবর পুলিশ হত্যাসহ ব্যাপক সন্ত্রাস-নাশকতা এবং দেশের সমসাময়িক রাজনীতির বিভিন্ন প্রসঙ্গ উঠে আসে। সংবাদ সম্মেলন মঞ্চে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সংসদ উপনেতা মতিয়া চৌধুরী, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, কাজী জাফরউল্লাহ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান এবং বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। সভা সঞ্চালনা করেন প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম। বিভিন্ন গণমাধ্যমের সম্পাদক ও কর্মাধ্যক্ষ এবং জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকরা ছাড়াও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ, মন্ত্রিপরিষদ সদস্য এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন। ট্রাম্প-বাইডেন সংলাপ হলে আমিও করব বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস গতকাল প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে আগামী নির্বাচন নিয়ে সব পক্ষের মধ্যে শর্তহীন সংলাপে বসার আহ্বান জানিয়েছেন। এ-সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা পুলিশ হত্যা করেছে, সেই খুনিদের সঙ্গে কীসের সংলাপ? বরং তিনি (পিটার হাস) খুনিদের সঙ্গে বসে ডিনার খান, সংলাপ করুন। এ প্রসঙ্গে ২৮ অক্টোবর বিএনপির মহাসমাবেশ থেকে প্রধান বিচারপতির বাসভবন ও পুলিশ-সাংবাদিকদের ওপর হামলা, পুলিশ নিহত হওয়া, গাড়ি ভাঙচুরসহ ব্যাপক সন্ত্রাস-নৈরাজ্যের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, আমাদের তো মেরেছেই, পুলিশকে পিটিয়ে মারল। ওগুলো মানুষের জাত নাকি? ট্রাম্প সাহেবের সঙ্গে বাইডেন সংলাপ করছেন? যেদিন ট্রাম্পের সঙ্গে বাইডেন সংলাপ করবেন, সেদিন আমিও সংলাপ করব। বিএনপি আসলে নির্বাচন চায় না প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি-জামায়াত যে সন্ত্রাসী; বিএনপি যে সন্ত্রাসী দল– ২৮ অক্টোবর সেটি তারা আবারও প্রমাণ করল। কানাডার আদালতও যেটি বারবার বলেছে। ইসরায়েল গাজায় ফিলিস্তিনিদের যেভাবে হত্যা করছে, যেভাবে তারা হাসপাতালে হামলা করেছে, তাতে ইসরায়েলের সঙ্গে বিএনপি-জামায়াতের হামলার কোনো তফাৎ দেখছি না। তাদের সব কর্মকাণ্ড ভিডিও করা আছে। তিনি বলেন, বিএনপি মাঝখানে কিছুটা রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করলেও সরকার তাদের তেমন কোনো বাধা দেয়নি। তাদের ওপর সবসময় একটিই শর্ত ছিল– তারা কোনো রকম অগ্নিসংযোগ-ভাঙচুর করবে না। তারা যখন সুস্থভাবে রাজনৈতিক কর্মসূচি করছিল, তখন কিন্তু তারা মানুষের আস্থা-বিশ্বাস ধীরে ধীরে অর্জন করতে শুরু করেছিল। কিন্তু ২৮ অক্টোবর তারা যেসব ঘটনা ঘটাল, তারপর জনগণের ধিক্কার ছাড়া বিএনপির আর কিছুই জুটবে না। আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, বিএনপি আসলে নির্বাচন চায় না। এরা একটা অস্বাভাবিক পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চায়। যে হাতে আগুন দেবে, সেই হাত পুড়িয়ে দিতে হবে শঠের সঙ্গে শঠের মতো আচরণ করতে হবে– এমনটা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা (বিএনপি) এখানে সেখানে চোরাপথে গিয়ে একেকটা গাড়ি পোড়াচ্ছে। তাদের চিহ্নিত করা ও গ্রেপ্তার করে যথাযথ শাস্তি দেওয়া উচিত। যে হাত দিয়ে গাড়ি পোড়াবে, যার গাড়ি যখন পোড়াবে এবং যে ধরা পড়বে, তার হাতও ওই আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া উচিত। তাহলে তাদের শিক্ষা হবে; না হলে শিক্ষা হবে না। তিনি বলেন, দেশবাসীকে সজাগ ও সচেতন থাকার আহ্বান জানাই। যারা এসব অগ্নিসন্ত্রাস করছে, তাদের ধরিয়ে দিন। এর আগে তারা যখন শুরু করেছে, তখনও মানুষ ঠেকিয়েছে। এবারও মানুষই ঠেকাবে। সরকার যেভাবে আছে, নির্বাচনের সময়ও সেভাবে থাকবে সরকারের উন্নয়নকাজ বাধাগ্রস্ত হতে পারে; এ কারণে নির্বাচনের সময় সরকারের আকার ছোট করা হবে না বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, মন্ত্রিসভার আকার ছোট করলে দেখা যায়, অনেক মন্ত্রণালয়ের কাজ বাধাগ্রস্ত হয়। সে জন্যই বলেছি, মন্ত্রিসভা এখন যেভাবে আছে ওভাবেই চলমান থাকবে। নির্বাচনের সময় সরকার রুটিন কাজ করবে। নইলে সরকার তো চলবে না; দেশ তো স্থবির হয়ে যাবে। ফিলিস্তিন ইস্যুতে টুঁ শব্দ করছে না বিএনপি-জামায়াত ফিলিস্তিনে ইসরায়েলের বর্বরোচিত হামলা প্রসঙ্গে বিএনপি-জামায়াত এখন পর্যন্ত টুঁ শব্দ করেনি মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা (বিএনপি) এত কথা বলে, আবার ইসলামী ভাব ধরে– তারাও টুঁ শব্দ করছে না। কাদের স্বার্থে? বিএনপি এ ব্যাপারে কোনো কথা বলছে না কেন? এই যে শিশুদের হত্যা করছে; হাসপাতালে বোমা মারছে; কই, তারা তো টুঁ শব্দও করছে না! আমরা সবসময় ফিলিস্তিন ও তাদের জনগণের সঙ্গে আছি বলে উল্লেখ করেন তিনি। তিনি ভাড়া খাটতে এসেছিলেন বিএনপি কার্যালয়ে বাইডেনের কথিত উপদেষ্টা মিয়া আরেফির সংবাদ সম্মেলন প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, বোধ হয় নিজেদের কিছু ইমেজ বাড়ানোর জন্য এ ধরনের ভাড়াটে লোক নিয়ে আসছে। তাকে যখন ধরা হলো এবং জিজ্ঞাসাবাদ করা হলো, তখন আসল কথা বেরিয়ে এলো। ভাড়া খাটতে এসেছিলেন। তিনি মার্কিন নাগরিক; এটি মার্কিনিদের দেখতে হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, কথায় কথায় আমাদের ভিসা নীতির কথা বলে, নিষেধাজ্ঞা দেয়। এখন কেন নিষেধাজ্ঞা দেয় না? তারা নিশ্চুপ কেন ২৮ অক্টোবরের ঘটনা নিয়ে দেশি-বিদেশি মানবাধিকার সংগঠনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখন তারা চুপ কেন? সাংবাদিকদের অধিকার আদায়ে অনেক আন্তর্জাতিক সংগঠন রয়েছে। তাদের কাছ থেকে সাংবাদিকরা কোনো সহানুভূতি পেয়েছেন? বিবৃতি পেয়েছেন? অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালসহ মানবাধিকার সংস্থাগুলোও এখন চুপ কেন? তাদের মানবিক বোধগুলো গেল কোথায়? এদেশের সংগঠনগুলো যারা বুদ্ধি বেচে জীবিকা নির্বাহ করে, বুদ্ধির ভান্ডার খুলে ফেলে। আজকে সে ভান্ডার বন্ধ কেন? তারাও কি বুদ্ধিহীন হয়ে গেছে? বেলজিয়াম সফর প্রসঙ্গ এর আগে লিখিত বক্তব্যে বেলজিয়াম সফরের ফলাফল তুলে ধরে সরকারপ্রধান বলেন, গ্লোবাল গেটওয়ে ফোরামে অংশগ্রহণে বেলজিয়াম সফরে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে বাংলাদেশের অংশীদারিত্ব নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে। এ সফর অত্যন্ত ফলপ্রসূ হয়েছে। বাংলাদেশের নবায়নযোগ্য জ্বালানি, কানেকটিভিটি, শিক্ষা ও গবেষণা, ডিজিটাল অবকাঠামো এবং চিকিৎসাসামগ্রী উৎপাদনে বিনিয়োগের নতুন দ্বার উন্মোচিত হয়েছে।