বিগত বছরগুলোতে অক্টোবর থেকে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব কমতে শুরু করলেও এবার নভেম্বরেও ডেঙ্গুতে মৃত্যু ও আক্রান্তের সংখ্যা কমছে না। নভেম্বরের প্রথম ৪ দিনেই দেশে ডেঙ্গুতে মারা গেছেন ৪৫ জন। চলতি বছর ইতোমধ্যে ডেঙ্গুতে মারা গেছেন ১ হাজার ৪২৫ জন। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে সারা দেশে এ পর্যন্ত ২ লাখ ৮৩ হাজার ৫৯৩ রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। প্রকৃতিতে শীত এসে গেলেও প্রতিদিন উল্লেখযোগ্যসংখ্যক মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। ডেঙ্গুতে নিয়মিত মৃত্যুও হচ্ছে। গত কয়েকদিনে সংক্রমণ ও মৃত্যু কিছুটা কমলেও গত বছরের তুলনায় তা বেশি। এ পরিস্থিতি মানুষের উদ্বেগ বাড়িয়ে দিয়েছে। বস্তুত একটি দেশে বা অঞ্চলে একবার ডেঙ্গু দেখা দিলে তা নির্মূল করা যায় না, বারবার ফিরে আসে। তবে মশক নিধনে যথাযথ ব্যবস্থা নিলে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ করা যায়-এমন বহু নজির রয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ঠিক সময়ে সঠিক ব্যবস্থা নিলে এ বছর ডেঙ্গু এতটা ভয়াবহ আকার ধারণ করত না। দেশে ২০০০ সালে প্রথম বড় আকারে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব দেখা দিলেও তা ছিল মূলত ঢাকা শহরকেন্দ্রিক। ২০১৯ সালে বড় বড় শহরের পাশাপাশি কয়েকটি গ্রামেও ডেঙ্গু শনাক্ত হয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, যখন রাজধানীর বাইরে এর প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছিল, তখনই যথাযথ পদক্ষেপ নিলে ডেঙ্গু পরিস্থিতির এতটা অবনতি হতো না। দেশের ৬৪ জেলায়ই ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে মশক নিধনে সারা দেশে সমন্বিত পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি হয়ে পড়েছে। দুঃখজনক হলো, মশা নিয়ন্ত্রণে বড় বড় শহরে যে ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়, গ্রামীণ জনপদে তেমন পদক্ষেপ নেওয়া হয় না। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, একদিনে বা এক বছরে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে আনা যায় না। অব্যাহত প্রচেষ্টায় ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সুফল মেলে। শুধু রাসায়নিক কীটনাশক দিয়ে মশা নিয়ন্ত্রণ করা যাবে কিনা, তা বলা মুশকিল। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণেও এডিসের উৎপাত বেড়েছে। এ প্রজাতির মশা প্রতিকূল জলবায়ুর সঙ্গে টিকে থাকার সক্ষমতা অর্জন করতে শুরু করছে। জানা গেছে, এডিসের উৎপাত বছরজুড়েই থাকবে। কাজেই ডেঙ্গু থেকে সুরক্ষা পেতে বছরব্যাপী মশক নিধন ও অন্যান্য কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে হবে। যেভাবেই হোক, ডেঙ্গুর উৎস পুরোপুরি নির্মূল করতে হবে।