বিএনপিতে আছেন এবং বিএনপিতেই থাকবেন জানিয়ে দলটির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেছেন, বিএনপি যদি নির্বাচন করে দলের হয়ে নির্বাচনে অংশ নেব। তবে দলের সংস্কার প্রয়োজন বলেও জানান তিনি। বুধবার সকালে রাজধানীর বনানীর বাসভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা জানান। বিএনপি নেতা মেজর হাফিজের নেতৃত্বে নতুন দল হচ্ছে বলে সোমবার বক্তব্য দেন তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ। এ নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে নানা আলোচনা সৃষ্টি হয়। তবে হাফিজ উদ্দিন বলেন, ‘তথ্যমন্ত্রী যে বলেছেন আমি একটি নতুন রাজনৈতিক দল গড়তে যাচ্ছি এটা সঠিক নয়। আমি এখন কোনো ধরনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত নই। আমি বিএনপিতে আছি। এই দলের রাজনীতি থেকেই বিদায় নিতে চাই।’ তিনি তার শারীরিক অসুস্থতার কথা তুলে ধরে রাজনীতি থেকে অবসর নেওয়ার চিন্তার কথাও তুলে ধরেন। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ জানিয়ে হাফিজ উদ্দিন বলেন, বিএনপি ভোটে অংশ না নিলে ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও লক্ষ্মীপুরে যেভাবে নির্বাচন হয়েছে, একইভাবে জাতীয় নির্বাচনও হয়ে যাবে। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সমঝোতার উপায় বের করতে প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির প্রতি অনুরোধ জানান হাফিজ উদ্দিন। তিনি বলেন, দলীয় সরকারের অধীন সুষ্ঠু নির্বাচন হয় না। সমঝোতার ক্ষেত্রে জাতিসংঘের মধ্যস্থতার কথা বলেন হাফিজ উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোকে অনুরোধ করব, আপনারা মধ্যস্থতা করুন। জাতিসংঘ অনেক দেশে নির্বাচনে সহায়তা করে থাকে। জাতিসংঘের মধ্যস্থতার মাধ্যমে বিএনপি আগামী নির্বাচনে অংশ নিতে পারে। জাতিসংঘের তদারকে নির্বাচন চাই, তা না হলে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না। জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র এসব সরকারের সঙ্গে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সম্পর্ক জড়িত। এসব পরাশক্তির কাছে বাংলাদেশ সরকার কিছুই না। সুতরাং সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে, গণতন্ত্রের স্বার্থে আন্তর্জাতিক শক্তিগুলোর মধ্যস্থতা পেলে বিএনপির নির্বাচনে যাওয়া উচিত। বিএনপি বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় দল, সুষ্ঠু নির্বাচন হলে বিএনপিই ক্ষমতায় আসবে।’ খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘আমি শারীরিক কারণে শিগগিরই রাজনীতি থেকে অবসর নেব। খালেদা জিয়া আমার নেত্রী, যতদিন বেঁচে থাকব তিনি আমার নেত্রীই থাকবেন, সব সম্মান তিনি পাবেন। এখন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান তিনিও আমাদের নেতা, তাকে সম্মান করি। কিন্তু কিছু ভুল-ত্র“টি ধরিয়ে দেওয়া দরকার। চেয়ারপারসনের সামনে সত্যি কথা বলার মতো লোক আমার চোখে পড়েনি। সাইফুর রহমানকে দু-চারবার সত্যি কথা বলতে দেখেছি। এছাড়া সবাই ইয়েস স্যার, রাইট স্যার ছাড়া আর কোনো কিছুই জানেন না-এটা হলো বাস্তবতা।’ দলের কিছু ভুল ধরিয়ে দিয়ে সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, ‘জিয়াউর রহমানের আদর্শ থেকে দূরে সরে যাওয়ার ফলে বিএনপি ক্ষমতার বাইরে নিক্ষিপ্ত হয়েছে। অনেক ভুল আমরা করেছি। গত ৮ বছর দলের কোনো কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়নি। নেতা নির্বাচন করার সুযোগ নেই। প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে রাজনীতি করার সুযোগ নেই, বক্তব্য রাখারও সুযোগ নেই।’ বিএনপিতে নিজের অবস্থানের কথা তুলে ধরে মেজর (অব.) হাফিজ বলেন, ‘৩ বছর আগে ২০২০ সালে আমার বিরুদ্ধে দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগ করা হয়েছিল। আমি লিখিত জবাব দিয়েছিলাম। কিন্তু ৩ বছরে আমার বক্তব্য গ্রহণযোগ্য কিনা, তা জানানো হয়নি। হয়তো আমার বক্তব্য গ্রহণ করেছে, তাই বহিষ্কার করেনি। শোকজের ৩ বছর পার হলেও কী হয়েছে, জানি না।’ হাফিজ আরও বলেন, ‘৩১ বছর ধরে বিএনপির সঙ্গে আছি। অনেক ষড়যন্ত্র, ভুল বোঝাবুঝি মোকাবিলা করতে হচ্ছে। খালেদা জিয়া যতদিন সুস্থ ছিলেন, কোনো সমস্যা ছিল না।’ দলের সংস্কার প্রয়োজন উল্লেখ করে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘আমাদের নেতা তারেক রহমানকে আহ্বান জানাব, দলে সংস্কার করুন। এখন যেভাবে চলে সেভাবে কোনো রাজনৈতিক দল চলতে পারে না। রাজনৈতিক দলের কাউন্সিল কেন্দ্রীয় কমিটি করবে, কেন্দ্রীয় কমিটি জেলা কমিটি করবে। জেলা কমিটি উপজেলা কমিটি করবে, উপজেলা কমিটি ইউনিয়ন কমিটি করবে। ইউনিয়ন কমিটি ওয়ার্ড কমিটি করবে। সারা পৃথিবীতে এরকম সিস্টেম। আজ কেন দলে একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হলো, কেন কমিটি বাণিজ্য হচ্ছে, কেন ত্যাগী নেতারা নির্বাসিত। তারেক রহমানকে বলব, এই দলে সবাই আপনার অনুসারী, আপনি সবার শ্রদ্ধার পাত্র।’ নিজের আক্ষেপের কথাও জানান হাফিজ উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘গত ২৩ বছর ধরে আমি এই দলের ভাইস চেয়ারম্যান। স্থায়ী কমিটিতে যত সদস্য আছেন ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন ও ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া ছাড়া বাকি সবাই আমার নিচের পদে ছিলেন আমি যখন ১৯৯২ সালে ভাইস চেয়ারম্যান। একে একে তারা সবাই আমাকে অতিক্রম করে আমার উপরে চলে গিয়েছেন। এতে আমার কোনো অসুবিধা নেই। পদবির জন্য তো রাজনীতি করি না। কিন্তু খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে আমি নানা ধরনের অসুবিধার সম্মুখীন হচ্ছি।’