নিউমোনিয়ায় দেশে ঘণ্টায় তিন শিশুর মৃত্যু

প্রকাশিতঃ নভেম্বর ১২, ২০২৩ | ৮:৫৬ পূর্বাহ্ন
অনলাইন নিউজ ডেক্স

বিশ্বব্যাপী পাঁচ বছরের কম বয়সি শিশুর মৃত্যুর প্রধান সংক্রামক কারণ নিউমোনিয়া। প্রতি বছর প্রায় ৭ লাখ শিশু নিউমোনিয়ায় মারা যায়। বাংলাদেশে এ অবস্থা আরও খারাপ। প্রতি বছর ২৪ হাজার শিশু নিউমোনিয়ায় মারা যায়। প্রতি ঘণ্টায় এ সংখাটি অনুমানিক ২ থেকে ৩ জন। এমন প্রেক্ষাপটে নিউমোনিয়া সম্পর্কে জনসচেতনতা বাড়াতে আজ রোববার পালিত হচ্ছে বিশ্ব নিউমোনিয়া দিবস-২০২৩। দিবসটির প্রতিপাদ্য ‘নিউমোনিয়া প্রতিরোধ করুন, প্রতিটি প্রশ্বাসই গুরুত্বপূর্ণ’। দিবসটি উপলক্ষ্যে সব হাসপাতালের রেসপিরেটরি বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় বক্ষব্যাধি হাসপাতাল ও লাং ফাউন্ডেশন সচেতনতামূলক বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়েছে। এদিন সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে চিকিৎসক, নার্স ও রোগীদের নিয়ে র‌্যালি, আলোচনা সভা ও সচেতনতামূলক লিফলেট বিতরণ করা হবে। চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, দুই দশক ধরে বাংলাদেশের মতো মধ্যম ও স্বল্প আয়ের দেশে শিশু মৃত্যুর প্রথম কারণ এটি। আর বায়ুদূষণের কারণে এ রোগে আক্রান্তের হার শহরে বসবাসকারী ও গরিবদের তুলনামূলক বেশি। তবে শহর ও গ্রাম উভয় জায়গায় বেশি মারা যাচ্ছে অক্সিজেনের অভাবে। বিশেষজ্ঞরা জানান, ফুসফুসের ভয়ানক রোগ নিউমোনিয়া। শিশুদের মধ্যে রোগটির প্রকোপ সবচেয়ে বেশি। দেশে শীতকালে এ রোগের প্রকোপ বাড়ে। তবে শিশুর জন্মের পর মায়ের বুকের দুধ খাওয়ালে নিউমোনিয়ার আশঙ্কা শতকরা ১৫ ভাগ কমে যায়। আর ঘরের বাতাসের গুণগতমান উন্নত করে নিউমোনিয়ায় মৃত্যুর ঝুঁকি অর্ধেক কমানো সম্ভব। বারডেম হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. আবিদ হোসেন মোল্লা জানান, নিউমোনিয়ার শুরুতে কাশি হয় যা সাধারণত ২-৪ সপ্তাহের মধ্যে ভালো হয়ে যায়। তবে কিছু ক্ষেত্রে এ থেকে শ্বাসকষ্ট এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। এটি মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ-অল্পবয়সি, প্রবীণ ও যাদের হৃৎপিণ্ড বা ফুসফুসের সমস্যা রয়েছে তাদের গুরুতর নিউমোনিয়া হওয়ার ঝুঁকি বেশি। বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটের নবজাতক ও শিশুকিশোর রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. ফারহানা আহমেদ স্মরণী বলেন, শীত বাড়ার সঙ্গে নিউমোনিয়ার প্রকোপও বাড়ে। এখানে প্রতিদিন যত রোগী ভর্তি হচ্ছে তার প্রায় পঞ্চাশ শতাংশই নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত। তবে ঢাকার বাইরে থেকে রোগী বেশি আসছে। আইসিডিডিআর-বির সহযোগী বিজ্ঞানী ডা. আহমেদ এহসানুর রহমান বলেন, দেশে নিউমোনিয়ায় মৃত্যুর হার না কমার প্রধান কারণ রোগী বাড়ছে। অপরিকল্পিত নগরায়নের ফলে অতি মাত্রায় বায়ুদূষণে শিশুরা বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। এছাড়া বস্তি এলাকায় জন্ম নেওয়া অনেক শিশুর শরীরে অপুষ্টির মাত্রা খুব বেশি। অনেক শিশু আছে যারা অন্য জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত হচ্ছে। বাংলাদশে জাতীয় টিকাদান কর্মসূচির আওতায় নিউমোনিয়া প্রতিরোধের ক্ষেত্রে দুটি টিকা আছে। তা হলো নিউমোকোক্কাল ভ্যাকসিন (পিসিভি ও পিপিএসভি)। এর বাইরে পাশাপাশি যেসব শিশুর অ্যালার্জির সমস্যা আছে তাদের প্রতি বছরই ফ্লু ভ্যাকসিন দেওয়া নিউমোনিয়া প্রতিরোধ করার ভালো উপায়। একই সঙ্গে শিশুর রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য যথাযথ পুষ্টি নিশ্চিত করা, বুকের দুধ পান করানো এবং প্রচুর শক্তিসমৃদ্ধ বাড়তি খাবার দেওয়া প্রয়োজন। একই সঙ্গে শিশুর জ্বর সর্দি হলে কিংবা ঠাণ্ডা লাগলে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ ব্যবহার করা যাবে না।