উত্তর সীমান্তে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার মাঝে ইরান-সমর্থিত লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহকে সতর্ক করে দিয়ে ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, লেবাননের এই গোষ্ঠী আগুন নিয়ে খেলছে। এ জন্য হিজবুল্লাহকে চড়া মাশুল দিতে হবে বলে হুশিয়ার করে দিয়েছেন তিনি। সোমবার ইসরাইলের সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইসরাইলের এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে। খবর টাইমস অব ইসরাইল, আলজাজিরার। এতে বলা হয়েছে, এমন কিছু লোক (হিজবুল্লাহ) আছেন যারা মনে করেন যে, তারা আমাদের সেনা এবং বেসামরিক নাগরিকদের বিরুদ্ধে আক্রমণ বাড়াতে পারে। এটা আগুন নিয়ে খেলা। হিজবুল্লাহর নাম উল্লেখ না করে ইসরাইলের এই প্রধানমন্ত্রী বলেন, আগুনকে আরও শক্তিশালী আগুন দিয়ে মোকাবিলা করা হবে। তারা অবশ্যই আমাদের পরীক্ষা নেবে না। কারণ আমরা আমাদের ক্ষমতার মাত্র সামান্য অংশ প্রদর্শন করেছি। যারা আমাদের ক্ষতি করে, আমরা তাদের ক্ষতি করব। সোমবার উত্তরাঞ্চলে ইসরাইলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) বেদুঈন ব্যাটালিয়ন নামে পরিচিত ইউনিট-৫৮৫-এর সেনাদের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় এসব কথা বলেছেন তিনি। এ সময় হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে বেদুঈন ব্যাটালিয়নের সদস্যদের প্রশংসা করেন তিনি। সেনাদের উদ্দেশ্যে নেতানিয়াহু বলেন, আমি আপনাদের শ্রদ্ধা জানাই। আমাদের অংশীদারত্ব হল সেই বর্বরদের বিরুদ্ধে আমাদের সবার ভবিষ্যৎ। আমরা জিততে যাচ্ছি। এই যুদ্ধে কোনো বিরতি নেই। এটা কোনো অভিযানও নয়। এটা যুদ্ধের অন্য পর্বও নয়। আমরা এখানে সম্পূর্ণ জয়ের জন্য এসেছি। ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা গাজা উপত্যকার উত্তর এবং দক্ষিণে নিরাপত্তা ব্যবস্থা ঢেলে সাজাবো... হামাসকে নির্মূল করা হবে। এদিকে, হামাসের সঙ্গে চলমান যুদ্ধের মাঝেই লেবানন-ইসরাইলের ‘পুরোমাত্রার যুদ্ধ’ শুরু হতে পারে বলে সতর্ক করে দিয়েছেন ইসরাইলি কর্মকর্তারা। সোমবার মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়াল স্ট্রিট জার্নালকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এই যুদ্ধ শুরুর ব্যাপারে নিজের শঙ্কার কথা জানিয়েছেন ইসরাইলি এক কর্মকর্তা। ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ইসরাইলি কর্মকর্তা বলেছেন, গত কয়েক দিনে ইসরাইল এবং লেবাননের ইরান-সমর্থিত সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর মধ্যে ‘পুরোমাত্রার যুদ্ধ’ শুরুর সম্ভাবনা বৃদ্ধি পেয়েছে। গাজা উপত্যকার বৃহত্তম দুই হাসপাতালে চলমান সংঘর্ষের মাঝে এই যুদ্ধের ব্যাপারে হুশিয়ারি দিয়েছেন তিনি। মার্কিন এই সংবাদমাধ্যম বলছে, ইসরাইলি কর্মকর্তারা হুঁশিয়ার করে বলেছেন, লেবাননের সাথে যদি পূর্ণাঙ্গ সংঘাত শুরু হয় তাহলে তারা হিজবুল্লাহর সব শক্ত ঘাঁটি ধ্বংস করে দেবে। অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী হামাসের সঙ্গে ইসরাইলের চলমান যুদ্ধ ৩৮ দিনে গড়িয়েছে। উপত্যকায় ইসরাইলের নির্বিচার বোমা হামলায় ১১ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনির প্রাণহানি ঘটেছে। ইসরাইলি টানা হামলায় গাজায় নজিরবিহীন মানবিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। উপত্যকায় জ্বালানি, পানি ও খাবারের তীব্র সংকটে ভুগছেন লাখ লাখ মানুষ। এর মাঝেই উপত্যকায় ইসরায়েলি বাহিনীর স্থল হামলায় গাজার উত্তরে লাখ লাখ মানুষ নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে ছুটছেন। ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী বাসিন্দাদের গাজার উত্তরাঞ্চল থেকে দক্ষিণাঞ্চলে যাওয়ার জন্য দৈনিক চার ঘণ্টার বিরতি দিলেও তারা আক্রান্ত হচ্ছেন।