রেল যোগাযোগে নতুন দিগন্ত

প্রকাশিতঃ ডিসেম্বর ২, ২০২৩ | ৬:৩০ পূর্বাহ্ন
অনলাইন নিউজ ডেক্স

বহুল প্রতীক্ষিত ঢাকা-কক্সবাজার রুটে ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে। পূর্বনির্ধারিত শিডিউল অনুযায়ী শুক্রবার দুপুর ১২টা ৩০ মিনিটে কক্সবাজার আইকনিক রেলওয়ে স্টেশন থেকে ঢাকার উদ্দেশে ‘কক্সবাজার এক্সপ্রেস’ যাত্রা শুরু করে। এর মধ্য দিয়ে দেশের যোগাযোগব্যবস্থায় নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়েছে। কক্সবাজার আইকনিক রেলস্টেশনের স্টেশনমাস্টার গোলাম রব্বানী জানান, প্রথম ট্রেন দুপুর ১২টা ৩০ মিনিটে কক্সবাজার আইকনিক রেলস্টেশন থেকে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যায়। এতে যাত্রী ছিল এক হাজার ২০ জন। এর আগে সকাল থেকে যাত্রীরা আইকনিক রেলস্টেশনে আসতে শুরু করেন। কক্সবাজার-চট্টগ্রাম-ঢাকা রুটে ট্রেন যাত্রায় অংশ নিয়ে ইতিহাসের সাক্ষী হতে আগে থেকে প্রথম দিনের টিকিট বুকিং করেছিলেন যাত্রীরা। এই যাত্রায় এক হাজার ২০ জন যাত্রীদের মধ্যে বেশির ভাগই ছিলেন পর্যটক। কক্সবাজার থেকে ট্রেনে নিজ গন্তব্যে ফিরতে পেরে খুশি তারা। আবার কক্সবাজারবাসীরও উচ্ছ্বাসের কমতি নেই। প্রতিটি যাত্রীকে চকলেট এবং ফুল দিয়ে বরণ করে নেয় রেল কর্তৃপক্ষ। স্টেশনমাস্টার গোলাম রব্বানী বলেন, ‘ট্রেনটি রাত ৯টা ১০ মিনিটে ঢাকায় পৌঁছে। ফিরতি ট্রেন কক্সবাজারের উদ্দেশে ঢাকার কমলাপুর স্টেশন ছাড়ে রাত সাড়ে ১০টায়।’ কক্সবাজার পৌরসভার সাবেক মেয়র সরওয়ার কামাল প্রথম টিকিট কেটেছিলেন কক্সবাজার রেলস্টেশন থেকে। তিনি যাত্রী হতে পেরে আনন্দিত। সাবেক এ জনপ্রতিনিধি বলেন, ‘এই ঐতিহাসিক মুহূর্তটি কিভাবে প্রকাশ করা যায় আমার জানা নেই। খুবই অসাধারণ অনুভ‚তি।’ কক্সবাজার নাগরিক ফোরামের সভাপতি আ ন ম হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘রেলপথ চালুর ঘটনা ঐতিহাসিক। শত বছর ধরে আমরা রেলপথ চালুর স্বপ্ন দেখছিলাম। এখন আর তা স্বপ্ন নয়। এ জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কক্সবাজারবাসী কৃতজ্ঞ।’ ট্যুরিস্ট পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি আপেল মাহমুদ জানান, রেলযাত্রীদের নিরাপত্তায় কাজ করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। বিশেষ করে পর্যটকরা যাতে হয়রানির শিকার না হয় তার জন্য রেলস্টেশনে থাকছে টুরিস্ট পুলিশ। ৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত এই রুটে রেলের আগাম টিকিট বিক্রি হয়ে গেছে। প্রতিদিন একটি ট্রেন সকালে কক্সবাজার থেকে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যাবে এবং রাতে ঢাকা থেকে একই ট্রেন কক্সবাজারের উদ্দেশে ছেড়ে যাবে। ঢাকা-কক্সবাজার রুটে ট্রেন চলাচলে গতিসীমা ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ১২০ কিলোমিটার নির্ধারণ করা হয়েছে। কয়েক দফা পরীক্ষামূলক ট্রেন চলাচলের সফল কার্যক্রম শেষে গত ১১ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কক্সবাজার রেলসংযোগ উদ্বোধনের সময় ডিসেম্বর থেকে দুটি ট্রেন চালুর নির্দেশ দেন। ঢাকা থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত শোভন চেয়ারের ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ৬৯৫ টাকা। এসি চেয়ারের ভাড়া এক হাজার ৩২৫ টাকা, এসি সিটের ভাড়া এক হাজার ৫৯০ টাকা এবং এসি বার্থের ভাড়া (ঘুমিয়ে যাওয়ার আসন) দুই হাজার ৩৮০ টাকা। অপর দিকে চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত শোভন চেয়ারের ভাড়া ২০৫ টাকা, স্নিগ্ধা শ্রেণির ৩৮৬ টাকা, এসি সিটের ৪৬৬ এবং এসি বার্থের ভাড়া ৬৯৬ টাকা। শুক্রবার দুপুর পৌনে ১টায় কক্সবাজার থেকে ট্রেনটির উদ্বোধন করেন রেলপথ সচিব ড. হুমায়ুন কবীর। এ সময় কক্সবাজার রেলওয়ে স্টেশনে কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরানসহ রেলের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। এদিন রাত সাড়ে ১০টায় ঢাকা থেকে ট্রেনটির উদ্বোধন করেন রেলওয়ে মহাপরিচালক প্রকৌশলী মো. কামরুল আহসান। প্রথম যাত্রায় অভাবনীয় সাড়া পাওয়ায় আনন্দিত রেল কর্তৃপক্ষ। রেলওয়ে অপারেশন ও পরিবহণ দপ্তর বলছে, সাধারণ যাত্রীদের যে সাড়া মিলছে-তাতে এ রুটে কমপক্ষে ১০ থেকে ১২ জোড়া ট্রেন চালানো প্রয়োজন। একই সঙ্গে সমানতালে পণ্যবাহী ট্রেনের চাহিদা রয়েছে ব্যাপক। যাত্রী এবং পণ্যবাহী ট্রেন চালালে যাত্রীদের প্রত্যাশা পূরণ করা সম্ভব হবে। রেল কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, চলমান ঢাকা-চট্টগ্রাম মহানগর প্রভাতী এক্সপ্রেস শিগগিরই কক্সবাজার পর্যন্ত চালানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে কয়েক মাসের মধ্যে ঢাকা-কক্সবাজার, সিলেট-কক্সবাজার এবং চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে অন্তত ৬ জোড়া ট্রেন চালানো হবে। কর্তৃপক্ষ আরও জানায়, আইকনিক রেলস্টেশনে থাকছে তারকা মানের হোটেল, শপিং মল, রেস্তোরাঁ, শিশুযত্ন কেন্দ্র, লাগেজ রাখার লকারসহ অত্যাধুনিক সুবিধা। দৈনিক ৪৬ হাজার মানুষের ধারণক্ষমতার শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত আইকনিক রেলস্টেশনে আরও আছে ডাকঘর, কনভেনশন সেন্টার, তথ্যকেন্দ্র, এটিএম বুথ ও প্রার্থনার স্থান। ৪৮০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে ঢাকা-কক্সবাজার রেলপথে ট্রেনের সংখ্যা আরও বাড়বে জানিয়ে রেলপথ সচিব ড. হুমায়ুন কবীর বলেন, ‘এ রুটে আরও অনেক ট্রেন চলবে-চাহিদাও রয়েছে। ইতোমধ্যে আগামী ১০ দিনের টিকিট অগ্রিম কাটা হয়ে গেছে। সংকট নিরসনে ট্রেনের সংখ্যা বাড়ানোর পাশাপাশি যাত্রীদের নিরাপত্তা ও সেবার মান বাড়ানোর চেষ্টা চলছে।’ পূর্বাঞ্চল রেলওয়ে মহা-ব্যবস্থাপক (জিএম) মো. নাজমুল ইসলাম বলেন, কক্সবাজার-ঢাকা, ঢাকা-কক্সবাজার রুটে বাণিজ্যিকভাবে প্রথম ট্রেন যাত্রায় আমরা সবাই আনন্দিত। খুব কাছ থেকে দেখেছি, সাধারণ যাত্রীদের মধ্যে কী যে আনন্দ-উল­াস, বলে বোঝানো যাবে না। ঢাকা রেলওয়ে ব্যবস্থাপক (ডিআরএম) সফিকুর রহমান জানান, শুক্রবার রাত সাড়ে ১০টায় কক্সবাজার এক্সপ্রেস ট্রেনটি কমলাপুর থেকে কক্সবাজারের উদ্দেশে ছেড়ে গেছে। আমরা যাত্রীদের সর্বোচ্চ সেবা ও নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নিয়েছি। আমরা জানি, এ রুটে যাত্রীদের চাহিদা ব্যাপক। ঢাকা থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ১০ থেকে ১২ জোড়া যাত্রীবাহী ট্রেন চালালেও যাত্রীদের আরও চাহিদা থাকবে।’ ঢাকা রেলওয়ে বিভাগীয় বাণিজ্যিক কর্মকর্তা মো. শাহআলম কিরণ শিশির জানান, কমলাপুর স্টেশন থেকে ছেড়ে যাওয়া ট্রেনটিতে ১৮টি বগি ছিল। মোট ১০১০ জন যাত্রী নিয়ে ট্রেনটি ছুটেছে। প্রত্যেক যাত্রীকে ফুল এবং শিশুদের চকলেট দিয়ে আমরা বরণ করেছি, শুভেচ্ছা জানিয়েছি। যাত্রীদের চোখেমুখে খুশি এবং আনন্দ দেখে খুবই ভালো লেগেছে। কক্সবাজার এক্সপ্রেসে কাটা পড়ে নিহত ১ : কুমিল­া ব্যুরো জানায়, প্রথমবার কক্সবাজার থেকে ঢাকাগামী কক্সবাজার এক্সপ্রেস ট্রেনে কাটা পড়ে একজন নিহত হয়েছেন। সন্ধ্যা ৬টার দিকে লাকসাম রেলওয়ে জংশনের আনুমানিক ১৫০ গজ দূরে রেলওয়ে স্টেশন আউটারে এ দুর্ঘটনা ঘটে। লাকসাম রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুরাদুল­াহ বাহার এ তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, ওই ব্যক্তির শরীর ছিন্ন বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। অনেক অংশ খুঁজেও পাওয়া যাচ্ছে না। তার পরিচয় এখনো শনাক্ত করা যায়নি। তবে শরীরের কিছু অংশ উদ্ধার করা হয়েছে। ধারণা করছি, তার বয়স ৩০ হবে।