গরিবের খাবারের দাম এখনও কমেনি। বাজারে নতুন আলুর সরবরাহ বাড়লেও প্রতি কেজি ৫৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ডাল কিনতে ক্রেতার ব্যয় হচ্ছে সর্বোচ্চ ১৪০ টাকা। সঙ্গে বাজারে নতুন মুড়িকাটা পেঁয়াজ উঠলেও ক্রেতার সেই ১৩৫-১৪০ টাকা দরেই কিনতে হচ্ছে। বেড়েছে মোটা চালের দামও। ফলে গরিবের খাবারের তালিকায় এখন-ডাল-ভাত, আলুভর্তা জোগান দেওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। বাজারসংশ্লিষ্টরা বলছেন, তদারকির মাধ্যমে পণ্যমূল্য না কমালে দিন আনে দিন খায় এমন মানুষের কষ্ট আরও বাড়বে। এদিকে উচ্চমূলে বিক্রি হওয়ায় নিম্নআয়ের অনেকে এখনো মাছ-মাংস কিনতে পারছেন না। ডিমের দাম কিছুটা কমলেও সপ্তাহের ব্যবধানে ফের বাড়তে শুরু করেছে। সবজির দাম এখনো চড়া। ফলে পণ্যের দাম বেশি হওয়ায় নিম্নআয়ের মানুষের চাহিদায় টান পড়েছে। পণ্য কেনার সময় অনেকেই পরিমাণে কম কিনতে বাধ্য হচ্ছেন। শুক্রবার রাজধানীর কাওরানবাজার, মালিবাগবাজার, নয়াবাজার ও শান্তিনগরসহ বেশ কয়েকটি বাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। রাজধানীর কাওরানবাজার, মালিবাগ কাঁচাবাজার, নয়াবাজার ও জিনজিরাবাজার ঘুরে খুচরা বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে-প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ৫৫ টাকা। যা ১ মাস আগেও ৫০ টাকা ছিল। প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১৩৫-১৪০ টাকা। যা ১ মাস আগেও ১৩০-১৩৫ টাকা ছিল। প্রতি কেজি ভালোমানের মসুর ডাল বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকা। যা আগে ১৩৫ টাকা ছিল। প্রতি কেজি চিনি বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকা। যা ১ মাস আগে ১৪০ টাকা ছিল। প্রতি কেজি মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে ৫৪ টাকা। যা ১ মাস আগে ৫২ টাকা ছিল। এছাড়া প্রতি হালি (৪ পিস) ফার্মের ডিম বিক্রি হচ্ছে ৪০-৪৪ টাকা। যা গত সপ্তাহে ৩৮-৪২ টাকা ছিল। রাজধানীর কাওরানবাজারে কথা হয় দিনমজুর শাহ আলীর সঙ্গে। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, আমি সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত মালামাল বহন করে ৪০০-৫০০ টাকা আয় করেছি। এই টাকা নিয়ে বাজারে এসেছি। কিন্তু বাজারে সবকিছুর দাম অনেক বেশি। তাই কী দিয়ে কী কিনব তা ভাবছি। আগের চেয়ে চাল, ডাল, আলু, পেঁয়াজসহ সবকিছুর দাম এখন বেশি। তাই আমাদের মতো গরিবের ডাল-ভাত ও আলুভর্তা জোগাতেও হিমশিম খেতে হচ্ছে। খুচরা বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে আরও জানা যায়, শুক্রবার প্রতি কেজি প্যাকেটজাত আটা বিক্রি হচ্ছে ৬২ টাকা। যা আগে ৫৫ টাকা ছিল। খোলা আটা ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যা ১ মাস আগে ৪৫ টাকা ছিল। প্রতি কেজি খোলা ময়দা ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যা ১ মাস আগে ৬০ টাকা ছিল। প্যাকেটজাত ময়দার কেজি ৭৫ টাকা, যা আগে ৬৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। তাছাড়া খুচরা বাজারে প্রতি লিটার ভোজ্যতেলের মধ্যে খোলা সয়াবিন বিক্রি হচ্ছে ১৫৫ টাকা, যা আগে ১৫০ টাকা ছিল। প্রতি লিটার বোতল সয়াবিন বিক্রি হচ্ছে ১৭০ টাকা, যা ১ মাস আগে ১৬৮ টাকা ছিল। প্রতি লিটার খোলা পাম অয়েল বিক্রি হচ্ছে ১৩০ টাকা, যা আগে ১২৫ টাকা ছিল। পাশাপাশি প্রতি লিটার পাম অয়েল সুপার বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকা, যা আগে ১৩৫ টাকা ছিল। জানতে চাইলে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, সার্বিক মূল্যস্ফীতির কারণে এমনিতেই নিম্নআয়ের মানুষ কষ্টের মধ্যে আছে। এর মধ্যে সিন্ডিকেটের কারসাজিতে একাধিক পণ্যের দাম হু হু করে বাড়ছে। এতে উচ্চশ্রেণির মানুষের ভোগান্তি না হলেও মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো কষ্টে দিন কাটাচ্ছে। সবচেয়ে বেশি কষ্টে আছেন নিম্নআয়ের মানুষ। যারা তাদের আয়ের সঙ্গে ব্যয় সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন। তাই বাজারে তদারকির মাধ্যমে পণ্যমূল্য না কমালে, দিন আনে দিন খায় এমন মানুষের কষ্ট আরও বাড়বে। রাজধানীর খুচরা বাজারে প্রতি কেজি টমেটো বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকা। প্রতি কেজি শিম কিনতে ক্রেতার ৫০-৬০ টাকা খরচ করতে হচ্ছে। পাশাপাশি প্রতি কেজি বরবটি ৬০ টাকা, বেগুন ৫০-৮০ টাকা, গাজর ১২০ টাকা, প্রতি পিস ফুলকপি বিক্রি হচ্ছে ৩০-৪০ টাকা, বাঁধাকপি ৪০ টাকা, পেঁপের কেজি ৩০-৪০ টাকা, ঢেঁড়স বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৫০ টাকা। এছাড়া প্রতি কেজি কাঁচামরিচ ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। খুচরা বাজারে প্রতি কেজি মুলা বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকা। প্রতি কেজি দেশি আদা বিক্রি হচ্ছে ৩০০ টাকা। দেশি হলুদ বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ টাকা কেজি। শুকনা মরিচ প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০০-৫০০ টাকা। এছাড়া দেশি ও আমদানি করা রসুন বিক্রি হচ্ছে ২০০-২৪০ টাকা। এছাড়া বাজারে ব্রয়লার মুরগি কেজিপ্রতি ১৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কক মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩০০-৩২০ টাকা, দেশি মুরগি ৬৫০ টাকা। প্রতি কেজি গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৫৯৫-৭৫০ টাকা। এছাড়া প্রতি কেজি রুই মাছ ৩৫০-৪৫০ টাকায়, মৃগেল ২৫০-৩৫০, পাঙাশ ১৯০-২২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজি চিংড়ি ৭০০-১০০০ টাকায়, বোয়াল মাছ প্রতি কেজি ৮০০-১২০০ টাকা, কাতল ৩০০-৪০০, পাবদা ৪০০-৫০০ টাকায় এবং তেলাপিয়া প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ২২০ টাকা। মালিবাগ কাঁচাবাজারে কথা হয় ভ্যানচালক জাকারিয়ার সঙ্গে। তিনি বলেন, বাজারে সব ধরনের পণ্যের দাম বেশি। যে টাকা আয় করি তা দিয়ে মাংস কবে কিনেছি তা মনে নেই। মাছের দামও বাড়তি। পরিস্থিতি এমন আলুভর্তা দিয়ে ভাত খাব সেটাও হচ্ছে না। কেজি ৫০-৫৫ টাকায় কিনতে হচ্ছে। ডালের দামও বাড়তি। সব মিলে আমাদের মতো মানুষের অনেক কষ্টে দিন পার করতে হচ্ছে। তিনি বলেন, মা-বাবা, স্ত্রী এবং দুই মেয়ে নিয়ে আমার ছয়জনের সংসার। সবার খাবারের জোগান আমাকেই করতে হয়। কিন্তু সীমিত আয় দিয়ে এখন সংসার চালাতে খুবই কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু আমাদের এই কষ্ট দূর করার কেউ নেই।