মুন্সিগঞ্জে বীজ আলু পঁচে যাওয়ার আশঙ্কায় আলু জমিতে রোপন করা বীজ তুলে ফেলেছেন কৃষক। এই সমস্ত বীজ কাদা ও পানির নিচ হতে তুলে তা আবার বাড়িতে সংরক্ষণ করার চেষ্টা চলছে।গত কাল শুক্রবার (৮ ডিসেম্বর )দুপুরে মুন্সিগঞ্জের সদর উপজেলা ও টঙ্গীবাড়ী উপজেলা ঘুরে দেখা যায় বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে আছে কৃষকের বিস্তীর্ণ আলু জমি। অনেক জমিতে এখনো পানি থৈ থৈ করছে । কৃষক সেচ যন্ত্র যন্ত্র (সোলার), থালা-বাসন দিয়ে তাদের তলিয়ে যাওয়া আলু জমিগুলো সেচার চেষ্টা করছেন। মুন্সিগঞ্জে বৃহস্পতিবার দিনব্যাপী বৃষ্টি হলেও শুক্রবার মেঘাচ্ছন্ন আকাশ বিরাজ করছে।মুন্সিগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, জেলায় এ বছর মোট ৩৪ হাজার ৩৪৬ হেক্টর জমিতে আলু আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ বছর এখন পর্যন্ত ১৬ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে আলু আবাদ করে ফেলেছে কৃষক। বাকি জমি আবাদ করার জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে।মুন্সিগঞ্জে এ পর্যন্ত ১৬ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে আলু আবাদ করা হয়ে গেছে। কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে এই সমস্ত জমিতে রোপন করা হয়েছে ২০০ কোটি টাকার উপরে আলু বীজ যা এখন পানিতে তলিয়া আছে।কৃষকের সাথে কথা বলে জানা গেছে প্রতি হেক্টরে ২ হাজার ৬শ ৫০ কেজি বা ৬৬মণের বেশি বীজ আলু লেগেছে। সে হিসাবে ১৬ হাজার ২শ হেক্টর জমিতে প্রায় ১০ লাখ ৭০ হাজার মণ বীজ আলু রোপন করা হয়েছে। কৃষকদের হিসাবে হেক্টর প্রতি বীজ আলুতে খরচ ১ লাখ ৪৫হাজার ৭৫০ টাকা। অর্থাৎ বীজ আলুতে খরচ ২শ ৩৬ কোটিরও বেশি খরচ হয়েছে যা এখন পানির নিচে। বীজ ছাড়াও প্রতি হেক্টরে জমিতে এবার আলু আবাদে সার লেগেছে ১৬শত কেজি। ২২ টাকা কেজি সারের হেক্টরে খরচ ৩৫ হাজার ২শ টাকা। জমির জমা গড়ে প্রতি হেক্টর ৭০ হাজার টাকা। শ্রমিক মজুরী হেক্টরে ৩৭ হাজার টাকা আরঅন্যান্য খরচ ১৫ হাজার টাকা। অর্থাৎ হেক্টর প্রতি জমি জমা নিয়ে চাষ করতে চাষীদের খরচ হয়েছে ৩ লাখ ২ হাজার ৯৫০ টাকা প্রায়। সে হিসাবে একদিনে বৃষ্টিতে ১৬ হাজার ২শ হেক্টর জমিতে প্রায় ৫শ কোটি টাকা খরচ হয়েছে।গত কাল শুক্রবার দুপুরে জমির আইলে দাঁড়িয়ে তলিয়ে যাওয়া জমি দেখছিলেন মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলার বজ্রযোগিনী গ্রামের কৃষক আবু মিয়া। তিনি বলেন, এ বছর তিন কানি (৪২০ শতাংশ ) জমিতে আলু আবাদ করেছিলাম। এখন সব জমি পানির নিচে ।সব বীজ পচে নষ্ট হয়ে যাবে। সরকার যদি আমাদের একটু সহায়তা করত আমাদের যদি বীজ জোগাড় করে দিত আমরা টাকা দিয়ে কিনে নিতাম তারপরেও আমরা জমিতে আলু আবার আলু লাগাইতে পারতাম। তিনি আরো বলেন, শুনতে ছিলাম কয়েকদিন যাবত ঘূর্ণিঝড় হইবো । কিন্তু আমাদের এলাকার সবাই আলু লাগাইতাছি দেখাদেখি আমিও লাগাই ফেললাম । ভাবছিলাম কয়দিন আগে বৃষ্টি হয়েছে এখন মনে হয় আর তেমন বৃষ্টি হইবো না কিন্তু বৃষ্টিতে আমার সব শেষ হয়ে গেল।টঙ্গীবাড়ি উপজেলার বলই এলাকায় তলিয়ে যাওয়া জমি হতে বীজ আলু তুলে ফেলেছেন আলমগীর শেখ। আলু লাগাই ছিলাম সব তলায় গেছে। দুইটা বাক্স ( হল্যান্ড হতে আমদানিকৃত বীজ) লাগাইছিলাম তাও তলায় গেল। এখন খুব কষ্ট করে কাদা ও পানির হতে আলু উঠায় ফেলতেছে যদি আবার লাগানো যায় । টাকা পয়সা নাই নতুন কইরা কিনমু। তাই কাঁদার মধ্যে হতে আলু তুলে রাখতেছি যদি না পচে যায় তবে আবার লাগাবো।মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলার কৃষক সবুজ মিয়া সকালে তার জমি হতে থালা দিয়ে পাশের ডোবায় পানি সেচে ফেলছিলেন। তিনি বলেন, নালা কেটে দিয়েছিলাম এখন জমির পাশের ডোবাও পানিতে ভরে গেছে। পানি যাওয়ার জায়গা নাই । তাই বাধ দিয়ে সেচে ডোবার মধ্যে পানি ফেলতেছি ।তিনি বলেন, দুদিন আগে হল্যান্ড হতে আমদানিকৃত ৫০ কেজি আলুর বাক্স ৯৩০০-৯৪০০ টাকা ছিল এখন সে বীজ ১৫ হাজার টাকা । তাও পাওয়া যাচ্ছেনা। কোথায় বীজ পাব কেমনে আবার আলূ লাগাবো তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি।এ ব্যাপারে মুন্সিগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ডা. মো. আব্দুল আজিজ বলেন, মুন্সিগঞ্জ জেলায় মোট ১৬ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে আরো রোপন করা হলেও মোট ১০ হাজার হেক্টর জমির আলু আক্রান্ত হয়েছে। এগুলো পানির নিচে আছে। বীজ সংকটের ব্যাপারে তিনি বলেন এখনো মুন্সিগঞ্জের হিমাগার গুলোতে বেশ কিছু আলু মজুদ আছে বলে আমরা জানতে পেরেছি। তাছাড়া হল্যান্ড হতে আমদানিকৃত বীজও আছে। সব মিলিয়ে শেষ পর্যন্ত বীজ সংকট দেখা দেয় কিনা এটা এখনো নিশ্চিত ভাবে বলা যাচ্ছে না । বীজের দাম বৃদ্ধির ব্যাপারে তিনি বলেন,আমরা সরাসরি বীজের দাম বাড়ালে নিজেরা হস্তক্ষেপ করতে পারিনা। আমারা নির্বাহী ক্ষমতা প্রয়োগ করে জেল জরিমান করতে পারিনা। প্রশাসনের যাদের এই ক্ষমতা আছে তারা এই বিষয়টি দেখবে আসা করছি।