উত্তরের পর এবার দক্ষিণ গাজার খান ইউনুস শহর তছনছ করে দিচ্ছে ইসরাইল। রোববার রাতভর দফায় দফায় হামলা চালিয়েছে এই শহরে। পালটা প্রতিক্রিয়ায় তেল আবিবের পাশের হলন শহরে রকেট হামলা চালিয়েছে হামাস। সোমবার এক বিবৃতিতে ইসরাইলি পুলিশ জানিয়েছে হামলায় বড় ক্ষতি হয়নি। একজন বেসামরিক নাগরিক আহত হয়েছে। আগের দিন রোববার সামরিক শাখার টেলিগ্রাম চ্যানেলে পোস্ট করা একটি অডিও ক্লিপে হামাস মুখপাত্র আবু ওবেদা বলেছেন, আলোচনা অথবা প্রতিরোধের শর্তে সম্মত না হলে জিম্মিদের জীবিত অবস্থায় ফেরত পাবে না ইসরাইল। এএফপি, আলজাজিরা। দক্ষিণ গাজায় পৈশাচিক হামলার মাঝেই হামাসকে অস্ত্র জমা দিয়ে আত্মসমর্পণের আহ্বান জানিয়েছেন ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। রোববার হামাস প্রধানকে উদ্দেশ করে দেওয়া এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, হামাসের সময় ঘনিয়ে এসেছে। কারণ, দুই মাসের মাথায় এসে ইসরাইলি অভিযান আরও জোরদার হয়েছে। এখনো যুদ্ধ চলছে, কিন্তু এটা হামাসের শেষের শুরু। আমি হামাস যোদ্ধাদের বলছি, এটাই শেষ। ইয়াহিয়া সিনওয়ারের জন্য মরবেন না। এখনই আত্মসমর্পণ করুন। গত কয়েক দিনে কয়েক ডজন হামাস সদস্য আমাদের বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করেছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি। তবে তিনি এর সপক্ষে কোনো প্রমাণ পেশ করেননি। এদিকে হামাস উত্তর গাজা উপত্যকার জাবালিয়ায় তাদের যোদ্ধাদের আত্মসমর্পণের বিষয়ে ইসরাইলি দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে। তারা বলছে, হামাসের নায়করা কখনো আত্মসমর্পণ করে না। ইসরাইলি গণমাধ্যমে চোখ বাঁধা অর্ধনগ্ন যেসব ব্যক্তির ছবি প্রকাশ করেছে, তারা ফিলিস্তিনের নিরীহ বেসামরিক নাগরিক। হাত-পা বেঁধে পাশে অস্ত্র রেখে তাদের হামাস সদস্য সাজানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু তাদের এসব মিথ্যা কাউকে প্রভাবিত করতে পারবে না। হামাসের রাজনৈতিক ব্যুরোর একজন সিনিয়র সদস্য ইজ্জাত আল-রিশক বলেন, ইসরাইলি বাহিনীর প্রকাশিত ছবিগুলো একটি হাস্যকর গল্পের অংশ, যা তাদের হামলার জবাবে প্রতিরোধের বিরুদ্ধে একটি কথিত বিজয় ঘোষণা করার জন্য তৈরি করা হয়েছে। গত ৭ অক্টোবর থেকে ইসরাইলের হামলায় এ পর্যন্ত প্রায় ১৮ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে এবং প্রায় ৪৯ হাজার জন আহত হয়েছে। এছাড়া এ হামলায় পুরো গাজা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আশরাফ আল-কুদরা সোমবার জানান, ২৪ ঘণ্টায় ২৯৭ জন নিহত এবং ৫৫০ জনের বেশি আহত হয়েছেন। মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৮ হাজার ২০৫ জনে। নারী ও শিশুসহ আহত প্রায় ৫০ হাজার। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে বিশেষ অধিবেশন আজ : গাজা উপত্যকায় ইসরাইলের নির্বিচার বোমা হামলার পরিপ্রেক্ষিতে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে বিশেষ অধিবেশন বসছে আজ। রোববার জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সভাপতি ডেনিস ফ্রান্সিস জানান, নিউইয়র্কের স্থানীয় সময় মঙ্গলবার বেলা ৩টায় এই অধিবেশন বসবে। আলজাজিরা। সদস্য দেশগুলোকে লেখা এক চিঠিতে ডেনিস ফ্রান্সিস বলেছেন, মিসর ও মৌরিতানিয়ার অনুরোধে এই বৈঠক ডেকেছেন তিনি। আরব গ্রুপের সভাপতি মিসর এবং মৌরিতানিয়া হচ্ছে মুসলিম দেশগুলোর জোট অর্গানাইজেশন ফর ইসলামিক কো-অপারেশন অব কান্ট্রিসের (ওআইসি) সভাপতি। চিঠিতে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৩৭৭ রেজ্যুলেশন উল্লেখ করে ‘শান্তির জন্য ঐক্যবদ্ধ’ থাকতে আহ্বান জানানো হয়েছে। আর এই আহ্বানে সাড়া দিয়ে ডাকা হয়েছে বিশেষ অধিবেশন। চিঠিতে যুক্তরাষ্ট্রের দিকে ইঙ্গিত করে মিসর এবং মৌরিতানিয়া বলেছে যে, নিরাপত্তা পরিষদের একটি স্থায়ী সদস্য গাজায় যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে ভেটো দেওয়ার পরে বিশেষ অধিবেশনের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। ১৯৫০ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ ৩৭৭ রেজ্যুলেশন অনুমোদন দেয়। ৩৭৭ অনুসারে জাতিসংঘের প্রধান দায়িত্ব আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা সুরক্ষিত রাখতে নিরাপত্তা পরিষদ ব্যর্থ হলে সাধারণ পরিষদের ১৯৩ সদস্য পদক্ষেপ নিতে পারে। কেরেম শালোম সীমান্ত খুলে দেবে ইসরাইল : রাফাহ ক্রসিংয়ের পর এবার খোলা হবে কেরেম শালোম (কারেব আবু সালেম) সীমান্ত। সোমবার ইসরাইলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের একটি ইউনিট (সিওজিএটি) জানিয়েছে, ইসরাইল ও গাজার মধ্যকার কেরেম শালোম সীমান্তটি খুলে দেওয়া হবে। একই দিনে গাজা উপত্যাকার রাফাহ সীমান্ত ক্রসিং পরিদর্শন করতে মিসরে পৌঁছেছেন জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের রাষ্ট্রদূতরা। সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং মিসরের আয়োজিত একদিনের সফরটিতে রাশিয়া ও যুক্তরাজ্যসহ বেশ কয়েকটি দেশের রাষ্ট্রদূত অংশ নিয়েছেন।