রাজধানীর ক্যান্টনমেন্ট এলাকার প্রায় ৯ কাঠা জমি। এর বর্তমান বাজারমূল্য প্রায় পাঁচ কোটি টাকা। ওই জমিতে নজর পড়ে অনলাইন গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক খান মোহাম্মদ আক্তারুজ্জামানের। তাই সেটি দখলে মরিয়া হয়ে ওঠেন তিনি। একাধিকবার হামলাও চালায় তার বাহিনী। কিন্তু জমির মালিক নাজিম উদ্দিন ভূঁইয়া আরজুও নাছোড়বান্দা। আর এটাই কাল হয়েছে তার। নিজের জমি রক্ষা করতে গিয়ে এখন তিনি নাশকতা মামলার আসামি। একাধিক মামলায় তাকে শ্যোন অ্যারেস্ট দেখানো হয়েছে। দু-তিন বছরের পুরোনো মামলাতেও তাকে গ্রেফতার দেখিয়ে রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। এখন আরজুর জীবন চার দেওয়ালে বন্দি। শুধু তাই নয়, পরিবারের সদস্যরাও রয়েছেন আতঙ্কে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, কারাবন্দি আরজু নিউগিনি প্রপার্টিজের স্বত্বাধিকারী। ক্যান্টনমেন্ট থানার ইসিবি চত্বরে তার জমি দখল করতে দীর্ঘদিন ধরে চেষ্টা চালাচ্ছিলেন আক্তারুজ্জামান। আক্তারুজ্জামান একাধিকবার তার বাহিনী দিয়ে আরজুর কর্মচারীদের ওপর হামলা চালায়। শুধু তাই নয়, ভিকটিমদের আসামি করে উলটো মামলাও করা হয়েছে। হামলা-মামলা সামলাতে অনেকটাই নাজেহাল আরজু ও তার লোকজন। আক্তারুজ্জামানের দখল বাণিজ্যের বিরুদ্ধে এলাকাবাসী মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছেন। সম্প্রতি তার হাত থেকে জমি রক্ষা করতে এবং হামলা-মামলা থেকে রেহাই পেতে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এ কারণে আরজু এবং তার লোকদের প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হয়। এ ব্যাপারে ২১ অক্টোবর আরজু ক্যান্টনমেন্ট থানায় সাধারণ ডায়রি (জিডি) করেন। জিডিতে আক্তারুজ্জামান ছাড়াও মো. আজাদুর রহমান আজাদ ও বাবুল হোসেন নামে দুজনকে অভিযুক্ত করা হয়। বলা হয়, ১৭ অক্টোবর রাত ৮টার দিকে তাদের পাঠানো ৪-৫ জন অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি নিউগিনি অফিসে গিয়ে আরজুকে খুঁজতে থাকে। তাকে না পেয়ে তার ছোট ভাই সাইফুলসহ অফিস স্টাফদের হুমকি দিয়ে বলে যে, ‘তোদের মালিক কই? ওকে তুলে নেওয়ার জন্য এসেছি। বেটাকে পাইলে জানে মেরে ফেলব। কতবড় সাহস অনলাইন গ্রুপের মালিকের বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করে।’ আরজুর ভাই সাইফুল ইসলাম জানান, জিডির পর হুমকির মাত্রা আরও বেড়ে যায়। জঙ্গি মামলায় ফাঁসানোর ভয় দেখানো হয়। ২৩ অক্টোবর রাতে সাদা পোশাকের ডিবির একটি দল রাজধানীর বনানীর হোটেল সেরিনা থেকে আরজুকে তুলে নিয়ে যায়। পরদিন তাকে বনানী থানায় করা ২০২২ সালের ৮ জুনের একটি নাশকতার মামলায় অজ্ঞাতনামা আসামি হিসাবে গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়। পরে একের পর এক পুরাতন মামলায় তাকে শ্যোন অ্যারেস্ট দেখানো হয়। এগুলোর মধ্যে শেরেবাংলা নগর থানায় ২০২১ সালের ১৮ আগস্ট, ২০২২ সালের ৭ আগস্ট, চলতি বছরের ৭ জুন ও ৩০ জুলাই করা মামলাও আছে। এসব মামলায় রিমান্ডে তার ওপর শারীরিক নির্যাতন চালানো হয়েছে বলেও পরিবারের অভিযোগ। আরজু লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ উপজেলার নোয়াগাঁও ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সভাপতি আবু তাহেরের ছেলে। তার বড় ভাই শাহনেওয়াজ ভূঁইয়া শামীম উপজেলা যুবলীগের সদস্য। আরজুর ছোট ভাই সাইফুল ইসলাম ভূঁইয়া বলেন, আমার ভাই একজন আলেম। পারিবারিকভাবে আমরা আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। অথচ তাকে নাশকতার মামলায় জড়ানো হচ্ছে। তিনি বলেন, প্রশাসনের সহায়তায় মিথ্যা মামলায় আমাদের চার ভাইকে জেলে পাঠিয়েছিল আক্তার বাহিনী। ইতোমধ্যে তিন ভাই জামিন পেলেও আরজু এখনো জামিন পায়নি। তাকে জেলখানায় মেরে ফেলার ষড়যন্ত্র হচ্ছে। আমাকে ধরতে পারলেও নাকি জামায়াত-জেএমবির পেন্ডিং মামলা দেওয়া হবে হুমকি আসছে। তাদের প্রস্তাব আমরা জমি ছেড়ে দিলে হামলা-মামলা থেকে পরিত্রাণ পাব। তিনি আরও বলেন, এভেরোজ ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের প্রতিষ্ঠাতাকে একইভাবে মিথ্যা মামলায় জেলে পাঠিয়েছিল আক্তার বাহিনী। সেই মামলার ঘানি টানতে গিয়ে এখন ওই পরিবার অনেকটা নিঃস্ব। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে মঙ্গল ও বুধবার বেশ কয়েকবার আক্তারুজ্জামানের মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। তবে বুধবার বিকালে নিজেকে আক্তারুজ্জামনের ব্যক্তিগত কর্মকর্তা পরিচয়ে জামিল নামের একজন ফোন রিসিভ করেন। সাংবাদিক পরিচয় পাওয়ার পর তিনি বলেন, ‘স্যার ব্যস্ত আছেন। তিনি এখন কথা বলতে পারবে না। প্রয়োজন হলে স্যার নিজেই আপনাকে ফোন করবেন।’ ডিবি তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) আশরাফুল ইসলাম বলেন, আমরা নাজিম উদ্দিন ভূঁইয়া আরজুকে কোনো মামলায় শ্যোন অ্যারেস্ট দেখাইনি। আপনি বিষয়টি নিয়ে ডিবি গুলশান বিভাগের সঙ্গে কথা বলতে পারেন। ডিবি গুলশান বিভাগের ডিসি মনিরুল ইসলাম বলেন, যখন আরজুকে গ্রেফতার করা হয় তখন আমি দায়িত্বে ছিলাম না। সম্প্রতি আমি ডিবি গুলশান বিভাগের ডিসি হিসাবে দায়িত্ব নিয়েছি। তাই এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু বলতে পারব না।