লোকাল, কমিউটার ও শহরতলি ট্রেন চালু হলে-ট্রেনের সংখ্যা বাড়ত। ফলে যাত্রী সংখ্যা ভাগ হয়ে ভিড় কমত। এতে রেলের আয়ও বাড়ত। একটি আন্তঃনগর ট্রেনের প্রায় দ্বিগুণ যাত্রী নিয়ে লোকাল, কমিউটার ও শহরতলি ট্রেন চলতে পারে। স্বল্প দূরত্বে চলা এসব ট্রেনে পা রাখার ঠাঁই থাকে না। তারপরও সাধারণ যাত্রীদের কাছে এগুলো আশীর্বাদস্বরূপ। রাজধানী এবং এর আশপাশ জেলার সঙ্গে লোকাল কিংবা কমিউটার ট্রেন চালুর পরিকল্পনা প্রায় এক যুগ আগের। এ সময়ের মধ্যে অনেক (১৫২টি) আন্তঃনগর ট্রেন চালু হলেও সাধারণ মানুষ চলাচলের ট্রেন চালুর পরিকল্পনা বাস্তবায়ন নেই। যদিও সাধারণ মানুষের জোরালো দাবি ছিল-সব রুটেই সাধারণ ট্রেন চালুর। রেলওয়ে সূত্র জানায়, ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ, ঢাকা-টঙ্গী, ঢাকা-জয়দেবপুর, ঢাকা-ময়মনসিংহ, ঢাকা-নরসিংদী রুটে অন্তত ১২ জোড়া সাধারণ ট্রেন চালানো সম্ভব। বেশ কয়েকবার উদ্যোগ নেওয়া হলেও ‘রাজনৈতিক’ কারণে তা সফল হয়নি। এমপি-মন্ত্রী এমনকি রেলওয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের দৃষ্টি থাকে আন্তঃনগর ট্রেন চালুর দিকে। জনপ্রতিনিধিদের প্রতিশ্রুতি রক্ষায় একের পর এক চালু হয় আন্তঃনগর ট্রেন। অপরদিকে সাধারণ ট্রেন চালুর বিষয়টি ক্ষীণ হয়ে পড়ে। এ প্রসঙ্গে রেলওয়ে অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন) সরদার সাহাদাত আলী বলেন, অধিক যাত্রী পরিবহণ ও সেবা বাড়াতে হলে লোকাল, মেইল, কমিউটার কিংবা শহরতলী ট্রেন চালুর বিকল্প নেই। রাজধানীর সঙ্গে আশপাশ জেলায় অধিক সংখ্যক সাধারণ ট্রেন চালানো গেলে বিপুল সংখ্যক যাত্রী পরিবহণের সঙ্গে রেলের আয়ও বাড়ত। আশপাশের সাধারণ মানুষ খুব সহজে রাজধানীতে এসে কাজ শেষে বাড়ি ফিরতে পারত। এমনটা ভারতসহ বিভিন্ন দেশেই রয়েছে। বারবার উদ্যোগ নেওয়ার পরও আমরা করতে পারছি না। তিনি বলেন, ‘শহরতলী কিংবা সাধারণ ট্রেন চালানো সম্ভব হতো-যদি পর্যাপ্ত ইঞ্জিন, কোচ, চালক, গার্ড ও জনবল থাকত। কম দূরত্বের মধ্যে ট্রেন চালানো হলে সাধারণ মানুষ খুবই উপকৃত হয়। বিষয়টি নিয়ে সম্প্রতি আমরা বেশ কয়েকবার মিটিং করেছি-কিভাবে সাধারণ ট্রেন চালানো যায়। বিভিন্ন রুটে পুরাতন ট্রেনের কোচ বদলিয়ে নতুন কোচ লাগানো হচ্ছে। বদলে ফেলা কোচ দিয়ে সাধারণ ট্রেন চালুর পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু ইঞ্জিন, চালকসহ লোকবলের অভাবে তা বাস্তবায়ন সম্ভব হচ্ছে না।’ রেলওয়ে অপারেশন ও পরিবহণ দপ্তর সূত্রে জানা যায়, রাজধানীর কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন হয়ে প্রতিদিন ১০৮টি যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল করছে। ঢাকা থেকে বিমানবন্দর-জয়দেবপুর পর্যন্ত চলমান ৩য় এবং ৪র্থ লেন সম্পূর্ণ হলে এ পথে প্রতিদিন প্রায় আড়াইশ ট্রেন পরিচালনা করা সম্ভব হবে। এখনো দ্বিগুণ ট্রেন পরিচালনা করা সম্ভব। তবে ইঞ্জিন-কোচ এবং জনবল প্রয়োজন। যা রেলওয়ে বহরে নেই। বর্তমানে ১১১টি স্টেশন বন্ধ রয়েছে। এ কারণে স্টেশন সংলগ্ন এলাকার সাধারণ যাত্রীরা ট্রেনে ভ্রমণ করতে পারছেন না। অন্যদিকে সাধারণ ট্রেনের সংখ্যা না বাড়ায় যাত্রীরা চলমান ট্রেনগুলোতে তিনজনের আসনে ৬/৭ জন গা-ঘেঁষে বসছেন। ট্রেনের ভেতর দাঁড়ানোর পাশাপাশি দুই বগির সংযোগস্থলে দাঁড়িয়েও চড়ছেন যাত্রীরা। ঝুঁকি নিয়ে ট্রেনের ছাদ, ইঞ্জিন ও দরজায় ঝুলে ভ্রমণ করতেও দেখা যাচ্ছে যাত্রীদের। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে কর্মরত বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা জানান, ১০৬টি আন্তঃনগর ট্রেনের মধ্যে শুধু কমলাপুর হয়ে ৭৬টি চলাচল করছে। অপরদিকে ৫৪টি মেইল, লোকাল ও কমিউটার ট্রেন চলছে। সাধারণ ট্রেনের সংখ্যা কম হওয়ায় কম দূরত্বে চলা যাত্রীদের অনেকে আন্তঃনগর ট্রেনে বিনা টিকিটে চলছেন। এতে সিটধারী যাত্রীদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। টিকিটবিহীন যাত্রীরা প্রায়ই সিটধারী যাত্রীদের আসন দখল করে বসে থাকেন। এ নিয়ে প্রায়ই তর্ক-বিতর্ক হয়। জয়দেবপুরগামী যাত্রী আমিনুল ইসলাম জানান, সাধারণ ট্রেন পর্যাপ্ত না থাকায় তার মতো শত শত যাত্রী আন্তঃনগর ট্রেনেই যাতায়াত করেন। এক একটি স্টেশনে নির্ধারিত কয়েকটি টিকিট থাকায় প্রায় ৯৫ শতাংশ যাত্রীই বিনা টিকিটে আন্তঃনগর ট্রেনে উঠে পড়েন। ঢাকা রেলওয়ে বাণিজ্যিক কর্মকর্তা মো. শাহ আলম কিরণ শিশির বলেন, সাধারণ যাত্রীদের চাহিদা অনেক বেশি। আন্তঃনগর ট্রেনেও যাত্রীদের পা রাখার ঠাঁই থাকে না। এ ক্ষেত্রে পর্যাপ্তসংখ্যক সাধারণ ট্রেন থাকলে বিপুলসংখ্যক যাত্রী পরিবহণ করা যেত। বর্তমান সরকার সাধারণ ট্রেনসহ শহরতলী ট্রেন চালুর পরিকল্পনা নিয়েছে-যা বাস্তবায়নে কাজ চলছে। আশা করি ৩য় এবং ৪র্থ লেন বাস্তবায়ন সম্পন্ন হলে এ রুটে বেশ কয়েকটি সাধারণ ট্রেন চালানো সম্ভব হবে। কমলাপুর স্টেশন ম্যানেজার মাসুদ সরওয়ার বলেন, শহরতলী ট্রেন চালু হলে ব্যাপক যাত্রী রাজধানীতে আসা-যাওয়া করতে পারবে। এতে সাধারণ মানুষ উপকৃত হবে। আশা করছি সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা পূরণে রাজধানী এবং আশপাশের জেলায় সাধারণ ট্রেনসহ শহরতলী ট্রেন চালু হবে।