পাকিস্তান থেকে হবিগঞ্জের চুনারুঘাটে আসেন মাহা বাজোয়া (৩২) নামে এক নারী। তিনি পাকিস্তানের লাহোর প্রদেশের মুলতান রোডের সাকিস্ট্রিট সৈয়দপুরের বাসিন্দা মকসুদ আহমেদের মেয়ে। স্ত্রীর অধিকার আদায় করতে এসে তিনি তার স্বামী সাজ্জাদ হোসেন তালুকদারের (৩৫) বিরুদ্ধে যৌতুক নিরোধ আইনে মামলা করেছেন। সাজ্জাদ হোসেন মজুমদার চুনারুঘাট পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের উত্তর বড়াইল এলাকার শফিউল্লা মজুমদারের ছেলে। রোববার (১৭ ডিসেম্বর) মাহা বাজোয়া সাংবাদিকদের বলেন, ‘১০ বছর আগে আমার বিয়ে হয়েছে। আমার স্বামী সাজ্জাদ হোসেন তালুকদার। তিনি ১০ বছর আগে পাকিস্তানে যান। তারপর তিনি আমাকে অনেক ভালোবাসেন বলে জানান। ২০১৪ সালে পাকিস্তানে আমাদের বিয়ে হয়। এর পর সাজ্জাদ দুবাই চলে যান। প্রতি বছরই তিনি পাকিস্তানে আমার কাছে আসতেন।’ মাহা বাজোয়া বলেন, ‘২০১৮ সালে আমি চুনারুঘাটে আমার শ্বশুর বাড়ি যাই। পরে আমি আবারও পাকিস্তান ফিরে যাই। আর আমার স্বামী সাজ্জাদ দুবাই চলে যান। ২০১৯ সালে তিনি আবারও পাকিস্তানে আমার কাছে আসেন। তখন আমি তাকে শ্বশুরবাড়ি বাংলাদেশ বা সেখানে চাকরি করেন, সেখানে আমাকে রাখতে বলি। তখন তিনি আমাকে জানান— করোনা ভাইরাসের কারণে তার অবস্থা খুবই খারাপ। চাকরি চলে গেছে। করোনাভাইরাস শেষ হলে তিনি আমাকে তার সঙ্গে নিয়ে যাবেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘করোনাভাইরাস শেষে আমি আমার মেয়ের পাসপোর্ট তৈরি করি। সাজ্জাদ পাকিস্তান না আসার কারণে মেয়ের পাসপোর্টে তার নাম দিতে পারছিলাম না। আমি তখন আমার স্বামীর সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি জানান— দুবাইতে একটি নাইট ক্লাবে তার চাকরি হয়েছে। আমি দুবাইতে যাওয়ার কথা বললে তিনি জানান— করোনাভাইরাসের কারণে তার আর্থিক অবস্থা খারাপ হয়ে গেছে। অনেক টাকা ঋণও হয়েছে তার। তখন আমি আমার বোনের কাছ থেকে টাকা নিয়ে তাকে পাঠাই। এরপর আমার অলংকার বিক্রি করে স্বামীকে টাকা দেই। এতে আমার অনেক ক্ষতি হয়। তার জন্য আমি অনেক ত্যাগ করি। ২২ বছর বয়স থেকে ৩২ পর্যন্ত ১০ বছর আমি তার জন্য অপেক্ষা করি। তারপরও আমার স্বামী তার কাছে আমাকে রাখার মতো টাকা নেই বলে জানান। ২০২২ সালে আমি তাকে বলি, রমজান এসে গেছে আমাকে তোমার কাছে নিয়ে যাও। আমি ও আমার মেয়ের পাসপোর্টও রেডি আছে। রমজানের পর আমাকে বাংলাদেশে নিয়ে যাবে বলে তিনি জানান। রমজানের তিন মাস পর সাজ্জাদদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি আমাকে বাংলাদেশে নেওয়ার মতো টাকা নেই বলে জানান। তারপর আমার বাড়ি বিক্রি করে আমি ও আমার মেয়ের ভিসা ও টিকেট করি।’ মাহা বাজোয়া বলেন, ‘হোয়াটসঅ্যাপে তাকে ভিসা ও টিকেটের কপি পাঠিয়ে জানাই, আমরা সকালে দুবাই আসছি। পরে বাংলাদেশ থেকে কল এসেছে বলে জানান আমার স্বামী। দুই দিন পর কল করলে তিনি বলেন— তার বাবার হার্ট অ্যাটাক হয়ে আইসিইউতে আছে। যে কারণে তাকে বাংলাদেশে যেতে হচ্ছে। আমি তাকে বাংলাদেশে যাওয়ার ক্ষেত্রে বাধা না দিয়ে বলি, ঠিক আছে তুমি বাংলাদেশ যাও। আবারও দুবাই আসার পর আমাকে নিয়ে বাংলাদেশ নিয়ে যেও। কিন্তু তিনি বাংলাদেশ গিয়েই আমার নম্বর ব্লক করে দেন। তারপর তার পরিবারের কয়েক জনের নম্বরে যোগাযোগ করার চেষ্টা করি। তারাও আমার ফোন ব্লক করে দেন। তখন জানতে পারি, আমার স্বামী দ্বিতীয় বিয়ে করেছেন। কিন্তু আমি বিশ্বাস করিনি।’ পাকিস্তানি এই নারী বলেন, ‘এর তিন মাস পর তিনি দুবাই এসে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। আমিও তখন দুবাইতে তার কাছে যাই। আমি তার দ্বিতীয় বিয়ে সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি অস্বীকার করেন। আমি তাকে বলি, এত দিন কথা না বলায় আমাকে অনেক ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। আমি তখন তাকে পবিত্র কুরআন শরিফ ছুঁয়ে আমাকে না ছাড়ার অঙ্গীকার করতে বলি। আমরা হোটেলে কয়েক দিন থাকি। একদিন খাবার আনার কথা বলে তিনি হোটেল থেকে বের হয়ে টিকেট করে বাংলাদেশ চলে যান। আমি তো না জেনে তার জন্য অপেক্ষা করতে থাকি। একপর্যায়ে পুলিশকে জানালে তারা জানায়, সাজ্জাদ বাংলাদেশে চলে গেছে। আমি তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে চাইলে তার ফোন নম্বর বন্ধ পাই। এরপর আমি বাংলাদেশে আসার জন্য কয়েকবার চেষ্টা করি। কিন্তু স্পন্সরের কারণে আসতে পারিনি।’ মাহা বাজোয়া বলেন, ‘এবার আমি আমার স্বামীর জন্য আসিনি। পাকিস্তান ও দুবাইতে সালোয়ার কামিজের ব্যবসা করি। বাংলাদেশের মেয়েরাও পাকিস্তানি সালোয়ার কামিজ পছন্দ করে বলে এখানেও ব্যবসা শুরু করার পরিকল্পনা রয়েছে।’ এ বিষয়ে তার স্বামী সাজ্জাদ হোসেন তালুকদারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘মাহা বাজোয়ার সঙ্গে ২০১৪ সালে আমার বিয়ে হয়। ২০২২ সালের মে মাসে ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। আমি দুবাইতে যত টাকা রোজগার করেছি, সবই মাহা বাজোয়াকে দিয়ে দিতে হয়েছে। আমার বাংলাদেশি পরিবারকে তার জন্য কোনো অর্থ দিতে পারিনি।’