গাজায় স্থায়ীভাবে যুদ্ধবিরতি দেওয়ার পরিবর্তে শুধু মানবিক সহায়তা বাড়ানোর প্রস্তাব পাশ করেছে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ। এর মধ্য দিয়ে ফিলিস্তিনিদের হত্যায় ইসরাইলকে লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন আরব লীগের সেক্রেটারি জেনারেল আহমেদ আবুল গাইত। আরব নিউজ। জাতিসংঘে শুধু গাজায় আরও মানবিক সহায়তা বাড়ানোর প্রস্তাব পাশ হয়েছে শুক্রবার। এর আগে গাজায় যুদ্ধবিরতির বিষয়ে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে একটি প্রস্তাব তুলেছিল সংযুক্ত আরব আমিরাত। প্রথমে তাতে গাজায় মানবিক সহায়হতা বাড়ানোসহ ‘অবিলম্বে যুদ্ধ বন্ধের আহ্বানের কথা উল্লেখ ছিল। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ভেটোতে এই প্রস্তাব পাশ করা সম্ভব হয়নি। পরবর্তী সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের চাপের মুখে বেশ কিছু শব্দ কাটছাঁট করা হয়েছে। শেষ পর্যন্ত পাশ হওয়া প্রস্তাবে যুদ্ধ বন্ধের আহ্বান কথাটি এড়িয়ে ‘যুদ্ধ বন্ধে উপযুক্ত পরিস্থিতি তৈরি’র আহ্বান জানানো হয়েছে। জাতিসংঘের এমন সিদ্ধান্তের বিষয়ে শনিবার আবুল গাইত বলেন, গাজায় মানবিক বিপর্যয় চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে। এমন পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত ছিল এ যুদ্ধ বন্ধে জোরালো আবেদন তোলা। ইসরাইলের গত ৮০ দিনের বোমা হামলায় গাজায় মানবিক বিপর্যয় চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে। শুধু গত ২৪ ঘণ্টায় ১৬৬ জন নিহত হয়েছেন বলে রোববার জানিয়েছে ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। ইসরাইলি হামলায় গত ৭ অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা ২০ হাজার ৪২৪-এ দাঁড়িয়েছে। যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। আর আহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫৩ হাজার ৬৮৮-তে। এর আগে শনিবার উত্তর গাজার জাবালিয়ায় ক্রমাগত বিমান ও বোমা হামলা চালিয়েছে ইসরাইল। শনিবার সন্ধ্যা থেকে মধ্য গাজায়ও হামলা চালিয়েছে দেশটি। এতে অন্তত ৪০ জন ফিলিস্তিনি নিহত ও কয়েক ডজন মানুষ আহত হয়েছেন। জাতিসংঘের অনুমান অনুযায়ী, যুদ্ধ শুরুর পর থেকে গাজার ২.৩ মিলিয়ন জনসংখ্যার মধ্যে ১.৯ মিলিয়ন মানুষই বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। এদিকে উত্তর গাজায় পূর্ণ নিয়ন্ত্রণের দ্বারপ্রান্তে ইসরাইল। রোববার ইসরাইলের সামরিক সামরিক বিশ্লেষকরা জানিয়েছেন, উত্তর গাজায় ইসরাইলের নিয়ন্ত্রণের অর্থ এই নয় যে তারা এই অঞ্চল থেকে হামাসের উপস্থিতি দূর করতে সক্ষম হয়েছে। বরং এই নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে ইসরাইলের সামরিক বাহিনী হামাসের কোনো ধরনের অভিযান চালানোর ক্ষমতা হ্রাস করেছে। গাজার উত্তর ও দক্ষিণ উভয় অংশে হামলা অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছে ইসরাইলের সামরিক বাহিনীর একজন মুখপাত্র। তবে এটি ‘দীর্ঘয়িত ও কঠিন’ হবে বলে স্বীকার করেছেন তিনি। আগের দিন শনিবার গাজা যুদ্ধ নিয়ে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের একটি দীর্ঘ ফোনালাপ হয়। তবে আলাপচলাকালে যুদ্ধবিরতির কথা মুখেই আনেননি বাইডেন। রয়টার্সের খবর অনুযায়ী, ওয়াশিংটনে সাংবাদিকদের দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বাইডেন বলেন, ‘আমি আজ নেতানিয়াহুর সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনা করেছি। আর এটি একটি ব্যক্তিগত কথোপকথন। এ সময় আমি কোনো যুদ্ধবিরতি চাইনি।’ তবে এদিনের ফোনালাপে বাইডেন বেসামরিক জনসংখ্যার সুরক্ষার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছেন বলে এক বিবৃতিতে জানিয়েছে হোয়াইট হাউজ। এছাড়া বাইডেন ও নেতানিয়াহু ইসরাইলের সামরিক অভিযানের ‘উদ্দেশ্য ও পর্যায়ক্রম’ নিয়েও আলোচনা করেছেন। বিবৃতিতে হোয়াইট হাউজ আরও জানায়, বাইডেন মানবিক সহায়তা কার্যক্রমে সমর্থনসহ যুদ্ধ এলাকা থেকে নিরাপদে বেসামরিকদের সরিয়ে দেওয়ার গুরুত্বের ওপর জোর দিয়েছেন। জিম্মি মুক্তি নিশ্চিত করার গুরুত্ব নিয়েও আলোচনা করেছেন তারা। নিরাপত্তা পরিষদে গাজা যুদ্ধ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থানের জন্য দেশটির প্রতি ‘কৃতজ্ঞতাও’ প্রকাশ করেছেন নেতানিয়াহু।