ফিলিস্তিনি কিশোর আউনি এলদৌস। মাত্র ১৩ বছর বয়সী আউনি ছিল ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজার বাসিন্দা। তার স্বপ্ন ছিল, একদিন সে ইউটিউব তারকা হবে। হাজার হাজার কিংবা লাখ লাখ ভক্ত বা অনুসারী থাকবে তার। তার সে স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। কিন্তু এখন সে আর বেঁচে নেই। ইসরাইলি হামলায় সে নিহত হয়েছে। মানুষ যত কঠিন পরিস্থিতিতেই থাকুক না কেন, তার স্বপ্ন দেখার যেন শেষ হয় না। গত প্রায় দুই দশক ধরে ইসরাইলের চাপিয়ে দেওয়া অবরোধে ধুকছে ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকা। যাকে বলা হয় বিশ্বের বৃহত্তম উন্মুক্ত কারাগার। সেই গাজার কয়েক লাখ শিশু ও কিশোরের একজন আউনি এলদৌস। আজকের বিশ্বের আর দশটা দেশের শিশুদের মতো সেও স্বপ্ন দেখত। তার স্বপ্ন ছিল, একজন ইউটিউব তারকা হওয়া। সেই লক্ষ্যেই ২০২২ সালের আগস্ট মাসে একটি ইউটিউব গেমিং চ্যানেল খোলে সে। এর পর নিজের প্রথম ভিডিওটি শেয়ার করে। সেখানে মাইক্রোফোন হাতে নিয়ে ইউটিউব চ্যানেল নিয়ে তার স্বপ্নের কথা ঘোষণা করে সে। বিবিসির প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ভিডিওতে সে বলে, ‘সর্বপ্রথম আমি আমার পরিচয় দিচ্ছি। আমি একজন ফিলিস্তিনি, গাজা থেকে বলছি। আমার বয়স ১২ বছর। আমার লক্ষ্য এই ইউটিউব চ্যানেলটাকে ১ লাখ কিংবা ৫ লাখ কিংবা ১০ লাখ সাইস্ক্রাইবারে পৌঁছানো।’ ওই শর্ট ভিডিওটি শেষ করার আগে আউনি এলদৌস তার সাবস্ক্রাইবারের প্রতি সালাম জানায়। সেই ভিডিও পোস্ট করার মাত্র এক বছর পর গাজায় আগ্রাসন শুরু করে ইসরাইলি বাহিনী। হামলায় প্রথম দিকে যেসব নিহত হয়েছে তাদের একজন আউনি। আউনির পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, গত ৭ অক্টোবর ইসরাইলের চালানো বিমান হামলায় আউনি নিহত হয়। গত বছর সে যে স্বপ্ন দেখেছিল তার মৃত্যুর পর সেই স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। তার সেই ভিডিও লাখ লাখ ভিউ পেয়েছে। এছাড়া তার কম্পিউটার গেম খেলার ভিডিওগুলোর কোনো কোনোটা ১০ লাখের বেশি ভিউ হয়েছে। তার ইউটিউব চ্যানেলের সাবস্ক্রাইবার সংখ্যাও ১৫ লাখ অতিক্রম করেছে এবং প্রতিনিয়ত তা বেড়েই চলছে। আউনি এলদৌসের খালা আলা বলেন, সে ছিল খুবই হাসিখুশি ও আত্মবিশ্বাসী ছেলে। পরিবারের সদস্যরা তাকে ‘ইঞ্জিনিয়ার আউনি’ বলে ডাকত। কারণ সে কম্পিউটার খুবই ভালোবাসত। মৃত্যুর পর আউনি গাজার হারিয়ে যাওয়া শিশুদের প্রতীক হয়ে উঠেছে। গত আড়াই মাসে গাজায় ২০ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে ইসরাইল। যার মধ্যে ৮ হাজারই শিশু ও কিশোর। জাতিসংঘের শিশু বিষয়ক সংস্থা জানিয়েছে, গাজা বর্তমানে শিশুদের জন্য বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ স্থান হয়ে উঠেছে।