আ.লীগের দুই প্রার্থী বাহার ও শম্ভুকে ইসিতে তলব

প্রকাশিতঃ ডিসেম্বর ২৬, ২০২৩ | ৬:৪৪ পূর্বাহ্ন
অনলাইন নিউজ ডেক্স

জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আচরণবিধির গুরুতর লঙ্ঘনের দায়ে আওয়ামী লীগের দুই প্রার্থীকে কাল বুধবার তলব করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। তারা হলেন, বরগুনা-১ আসনের ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু ও কুমিল্লা-৬ আসনের আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার। তারা দুজনই বর্তমানে সংসদ-সদস্য। এ দুই প্রার্থীর বিরুদ্ধে একাধিকবার আচরণবিধি লঙ্ঘন করার প্রতিবেদন ইসির কাছে রয়েছে। প্রতিবেদনগুলো বিশ্লেষণ করে সোমবার নির্বাচন কমিশনের অনির্ধারিত বৈঠকে তাদেরকে ইসিতে তলব করার সিদ্ধান্ত হয়। এরপরই রাতে তাদেরকে চিঠি দেয় কমিশন। এদিকে আচরণবিধি লঙ্ঘনের পরিণাম ও সাজার বিষয় সতর্ক করতে তিনশ আসনের সব প্রার্থীকে নিয়ে সভা করতে রিটার্নিং কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছে ইসি। এ নির্দেশনা দিয়ে গতকাল রিটার্নিং কর্মকর্তাদের কাছে বিশেষ পরিপত্র পাঠানো হয়েছে। এতে পোস্টারে পলিথিন ব্যবহার না করতে প্রার্থীদের নির্দেশনা দিতে বলা হয়েছে। ইসি সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। দুই প্রার্থীকে নির্বাচন কমিশনে তলবের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ইসির আইন অনুবিভাগের যুগ্ম সচিব মো. মাহবুবার রহমান সরকার। তিনি বলেন, তাদের বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনের তথ্য এসেছে। কমিশন তাদের বক্তব্য শোনার জন্য ডেকেছেন। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ব্যাপক হারে আচরণবিধি লঙ্ঘনের তথ্য ও প্রতিবেদন আসছে নির্বাচন কমিশনে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ও নির্বাচন কমিশনাররা মাঠ পর্যায়ে গিয়ে বিভিন্ন ধরনের তথ্য পেয়েছেন। ওই অবস্থায় গত শনিবার নির্বাচনে আচরণবিধির গুরুতর লঙ্ঘন করলে সংশ্লিষ্ট প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিল করার আভাস দেন নির্বাচন কমিশনার মো. আনিছুর রহমান। ওইদিন তিনি সাংবাদিকদের বলেন, কোনো না কোনো জায়গায়, কারও না কারও প্রার্থিতা বাতিল হবে-এইটুকু আভাস দিচ্ছি। শিগগিরই জানতে পারবেন। ওইদিন তিনি আরও বলেন, আমরা কিছু কঠোর সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিষয়ে আলোচনা করেছি। এজন্য আরও কিছু তথ্য-উপাত্ত দরকার, তা চেয়েছি। ওই তথ্য পেলে কিছু কঠোর সিদ্ধান্তে চলে যাব। ইসি সূত্র জানায়, কোনো প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিলের আগে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত রয়েছে নির্বাচন কমিশনের। এছাড়াও ‘ভিআইপি’ প্রার্থীরা আচরণবিধি লঙ্ঘন করলে তাদের ইসিতে তলবের মাধ্যমে কঠোর অবস্থানের বার্তা অন্য প্রার্থীদের দিতে চায় কমিশন। ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু ও আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারকে কোন উদ্দেশ্যে নির্বাচন কমিশনে তলব করা হচ্ছে তা নিশ্চিত করতে পারেনি ওই সূত্র। তবে সূত্রটি জানায়, ইসি সতর্ক করার পরও আচরণবিধি আবার লঙ্ঘন করলে সংশ্লিষ্ট প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিল করতে পারে নির্বাচন কমিশন। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (আরপিও) ৯১ক ধারায় ইসিকে সেই ক্ষমতা দেওয়া আছে। এই দুই প্রার্থী একাধিকবার আচরণ বিধিমালা লঙ্ঘন করেন। এ দুই প্রার্থীর বিরুদ্ধে একাধিকবার আচরণবিধি লঙ্ঘনের তথ্য-প্রমাণ রয়েছে ইসির কাছে। সাংবাদিক মারধর করেছেন বাহার: আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারের বিরুদ্ধে একাধিক প্রতিবেদন নির্বাচন কমিশনের কাছে এসেছে। কুমিল্লা-৬ আসনের সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা নেতৃত্বে তিন সদস্যের কমিটির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, একাত্তর টিভির নিজস্ব প্রতিবেদক কাজী এনামুল হক ফারুক ও ক্যামেরাপারসন সাইদুর রহমান সোহাগের ওপর বাহারের উপস্থিতি ও নির্দেশে হামলার ঘটনা ঘটে। তিনি তার এপিএস ও তার নেতাকর্মীরা প্রচারণা চলাবস্থায় দায়িত্ব পালনরত মিডিয়া প্রতিনিধিদের বাধা দেওয়া, তিক্ত মন্তব্য ও উচ্ছৃঙ্খল আচরণ করেন; যা আরপিওর ৮৪এ এবং আচরণ বিধিমালার ১১ (ক) বিধির স্পষ্ট লঙ্ঘন। এ ঘটনায় তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হয়। আরপিও’র ৮৪এ ধারায় গণমাধ্যম কর্মীদের কাজে বাধা দেওয়ার ঘটনায় দোষীদের সর্বোচ্চ সাত বছর ও সর্বনিম্ন দুই বছর এবং অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডের বিধান রয়েছে। আরেকটি প্রতিবেদন ইসিতে পাঠিয়েছেন কুমিল্লা-৬ আসনের নির্বাচনি অনুসন্ধান কমিটি। ওই প্রতিবেদনে গত ১৮ ডিসেম্বর এক উঠান বৈঠকে ‘যদি কোনো বিএনপি-জামায়াতের কর্মীকে কোনো প্রার্থীর পক্ষে পাওয়া যায় তার হাত ঠ্যাং ভেঙে দেবেন, আমি আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার আপনাদের সঙ্গে আছি’- নেতাকর্মীদের এমন বক্তব্য দেওয়ার সত্যতা পেয়েছে নির্বাচনি অনুসন্ধান কমিটি। ওই প্রতিবেদনে আরপিওর ৭৩ ধারা এবং আচরণবিধির ১১ (ক) বিধি লঙ্ঘনের দায়ে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। আরপিওর ৭৩ ধারায় দোষীদের সর্বোচ্চ সাত বছর ও সর্বনিম্ন দুই বছর এবং অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডের বিধান রয়েছে। ইসির বিশেষ পরিপত্র: জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ব্যাপক হারে আচরণবিধি লঙ্ঘনের তথ্য আসছে নির্বাচন কমিশনে। এ অবস্থায় আচরণবিধি লঙ্ঘনের পরিণাম ও সাজার বিষয় সতর্ক করতে দেশের সব প্রার্থীকে নিয়ে সভা আয়োজন রিটার্নিং কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছে ইসি। সোমবার রিটার্নিং কর্মকর্তাদের কাছে এ বিষয়টি উল্লেখ করে বিশেষ পরিপত্র পাঠিয়েছে। সেখানে ‘সবুজ নির্বাচন’ আয়োজনের স্বার্থে কোনো প্রার্থী যাতে পোস্টারে পলিথিন ব্যবহার না করেন এবং মাইকের শব্দের মানমাত্রা ৬০ ডেসিবলের নিচে রাখতে নির্দেশনা দিতে বলা হয়েছে। পরিপত্রে বলা হয়েছে, নির্বাচনি এলাকার সব প্রার্থী নিয়ে যত দ্রুত সম্ভব বৈঠকের আয়োজন করবেন রিটার্নিং কর্মকর্তারা। বৈঠকে আচরণ বিধিমালার কপি তাদের দিতে হবে। একই সঙ্গে আচরণবিধি লঙ্ঘনের পরিণাম তথা শাস্তি সম্পর্কে সতর্ক করতে হবে। এছাড়া পরিবেশবান্ধব ও সবুজ নির্বাচন করার লক্ষ্য প্রার্থীরা যাতে পোস্টারে পলিথিনের আবরণ ব্যবহার এবং পিভিসির ব্যানার ব্যবহার না করেন সে নির্দেশনা দিতে বলা হয়েছে। এছাড়া প্রার্থীরা যাতে পোলিং এজেন্টদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেন সেই বিষয়ে পরামর্শ দিতে রিটার্নিং কর্মকর্তাদের বলা হয়েছে।