দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন না হলে দেশে ২০০৭ সালের ওয়ান ইলেভেনের মতো ঘটনা ঘটতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। এ বক্তব্যের পরই রাজনীতিতে নতুন করে কানাঘুষা শুরু হয়েছে। কোন পথে হাঁটছে দেশের রাজনীতি। এ ওয়ান ইলেভেনের বিষয়টি এখন চায়ের দোকান থেকে শুরু করে টেলিভিশনের টকশো পর্যন্ত জোর আলোচনা হচ্ছে। সমসাময়িক রাজনীতি নিয়ে যমুনা টেলিভিশন টকশোর আয়োজন করা হয়। সেখানে অংশ নেন বিএনপির আন্তর্জাতিক সহসম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা। টকশোর একপর্যায়ের রুমিনের কাছে জানতে চাওয়া হয়, ওবায়দুল কাদের বলেছেন— নির্বাচন না হলে ওয়ান ইলেভেনের মতো ঘটনা ঘটতে পারে, এ বক্তব্যকে কীভাবে দেখেন? জবাবে ব্যারিস্টার রুমিন বলেন, দেশে ৬৮টি কারাগার রয়েছে, যার ধারণক্ষমতা প্রায় ৪৩ হাজার। সেখানে বন্দি ৮৮ হাজার। এটি দেড় মাস আগের রিপোর্ট। বর্তমানে সংখ্যাটি লক্ষাধিক হবে। এর অর্থ দাঁড়ায়— নভেম্বরের শুরুতেই ছিল কারাগারে ধারণাক্ষমতার দ্বিগুণ। এখন আরও বেশি। আরও পড়ুন: কাদেরের ‘ফুল ফোটা’ বক্তব্যের কড়া জবাব দিলেন ব্যারিস্টার রুমিন আওয়ামী লীগের লোকজন ক্ষমতায় আছে বহুদিন ধরে। এ জন্য তাদের কারাগারে হাঁটতে হয় না তো। হাঁটতে হলে তখন টের পাবেন। ধারণক্ষমতা কত? ভেতরে থাকে কত? আর খুব বেশি দিন নেই কারাগারে যেতে। একপর্যায়ে রুমিন ফারহানার কাছে জানতে চাওয়া হয়, এখন আওয়ামী লীগ যা করছে, তাই কি বিএনপি করবে? জবাবে রুমিন ফারহানা বলেন, আমরা কিছু করব না। যেই সরকারই আসুক। গত ১৫ বছরে যে লুটপাট করেছে, যে মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে, মানুষকে তারা বিচারবহির্ভূত হত্যা করেছে। হেফাজতকে যেভাবে টর্চার করেছে, তারা প্রতিটা খাতকে ধ্বংস করেছে, সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করেছে। জাতির কাঠগড়ায় আওয়ামী লীগের বিচার হবে। আওয়ামী লীগ যারা করেছে, তাদের আজীবন কারাগারে থাকতে হবে। একজনও ছাড় পাবে না। রুমিন ফারহানা বলেন, হঠাৎ ওবায়দুল কাদের ওয়ান ইলেভেন নিয়ে গা ঝাড়া দিচ্ছেন কেন? ওয়ান ইলেভেন না তাদের আন্দোলনের ফসল। ওয়ান ইলেভেনের একজনেরও বিচার গত ১৫ বছরে আওয়ামী লীগ করেনি। কারণ সেই সময় তারা ভারতকে কথা দিয়ে এসেছিল যে, যারা ওয়ান ইলেভেন ঘটিয়েছে, তাদের সেফ এক্সিট দেওয়া হবে। প্রণব মুখার্জির বইটা খুললেই বিস্তারিত জানা যায়। প্রসঙ্গত, ২০০৭ সালের ২২ জানুয়ারির নির্বাচনের ১১ দিন আগে জরুরি অবস্থা জারি হওয়ার পর সেই নির্বাচন আর হয়নি। জরুরি অবস্থা জারির আগে তত্ত্বাবধায়ক সরকারটি ছিল বিএনপির নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে। সেই সময় নানা দাবিতে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মহাজোট ভোট বর্জনের ডাক দিয়ে আন্দোলনে ছিল। বিএনপি-জামায়াতের নেতৃত্ব সেই সময়ের ১৭-দলীয় জোট নির্বাচনের পথে ছিল। দুই রাজনৈতিক দলের মধ্যে সংঘাত-সংঘর্ষের মধ্যে ১১ জানুয়ারি সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপে তত্ত্বাবধায়কের প্রধানের পদ ছেড়ে জরুরি অবস্থা জারি করেন ইয়াজউদ্দিন আহমেদ। এর পর শপথ নেয় ফখরুদ্দীন আহমেদের নেতৃত্বে নতুন তত্ত্বাবধায়ক সরকার। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সর্বোচ্চ মেয়াদ ৯০ দিন হলেও সেই সরকার ক্ষমতায় থাকে দুই বছর। আর সেই সরকারের আমলে ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনে ভূমিধস জয় পাওয়ার পর রাজনীতিতে আওয়ামী লীগের একাধিপত্য প্রতিষ্ঠা হয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ২০১১ সালে উচ্চ আদালতের রায়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল হওয়ার পর বিএনপি যায় আন্দোলনে আর আওয়ামী লীগ বলছে সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা রক্ষার কথা। তত্ত্বাবধায়ক সরকার না পেয়ে ২০১৪ সালের মতো এবারও ভোট বর্জন করে আন্দোলনে নেমেছে বিএনপি ও সমমনা দলগুলো। তবে তাদের দাবি পাত্তা দিচ্ছে না আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে সরকার।