রাজস্ব কর্মকর্তার সহায়তায় স্বর্ণ চোরাচালান

প্রকাশিতঃ ডিসেম্বর ২৮, ২০২৩ | ৮:০৮ পূর্বাহ্ন
অনলাইন নিউজ ডেক্স

শুল্ক গোয়েন্দার চট্টগ্রাম শাখার এক রাজস্ব কর্মকর্তার বিরুদ্ধে স্বর্ণ চোরাচালানে সহায়তার অভিযোগ উঠেছে। শাহ আমানত বিমানবন্দরের গেট দিয়ে স্বর্ণের বার নিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার সময় গোয়েন্দা সংস্থার কাছে হাতেনাতে ধরা পড়েন ওই কর্মকর্তা। যদিও পরে শুল্ক গোয়েন্দা থেকে বলা হয়, বিমানবন্দর থেকে ‘পরিত্যক্ত’ অবস্থায় স্বর্ণের বারগুলো উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িত থাকায় ওই রাজস্ব কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। তথ্যমতে, ২১ আগস্ট চট্টগ্রামে শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ৬টি ৬৯৬ গ্রাম ওজনের স্বর্ণের বার সিভিল এভিয়েশন ও গোয়েন্দা সংস্থার সহযোগিতায় আটক করে শুল্ক গোয়েন্দা, যার বাজারমূল্য প্রায় ৬০ লাখ টাকা। এ ঘটনায় রাজস্ব কর্মকর্তা কেএমএম সালেমের সম্পৃক্ততা রয়েছে-জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের তদন্তে উঠে এসেছে। ওইদিনই সকাল সাড়ে ৭টার দিকে তুষার নগিন দাস নামে ভারতীয় এক নাগরিককে ৯৮১ গ্রাম স্বর্ণালংকারসহ আটক করেন কাস্টমস কর্মকর্তারা। শারজাহ থেকে বাংলাদেশ বিমানের বিজি-১৫১ ফ্লাইটে আসা এ যাত্রীর ব্যাগ থেকে ৪২১ গ্রাম অলংকার এবং গায়ে পরিহিত জামা থেকে ৫৬০ গ্রাম স্বর্ণ উদ্ধার করা হয়। ঘটনার দিনের বিমানবন্দরের সিসি টিভির ভিডিও ফুটেজ ও ঘটনা বিশ্লেষণ করে এনবিআর দেখতে পায়, সালেম স্বর্ণের বার প্যান্টের পকেটে নিয়ে বিমানবন্দর থেকে বেরিয়ে যাচ্ছেন। পথিমধ্যে তাকে গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন আটক করেন। আটকের পর তিনি উপস্থিত কর্মকর্তাদের জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে তিনি স্বর্ণের বার উদ্ধার করেছেন। কিন্তু এর সপক্ষে সংবাদদাতার মোবাইল নম্বর বা পরিচয়ের প্রামাণিক দলিলাদি উপস্থাপন করতে পারেননি। এছাড়াও ইমিগ্রেশন হলে জটলা সৃষ্টির আগে কাস্টমসের ঊর্ধ্বতন কোনো কর্মকর্তাকে স্বর্ণ জব্দের বিষয়টি জানায়নি, এমনকি শুল্ক গোয়েন্দার কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী তার সঙ্গে ছিল না। তিনি একাই প্যান্টের পকেটে ভরে স্বর্ণের বারগুলো বাইরে নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন। ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, রাজস্ব কর্মকর্তা সালেম বিমানবন্দরের টয়লেটে সকাল ৮টা ৯ মিনিট থেকে ৮টা ১৩ মিনিট পর্যন্ত অবস্থান করেন। এ সময় চোরাকারবারির সঙ্গে জড়িত এক ব্যক্তি টয়লেটে উপস্থিত ছিল। উভয়ের কথোপকথনের পর সালেম বেরিয়ে যাওয়ার সময় তার এক হাতে মোবাইল ও অন্য হাতে প্যাকেট দেখতে পাওয়া যায়। ভিডিও ফুটেজের সঙ্গে তার প্রাথমিক বক্তব্যের সামঞ্জস্য না থাকায় এনবিআর-এর ধারণা, তিনি স্বর্ণবার আত্মসাৎ বা পাচারের চেষ্টা করেছিলেন। স্বর্ণ চোরাচালানে সম্পৃক্ততার অভিযোগে আত্মপক্ষ সমর্থনে সালেমকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়ার প্রক্রিয়া চলমান আছে। এ বিষয়ে রাজস্ব কর্মকর্তা কেএমএম সালেম বলেন, ‘কারণ দর্শানোর নোটিশ এখনো হাতে পাইনি। নোটিশ পাওয়ার পর আমার বক্তব্য লিখিত আকারে এনবিআরকে জানানো হবে।’ নাম প্রকাশ না করার শর্তে কাস্টমস কর্মকর্তারা বলছেন, হঠাৎ করেই দেশে স্বর্ণের চোরাচালন বেড়ে গেছে। ৩ মাসে ঢাকা, সিলেট ও চট্টগ্রাম বিমানবন্দর দিয়ে নিয়মিত বিরতিতে স্বর্ণের চালান আটক করা হচ্ছে। নির্বাচনের কারণে দেশে অস্থিতিশীলতা দেখা দেওয়ায় চোরাচালান বাড়তে পারে। বিমানসহ বিভিন্ন এয়ারলাইন্সের ফ্লাইটে কর্মরত কেবিন ক্রু, বিমানবন্দরের পরিচ্ছন্নতাকর্মী, মেকানিক, কাস্টমস, সিভিল অ্যাভিয়েশন ও ইমিগ্রেশন পুলিশের কতিপয় সদস্যের সহায়তায় চোরাকারবারিরা মধ্যপ্রাচ্য থেকে বাংলাদেশে অবৈধভাবে স্বর্ণ আনছে বলে অভিযোগ আছে।