‘নির্বাচনকে সামনে রেখে কোনো অপশক্তি, সন্ত্রাসী গোষ্ঠী-ব্যক্তি যাতে কোনো রকমের অপতৎপরতা চালিয়ে ভোটদানে বাধা সৃষ্টি করতে না পারে- এজন্য আমাদের সচেতন হতে হবে। তাই আমি আপনাদের বলব, নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক ও অবাধ সুষ্ঠু করতে হলে প্রশাসনসহ সব শ্রেণি-পেশার মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে।’ জাতীয় পার্টির আয়োজনে বুধবার বিকালে ঢাকার নবাবগঞ্জের কৈলাইল টেকনিক্যাল উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে এক নির্বাচনি সভায় ঢাকা-১ আসনের জাতীয় পার্টির মনোনীত লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম এ কথা বলেন। এ সময় স্থানীয় ভোটাররা সালমা ইসলামের এ বক্তব্যের পক্ষে জোরালো সমর্থন জানান। একই দিন তিনি বক্সনগর, যন্ত্রাইল গোবিন্দপুর, আগলা ইউনিয়ন পরিষদে সভা ও বান্দুরার ধাপারি বাজার এলাকায় নির্বাচনি গণসংযোগ করেন ও তার নির্বাচনি লিফলেট বিতরণ করেছেন। এ সময় সাবেক প্রতিমন্ত্রী ও জাতীয় পার্টির কো চেয়ারম্যান সালমা ইসলাম বিভিন্ন বয়সি নারী-পুরুষসহ তরুণ-তরুণীদের কাছে লাঙ্গল প্রতীকে ভোট চান। সাধারণ মানুষের উচ্ছ্বসিত উপস্থিতিতে তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। সবার উদ্দেশে তিনি বলেন, ভয়কে জয় করেই বিজয় অর্জন করতে হবে। এবারের নির্বাচনে কোনো পেশিশক্তি ব্যবহারের সুযোগ নেই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অঙ্গীকার পূরণে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের বিকল্প নেই। সবাইকে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে তাদের নাগরিক আমানত প্রয়োগে সোচ্চার হতে হবে। তিনি বলেন, আগামী ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। প্রিয় কৈলাইল ইউনিয়নবাসী- আমি আপনাদের এমপি থাকাকালীন এ অঞ্চলের পাড়াগ্রাম এলাকার কালীগঙ্গা নদীতে বৃহত্তম সেতু নির্মাণ করে দিয়েছি। ফলে মানিকগঞ্জসহ হেমায়েতপুর সাভার এলাকা এখন আপনাদের অতি নিকটে। এছাড়া শতভাগ হিন্দু অধ্যুষিত এলাকা ভাঙ্গাভিটা গ্রাম থেকে রায়পুর মোল্লাকান্দা পর্যন্ত সড়ক তৈরি করে দিয়েছিলাম। আপনারা আমাকে লাঙ্গল প্রতীকে ভোট দিয়ে এমপি নির্বাচিত করলে আগামী দিনে শালিকা লঞ্চঘাটে ইছামতি নদীতে সেতু নির্মাণসহ কৈলাইলের সঙ্গে নবাবগঞ্জের সড়কপথে যোগাযোগের সব ধরনের ব্যবস্থা করব। এই এলাকার হাট-বাজারের উন্নয়নে সরকারি বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। এক সময় পাশের তেলেঙ্গা এলাকাটি অবহেলিত ছিল। আমি এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর তেলেঙ্গা গ্রামে পাকা সড়ক তৈরি করে দিয়েছিলাম। এছাড়া একটি হাসপাতাল করে দিয়েছি। যার নাম মা ও শিশু কল্যাণ হাসপাতাল। ফলে সেই অবহেলিত কৈলাইল ইউনিয়ন এখন অবহেলিত নেই। সালমা ইসলাম এ সময় সবার উদ্দেশে বলেন, কৈলাইল ইউনিয়ন একটি কৃষি অধ্যুষিত এলাকা। এছাড়া কৈলাইলের ভাঙ্গাভিটা গ্রামে উৎপাদিত বাঙ্গি চাষে সারা দেশে সুনাম রয়েছে। প্রিয় ভাই ও বোনেরা- নির্বাচনকে উৎসবে পরিণত করতে হলে সবাই মিলে কেন্দ্রে এসে ভোট প্রদান করতে হবে। কোনো অনিয়ম হলে অবশ্যই দেশের স্বার্থে আপনাকে প্রতিবাদ জানাতে হবে। আপনাদের সম্মিলিত প্রতিবাদ একটি অনিয়মকে রুখে দিতে পারে বলে আমি মনে করি। সবার সম্মিলিত প্রতিরোধই সব অনিয়মকে পাল্টে দিতে পারে। আপনারা আমাকে ভোটের মাধ্যমে এই এলাকার এমপি নির্বাচিত করলে দোহার-নবাবগঞ্জকে একটি আধুনিক জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদমুক্ত আলোকিত উপশহরে পরিণত করব। শুধু লাঙ্গল প্রতীকে সবার কাছে একটি করে ভোট চাই। আপনার একটি ভোট এই এলাকার বৈপ্লবিক পরিবর্তনে ভূমিকা পালন করবে বলে আমি আশাবাদী। তিনি বলেন, আপনারা জানেন, আমি আপনাদের প্রিয় মানুষ বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলামের সহধর্মিণী। তার আদর্শকে ধারণ করে বারবার আপনাদের কাছে ছুটে আসি। আপনাদের দেখতে ও দোহার-নবাবগঞ্জের উন্নয়ন কাজে অংশ নিতেই আমি আত্মনিয়োগ করব বলে মনস্থির করেছি। আপনারা নিশ্চয়ই আমাকে ফিরিয়ে দেবেন না। আমি আপনাদের কথা দিচ্ছি নবাবগঞ্জে এ অঞ্চলের সব অসমাপ্ত উন্নয়ন কাজ সমাপ্ত করতে চেষ্টা করব। সালমা ইসলাম বলেন, আপনারা জানেন, আমার কাছে কোনো সমস্যা বা বিপদে পড়ে যেতে চাইলে কারো মাধ্যমে যেতে হয় না। আমার মোবাইলে সব শ্রেণি-পেশার মানুষ ফোন করে কথা বলতে পারেন। এ সময় তিনি আরও বলেন, আমার সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সার্বিক সহায়তায় দোহার-নবাবগঞ্জকে শতভাগ বিদ্যুতায়িত এলাকা হিসেবে ঘোষণা করা হয়। আগামী দিনে লাঙ্গল প্রতীকে আপনাদের ভোটে এমপি নির্বাচিত হলে, ভূমিহীন ও গৃহহীন মানুষের কল্যাণে কাজ করব। এছাড়া হতদরিদ্র, অসহায় মানুষের উন্নয়নে কাজ করব। এছাড়া কৈলাইল ইউনিয়নের বিভিন্ন স্কুলে কম্পিউটার ল্যাব স্থাপনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের অনলাইনে লেখাপড়া করার পাশাপাশি বিভিন্ন কোর্স করার সুযোগ করে দেওয়া হবে। প্রতিটি ইউনিয়নে খেলাধুলার উন্নয়নে একটি করে মিনি খেলার মাঠ নির্মাণের চেষ্টা করা হবে সরকারিভাবে। সালমা ইসলাম এ সময় আরও বলেন, নবাবগঞ্জে ফায়ার সার্ভিসের একটি সাবস্টেশন স্থাপন করে অগ্নিকাণ্ডের নিরাপদ ব্যবস্থা করার চেষ্টা করা হবে। যাতে যেকোনো দুর্যোগ মোকাবেলায় দ্রুত সহায়তা পাওয়া যায়। আমি নির্বাচিত হলে প্রথমেই গ্যাসলাইনের বিষয়ে চেষ্টা চালাব। আপনারা যদি আমার পাশে থাকেন, আমাকে লাঙ্গল প্রতীকে ভোট দিয়ে এমপি নির্বাচিত করে কাজ করার সুযোগ দেন। এ সময় নবাবগঞ্জ উপজেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি জুয়েল আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক খলিলুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক বোরহান উদ্দিন, জাতীয় পার্টির নেতা আসাদুজ্জামান চৌধুরী, আইনুল হোসেন চৌধুরী, মহসীন মিয়া, ফরিদ হোসেন, মো. বাবু, মো. জিয়া উদ্দিন খান, সাওকাত হোসেন মোল্লা, ইয়াসিন রবিন, আজিজুর রহমান, গিয়াস উদ্দিন, মো. জুয়েল রানাসহ উপজেলা জাতীয় পার্টি, মহিলা পার্টি ও ছাত্র সমাজের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা সালমা ইসলামের সঙ্গে নির্বাচনি সভায় উপস্থিত ছিলেন। এদিকে নির্বাচনি প্রচারণার শেষলগ্নে ব্যস্ত সময় পার করছেন ঢাকা-১ আসনের সব প্রার্থী। লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। এ দিন তিনি চুড়াইনের মরিচপট্টি ও দোহার পৌরসভার খাড়াকান্দা হরিসভায় হিন্দু সম্প্রদায়ের একটি অনুষ্ঠানে যোগদান করেন। উপস্থিত নারী-পুরুষের কাছে তিনি উন্নয়ন ও সম্প্রীতির স্বার্থে লাঙ্গলে ভোট দিতে আহবান জানান।