সুষ্ঠু ভোট ‘দৃশ্যমান’ করতে চায় ইসি

প্রকাশিতঃ জানুয়ারী ৫, ২০২৪ | ১০:৫৫ পূর্বাহ্ন
অনলাইন নিউজ ডেক্স

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সুষ্ঠু ভোটগ্রহণ দৃশ্যমান করা এবং ফলাফল প্রকাশ পর্যন্ত পরিবেশ শান্ত রাখার ওপর জোর দিচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ভোটাররা যাতে স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোটকেন্দ্রে যান, সেটাও ইসির অন্যতম প্রধান লক্ষ্য। এসব লক্ষ্যে নির্বাচন কমিশন থেকে বেশকিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। নির্বাচন বর্জনকারী দলগুলোর সম্ভাব্য কার্যক্রম সম্পর্কেও খোঁজখবর রাখতে গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে বলা হয়েছে। মাঠ পর্যায়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, নির্বাহী ও জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটদের কার্যক্রমও দৃশ্যমান রাখতে বলা হয়েছে। আচরণবিধি লঙ্ঘনের ঘটনায় একদিনেই ৪০টির বেশি মামলা দায়েরের সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন। এর বেশির ভাগ মামলাই আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও তাদের কর্মী-সমর্থকদের বিরুদ্ধে। এ নির্বাচনে এটাই প্রথম একসঙ্গে এতসংখ্যক মামলা দায়েরের সিদ্ধান্ত হলো। এছাড়া আজ শুক্রবার সারা দেশে ৬৫৩ জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মাঠে নামছেন। যে কোনো অপরাধ দেখলেই তাদের তাৎক্ষণিক বিচারের মাধ্যমে (সামারি ট্রায়াল) দোষীকে সাজা দিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে বলা হয়েছে। নির্বাচন নিয়ে যাতে প্রশ্ন না ওঠে এবং গ্রহণযোগ্যতা বাড়াতে দুর্গম ও চরাঞ্চল এলাকায় অবস্থিত প্রায় তিন হাজার ভোটকেন্দ্রে ভোটের আগের দিন শনিবার ব্যালট পাঠানো হবে। বাকি ৩৯ হাজারের বেশি কেন্দ্রে ভোটের দিন সকালে ব্যালট পেপার যাবে। ইসি সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। আরও জানা যায়, নির্বাচনে ভোটগ্রহণে উদ্বুদ্ধ করতে ব্যাপক প্রচার চালাচ্ছে ইসি। ভোটারদের যাতায়াতের সুবিধার্থে বিগত নির্বাচনে যানবাহনের ওপর যে ধরনের নিষেধাজ্ঞা ছিল, এবার তা অনেকটাই শিথিল করা হয়েছে। ব্যক্তিগত গাড়ি নিষেধাজ্ঞার বাইরে রাখা হয়েছে। বিদেশি পর্যবেক্ষক ও সাংবাদিকদের নির্বাচনের প্রস্তুতি সম্পর্কে বৃহস্পতিবার ব্রিফ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। যদিও ওই ব্রিফিংয়ে অনেক কূটনীতিক অংশ নেননি। এদিন রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে একটি মিডিয়া সেলও উদ্বোধন করা হয়েছে। কূটনীতিকদের সঙ্গে রাজধানীর একটি হোটেলে বৃহস্পতিবার রুদ্ধদ্বার বৈঠকেও সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল নির্বাচন গ্রহণযোগ্য করতে পদক্ষেপ নেওয়ার কথা তাদের জানান। একই সঙ্গে বিএনপি যেন নির্বাচন প্রতিহতের কর্মসূচি না দেয়, সে বিষয়েও কথা বলেন। সিইসি তার বক্তব্যে বলেন, আমরা আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি নির্বাচন যাতে অবাধ, সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও অংশগ্রহণমূলক হয়। নির্বাচন প্রক্রিয়া যতদূর সম্ভব স্বচ্ছ আছে। আমরা আশা করি, নির্বাচন ও ফলাফল সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হবে। ওই বৈঠকে সিইসি বলেন, যেসব দল নির্বাচন বয়কট করছে, তারা যেন শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচনের বিরুদ্ধে প্রচার চালায়। তারা যেন নির্বাচন প্রতিহত না করে এবং ভোটারদের ভোট দেওয়া থেকে বিরত না রাখে। নির্বাচনের সব ধরনের প্রস্তুতি শেষ পর্যায়ে রয়েছে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ। বৃহস্পতিবার তিনি বলেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য করাই নির্বাচন কমিশনের লক্ষ্য। এজন্য নির্বাচনের এখন পর্যন্ত যে ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া দরকার, এর সবই নেওয়া হয়েছে। মাঠ পর্যায়ে ব্যালট পেপারও পাঠানো হয়েছে। শেষ সময়ের প্রস্তুতিমূলক কাজগুলো খতিয়ে দেখা হচ্ছে, যাতে কোনো ধরনের দুর্বলতা বা ত্রুটি না থাকে। ১৫ নভেম্বর দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফশিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। আজ সকাল ৮টায় আনুষ্ঠানিক প্রচার শেষ হচ্ছে। রোববার এ নির্বাচনে ২৯৯টি আসনে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। একজন বৈধ প্রার্থী মারা যাওয়ায় নওগাঁও-২ আসনের ভোট বাতিল করা হয়েছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বৃহস্পতিবার জানিয়েছেন, এ নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ৮ লাখ সদস্য মাঠে রয়েছেন। তাদের পাশাপাশি তিন হাজার ম্যাজিস্ট্রেটও রয়েছেন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টিসহ ২৮টি রাজনৈতিক দল অংশ নিয়েছে। ইসির হিসাবে বর্তমানে ১৯৭০ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন। তাদের মধ্যে ৪৩৬ জনই স্বতন্ত্র প্রার্থী। আওয়ামী লীগের প্রার্থী রয়েছেন ২৬৬টি আসনে। যদিও অনেক আসনে নির্বাচন থেকে বেশ কয়েকজন প্রার্থী সরে গেছেন। তারা নির্ধারিত সময়ে প্রার্থিতা প্রত্যাহার না করায় ব্যালটে নাম থেকে যাচ্ছে। বিএনপিসহ ১৬টি রাজনৈতিক দল নির্বাচন বর্জন করেছে। ভোটগ্রহণ সামনে রেখে বিএনপি শনি ও রোবাবর হরতাল ডেকেছে। ইসির কর্মকর্তারা জানান, ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপিসহ সব দল অংশ নিয়েছিল। তখন একধরনের চ্যালেঞ্জ ছিল, এবারের নির্বাচনে বিএনপিসহ কয়েকটি দল অংশ না নেওয়ায় আরেক ধরনের চ্যালেঞ্জ রয়েছে। বুধবার রাতে নির্বাচন ভবনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোর শীর্ষ কর্মকর্তাদের বৈঠকে আসন্ন নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার ক্ষেত্রে বেশকিছু চ্যালেঞ্জের কথা আলোচনা হয়। ওই বৈঠকে সশস্ত্র বাহিনী, পুলিশ ও র‌্যাবের গোয়েন্দা সদস্যদের তৎপরতা জোরদার করার নির্দেশনা দেওয়া হয়। পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের কার্যক্রম দৃশ্যমান করার জন্য বলা হয়েছে। যদিও বৈঠকের পর নির্বাচন কমিশন সচিব মো. জাহাংগীর আলম নির্বাচনে বড় ধরনের নাশকতার শঙ্কা নেই বলে জানান। একদিনেই ৪০টির বেশি মামলা : ইসি সূত্রে জানা গেছে, বিগত দিনে আচরণবিধি লঙ্ঘনের প্রমাণ পাওয়া একদিনেই ৪০টির বেশি ঘটনায় মামলা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। বৃহস্পতিবার রাতে বেশ কয়েকটি নির্বাচনি আসনে মামলা দায়ের করতে চিঠি পাঠিয়েছে ইসি। সবচেয়ে বেশি ১২টি মামলা হচ্ছে রাজশাহী অঞ্চলে। যাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের সিদ্ধান্ত হয়েছে তাদের মধ্যে রয়েছেন রাজশাহী-৪ আসনের আওয়ামী লীগের প্রার্থী মো. আবুল কালাম আজাদ। তার বিরুদ্ধে আরপিওর ৭৩ ও ৮৪ ধারা লঙ্ঘনের দায়ে মামলা করতে সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তাকে নির্দেশনা দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। আরেকটি মামলায় আসামি করা হচ্ছে পিরোজপুরের ভান্ডারিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান মিরাজুল ইসলাম মিরাজকে। পিরোজপুর-২ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. মহিউদ্দীন মহারাজের উপস্থিতিতে ২৪ ডিসেম্বর কুরুচিপূর্ণ, অশালীন ও উসকানিমূলক বক্তব্য দেওয়ার অপরাধে তার বিরুদ্ধে আরপিওর ৭৩ ধারা লঙ্ঘনের অভিযোগে এ মামলা করতে ভান্ডারিয়া উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তাকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। একইভাবে অন্যদের বিরুদ্ধে মামলা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ইসির কর্মকর্তারা জানান, ৩ জানুয়ারি পর্যন্ত আচরণবিধি লঙ্ঘনের ঘটনায় ৫৮৯টি শোকজ নোটিশ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ৩৮৪টি ঘটনার তদন্ত করে নির্বাচন কমিশনে প্রতিবেদন পাঠিয়েছে কমিটি। এর মধ্যে ২৯১টি ঘটনায় সত্যতা পাওয়া গেছে। ৯৩টি অভিযোগের সত্যতা পায়নি কমিটি। ওইদিন পর্যন্ত ১২০টি প্রতিবেদনের ওপর সিদ্ধান্ত দিয়েছে ইসি। বাকি প্রতিবেদন সিদ্ধান্তের জন্য অপেক্ষমাণ রয়েছে। তিন হাজার কেন্দ্রে আগের দিন যাবে ব্যালট : জানা যায়, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রায় তিন হাজার ভোটকেন্দ্রে ভোটের আগের দিন শনিবার ব্যালট পেপার পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। ইসির কর্মকর্তারা জানান, দুর্গম ও চরাঞ্চল বিবেচনায় এই তিন হাজার ভোটকেন্দ্র নির্ধারণ করেছে স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশ। বাকি ৩৯ হাজারের বেশি ভোটকেন্দ্রে ভোটের দিন সকালে ব্যালট পেপার পাঠানো হবে। এ নির্বাচনে মোট ভোটকেন্দ্র ৪২ হাজার ১৪৯ জন। আর ভোটার সংখ্যা প্রায় ১১ কোটি ৯৭ লাখ। ইসির কর্মকর্তারা আরও জানান, গত নির্বাচনে আগের রাতে ব্যালটে সিল মারার অভিযোগ রয়েছে। এবার যাতে ওই অভিযোগ না ওঠে, সেই সতর্কতা থেকে ভোটের দিন সকালে ব্যালট পেপার পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয় ইসি।