বাংলাদেশে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে গতকাল রোববার। আওয়ামী লীগসহ ২৮টি রাজনৈতিক দল নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছে। তবে একতরফা নির্বাচনের অভিযোগ তুলে শুরু থেকেই নির্বাচন বর্জন করে অন্যতম বিরোধী দল বিএনপিসহ বেশ কয়েকটি দল। নানা প্রতিবাদ-কর্মসূচি, অসহযোগ আন্দোলনসহ সবশেষ ভোট বর্জনের দাবিতে দেশব্যাপী ৪৮ ঘণ্টার হরতাল কর্মসূচি পালন করেছে দলগুলো। জাতীয় সংসদের ৩০০ আসনের বিপরীতে এবার ২৯৯ আসনে ভোটগ্রহণ হয়েছে। এর মধ্যে আওয়ামী লীগ নওগাঁ-২ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী আমিনুল ইসলামের হঠাৎ মৃত্যুতে সেখানে ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয়। নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ পেয়েছে ২২৪ আসন, স্বতন্ত্র প্রার্থী পেয়েছে ৬২টি এবং জাতীয় পার্টি পেয়েছে ১১ আসন। প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন এক হাজার ৯৬৯ প্রার্থী। সারা দেশে ভোটকেন্দ্র ৪২ হাজার ২৪টি। এবার ভোট হয়েছে ব্যালট পেপারে, ইভিএমে নয়। অন্যদিকে নির্বাচন ঘিরে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সশস্ত্র বাহিনীসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, বিশেষ বাহিনী ও আনসার-ভিডিপি সদস্যদের মোতায়েন করা হলেও বিক্ষিপ্ত সহিংসতা, অনিয়মের ঘটনা ঘটেছে। দক্ষিণ এশিয়া তথা গোটা এশিয়া উদীয়মান শক্তি হিসেবে বরাবরের মতো বাংলাদেশের নির্বাচন গুরুত্ব পেয়েছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোতে। ভোটগ্রহণের শুরু থেকেই সংবাদ প্রকাশ করছে প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যমগুলো। বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে আলজাজিরা সরাসরি লাইফ আপডেট দিয়েছে। ‘বিরোধী দলের ভোট বর্জনের মধ্যেই বাংলাদেশে চলছে ভোটগ্রহণ’ শিরোনামের প্রতিবেদনে বলা হয়, নির্বাচনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ টানা চতুর্থ এবং সব মিলিয়ে পঞ্চম মেয়াদে জয়লাভ করতে যাচ্ছে। সেই সঙ্গে একতরফা নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগও রয়েছে। প্রতিবেদনটিতে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকদের বরাতে বলা হয়েছে, যে (বিতর্কিত ও একতরফা) নির্বাচন আয়োজন করা হচ্ছে, তা পশ্চিমা অংশীদারদের সঙ্গে বাংলাদেশের কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ককে বিশেষভাবে প্রভাবিত করতে পারে, বিশেষত যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম ফ্রান্স২৪, দ্য উইক, আইরিশ এক্সামিনারে প্রকাশিত খবরের শিরোনামেও বিরোধী দলগুলোর ভোট বর্জনের বিষয়টিকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। ফ্রান্স২৪-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভোট বর্জনের কারণে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থীরা অনেক দুর্বল প্রার্থী ও প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখোমুখি হচ্ছে। দ্য উইকের শিরোনামে বলা হয়েছে, টানা চতুর্থ মেয়াদে শেখ হাসিনার সম্ভাব্য বিজয় আঞ্চলিক রাজনীতিতে প্রভাব ফেলবে। এ ছাড়া প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম এএফপির শিরোনামে বলা হয়েছে, বিরোধী দল ছাড়া বাংলাদেশে ভোট হচ্ছে। আর মার্কিন প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম সিএনএনের শিরোনামে গুরুত্ব পেয়েছে বিরোধী দলের ভোট বর্জন। এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শেখ হাসিনাকে পঞ্চমবারের মতো ক্ষমতায় থাকার নিশ্চয়তা দেওয়া নির্বাচনে ভোট গ্রহণ শেষ হয়েছে। এখন ভোট গণনা করছেন নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা। এদিকে দক্ষিণ এশিয়ায় ভূরাজনীতিতে সবচেয়ে প্রভাবশালী দেশ ভারতের গণমাধ্যম আনন্দবাজার এক প্রতিবেদনের শিরোনামে বলেছে— সংঘাতময় ও উদ্বেগজনক পরিবেশে নির্বাচন চলছে বাংলাদেশে। আরেকটি গণমাধ্যম মিন্ট ‘বাংলাদেশের নির্বাচন: ভারতের জন্য শেখ হাসিনার পুনর্নির্বাচনের মানে কী?’ এমন শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। দ্য গার্ডিয়ান শিরোনাম করেছে, বাংলাদেশে নির্বাচনের মধ্য দিয়ে পঞ্চমবারের মতো ক্ষমতায় আসছেন শেখ হাসিনা। প্রভাবশালী মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনের শিরোনামে বলা হয়েছে, বিরোধীদের বয়কটের পরও বাংলাদেশে চলছে ভোটগ্রহণ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় রাখতেই বাংলাদেশে ভোটার সংখ্যা কম। আরেক প্রভাবশালী মার্কিন গণমাধ্যম দ্য নিউইয়র্ক টাইমসের শিরোনাম—‘দমন-পীড়ন ও বর্জনে বিপর্যস্ত বাংলাদেশের নির্বাচন, ভোটগ্রহণ চলছে’। সংবাদমাধ্যমটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নির্বাচনের ফল কী হবে, তা আগেই অনুমান করা যাচ্ছে। মোটাদাগে বলতে গেলে, এটি একটি একতরফা নির্বাচন। ভোট নিয়ে মানুষের মধ্যে উৎসাহ-উদ্দীপনা কম দেখা গেছে। ওয়াশিংটন পোস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নির্বাচনের আগে অন্তত ১৮টি নাশকতার ঘটনা ঘটেছে। তবে নির্বাচনের দিন পরিস্থিতি বলতে গেলে শান্তিপূর্ণ ছিল। মোটামুটি ৪০ শতাংশ ভোট পড়েছে বলে প্রাথমিকভাবে দাবি করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি)। প্রধান বিরোধীদের নির্বাচন বর্জনের কারণে টানা চার মেয়াদে আওয়ামী লীগের ক্ষমতায় থাকার পথ সুগম হয়েছে। জাপানের সংবাদমাধ্যম নিক্কেই এশিয়ায় ‘বাংলাদেশে উত্তেজনাপূর্ণ ভোটাভুটির পর এবার ফল প্রকাশের পালা, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সমালোচনা’ শিরোনামে খবরে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে এবারের নির্বাচনই কেবল ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েনি। ২০১৪ সালের নির্বাচনও বর্জন করেছিল বিএনপি। ওই নির্বাচনে ১৫৩ আসনে বিনাভোটে জিতে সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছিল আওয়ামী লীগ। সংযুক্ত আরব আমিরাতভিত্তিক সংবাদমাধ্যম খালিজ টাইমস জানিয়েছে, প্রধান বিরোধী দলের বয়কট এবং ভোটের আগে সহিংসতার মধ্যেই সাধারণ নির্বাচনে টানা চতুর্থ এবং সামগ্রিকভাবে পঞ্চম মেয়াদে জয়ী হতে যাচ্ছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তুরস্কভিত্তিক বার্তা সংস্থা আনাদোলুর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে টানা ৪র্থ মেয়াদে জয়ী হতে চলেছেন। সৌদি আরবভিত্তিক গণমাধ্যম আরব নিউজ বলেছে, বিরোধীদের বয়কট করা নির্বাচনে ভোটারের কম উপস্থিতি দেখল বাংলাদেশ।