শেষপর্যন্ত স্বতন্ত্র প্রার্থী রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগ নেতা অধ্যক্ষ শফিকুর রহমান বাদশার কাছে ধরাশায়ী হয়েছেন বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ও ১৪ দলের প্রার্থী ফজলে হোসেন বাদশা। বিশাল ভোটের ব্যবধানে বাদশা হেরেছেন মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি অধ্যক্ষ বাদশার কাছে। ফলে নৌকা পেয়েও ভরাডুবি হয়েছে রাজশাহী-২ (সদর) আসনে টানা তিনবারের এমপি ফজলে হোসেন বাদশার। নৌকার টিকিটেই তিনি ২০০৮ সাল থেকে এমপি ছিলেন; কিন্তু জনবিচ্ছিন্নতা, স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে বৈরিতা, নিজ দলের নেতাকর্মী সংকট, সরকারি প্রকল্পে দুর্নীতি-লোপাট এবং তরুণ ভোটারদের আকৃষ্ট করার মতো দলীয় এজেন্ডা না থাকায় হেরেছেন তিনি। ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা গেছে, এমন কি নিজের কেন্দ্রেও জিততে পারেননি ফজলে হোসেন বাদশা। রাজশাহী-২ (সদর) আসনের এবারের ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা গেছে, নৌকা প্রতীক নিয়ে বর্তমান এমপি ওয়ার্কার্স পার্টির নেতা ফজলে হোসেন বাদশা পেয়েছেন মাত্র ৩১ হাজার ৪৬০ ভোট। আর স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি অধ্যক্ষ শফিকুর রহমান বাদশা কাঁচি প্রতীকে পেয়েছেন ৫৫ হাজার ১৫৬ ভোট। ফলে প্রায় ২৪ হাজার ভোটের ব্যবধানে হেরেছেন ফজলে হোসেন বাদশা এমপি। তার নিজ কেন্দ্র জুলফিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের মোট ভোটার দুই হাজার ১৬০ জন। এমধ্যে ভোট পড়েছে মাত্র ৫৩৫টি। বাতিল হয়েছে ১২টি। স্বতন্ত্র প্রার্থী শফিকুর রহমান বাদশা পেয়েছেন ৩৪০ ভোট। আর ফজলে হোসেন বাদশা পেয়েছেন মাত্র ১৭৩ ভোট। যদিও রাজশাহীর প্রধান এ আসনটিতে ভোট পড়েছে মাত্র ২০ ভাগ। জানা গেছে, রাজশাহীর ৬টি সংসদীয় আসনের মধ্যে বিভিন্ন কারণে গুরুত্বপূর্ণ সদর (রাজশাহী-২) আসন। এ আসনটি সিটি করপোরেশন এলাকার মধ্যেই সীমাবদ্ধ। আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের কারণে এখানে আওয়ামী লীগ সাংগঠনিকভাবে বেশ শক্তিশালী। নেতাকর্মীদের মতে, ফজলে হোসেন বাদশার ওয়ার্কার্স পার্টির কোনো ভোটব্যাংক নেই রাজশাহীতে। কেবলমাত্র দলের বড় একটি পদে থাকার কারণেই জোটের বিশেষ বিবেচনায় আওয়ামী লীগের ভোটে ১৫ বছর ধরে রাজশাহীর মতো গুরুত্বপূর্ণ আসনের এমপি ছিলেন তিনি। অথচ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে বৈরিতায় জড়িয়েছিলেন তিনি বারবার। সিটি মেয়র খায়রুজ্জামান লিটনের সঙ্গে প্রকাশ্যে দ্বন্দ্বে লিপ্ত হয়েছেন। এবার নৌকা প্রতীক পেয়েও লিটনের সঙ্গে দেখা পর্যন্ত করতে যাননি বাদশা। এসব কারণে বাদশার সঙ্গে আওয়ামী লীগের চরম বৈরিতা সৃষ্টি হয়। এজন্য বাদশাকে নৌকা থেকে নামাতে ভোটের আগে মহানগর আওয়ামী লীগ আনুষ্ঠানিকভাবেই মাঠে সোচ্চার ছিল। দলের নেতাকর্মীরা স্বতন্ত্র প্রার্থী শফিকুর রহমান বাদশাকে জেতাতে মরিয়া ছিলেন ভোটের মাঠে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ওয়ার্কার্স পার্টির যুব ও ছাত্রসংগঠনগুলো এখন সারাদেশে বিলুপ্তপ্রায়। এক সময় বাম আদর্শের চর্চা হওয়ায় তরুণ প্রজন্ম বেশ উজ্জীবিত হয়েছিল সংগঠনে। কিন্তু এখন সেই চর্চা আর নেই। তরুণদের স্বপ্ন জাগানোর মতো কোনো কার্যক্রমও নেই। ফলে নামেমাত্র রাজনৈতিক দলে পরিণত হয়েছে ওয়ার্কার্স পার্টি। সাধারণ মানুষের কাছে জনপ্রিয়তা পায়নি। এক ব্যক্তিকে ঘিরে কখনো একটি রাজনৈতিক দল চলকে পারে না। ফলে নিজস্ব নেতাকর্মীও হারিয়েছে ওয়ার্কার্স পার্টি। তিনবার এমপি হলেও জনবিচ্ছিন্ন ছিলেন বাদশা এমন অভিযোগ আগেই উঠে তার বিরুদ্ধে। বার্ধক্যজনিতসহ নানা দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হওয়ার কারণে সাধারণ মানুষের সাথে তেমন মিশতেন না। পারিবারিকভাবে ও ঘরোয়া পরিবেশে দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়েই ছিলেন। এ কারণে নিজের পায়ে ভর করে ভোটে সফল হতে পারেননি বাদশা। ভোটে পরাজয়ের কারণ জানতে সোমবার দুপুরে ফজলে হোসেন বাদশার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি এখনই প্রতিক্রিয়া দিতে চাই না। একটু অপেক্ষা করি। পরে প্রতিক্রিয়া জানাব। রাজশাহী মহানগর ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক দেবাশিস প্রামাণিক দেবু বলেন, আওয়ামী লীগের সঙ্গে আমাদের ১৪ দলের জোট ছিল কেন্দ্রীয় ও স্থানীয়ভাবে। জোটবদ্ধভাবেই আমরা অতীতে নির্বাচন করে এসেছি; কিন্তু এবার মহানগর আওয়ামী লীগের একটা অংশ ষড়যন্ত্র করে ১৪ দলের জায়গাটা ক্ষতিগ্রস্ত করল। এটা দুঃখজনক।