ইরান-পাকিস্তান সংঘাত ছড়িয়ে পড়ার শঙ্কা

প্রকাশিতঃ জানুয়ারী ১৯, ২০২৪ | ৯:০২ অপরাহ্ন
অনলাইন নিউজ ডেক্স

ইরান চলতি সপ্তাহে তিনটি ভিন্ন ভিন্ন দেশ ইরাক, সিরিয়া ও পাকিস্তানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। সেই সঙ্গে ইরানসমর্থিত বিভিন্ন মিলিশিয়া গ্রুপ যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমাদের বিভিন্ন অবস্থানে হামলা করে যাচ্ছে। একই সময়ে চলছে ইসরাইলের সঙ্গে হামাসের লড়াই৷ উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে, এ সংঘর্ষ মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে এমনকি তার বাইরেও ছড়িয়ে পড়তে পারে। ইরাক, সিরিয়া ও পাকিস্তানে ইরানের সব হামলার পেছনেই ছিল নিজেদের মাটিতে বা নিজেদের স্বার্থ আক্রান্ত হওয়ার জেরে প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা। গত মঙ্গলবার তেহরান সিরিয়ায় ইসলামিক স্টেটের ঘাঁটি লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার কথা জানায়, যা ছিল গত ৩ জানুয়ারিতে ইরানের প্রভাবশালী নেতা কাসেম সোলাইমানির মৃত্যুবার্ষিকীর ভিড়ে আত্মঘাতী হামলার প্রতিশোধ। সেই হামলার দায় স্বীকার করেছিল ইসলামিক স্টেট। আরব বিশ্বজুড়ে গড়ে ওঠা ইরানের প্রক্সি বাহিনীর মূল কারিগর সোলাইমানি ২০২০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ড্রোন হামলায় নিহত হন। ইরান একই দিন ইরাকে হামলা চালানোর কথাও জানায়। তাদের দাবি, তারা ইরাকে অবস্থিত ইসরাইলের গোয়েন্দা বাহিনী মোসাদের কার্যালয়ে হামলা চালিয়েছে, যদিও ইরাক সরকার এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে। গাজা যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর ইসরাইল লেবানন ও সিরিয়ায় হামলা চালিয়ে হিজবুল্লাহ এবং ইরানের রেভোল্যুশনারি গার্ডের গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের হত্যা করে। সিরিয়া ও ইরাকে হামলার পরের দিন পাকিস্তানের বেলুচিস্তানে জঙ্গি সংগঠন জৈশ আল-আদলের দুটি ঘাঁটি লক্ষ্য করে হামলা চালায় ইরান। প্রতিশোধ নিতে পাকিস্তান বৃহস্পতিবার ভোরে ইরানের দক্ষিণাঞ্চলে জঙ্গি আস্তানার কথা বলে হামলা চালায়। সেই হামলায় নারী-শিশুসহ নয়জন নিহত হন। যেসব অঞ্চলে ইরানের প্রক্সি বাহিনী সোলাইমানির নেতৃত্বে আরব বিশ্বজুড়ে প্রক্সি বাহিনীর বৃহত্তর একটি নেটওয়ার্ক গড়ে তোলে ইরান। ২০০৩ সালে ইরাকে যুক্তরাষ্ট্রের অভিযানের পর পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে বাহিনীগুলো আরো শক্তিশালী হয়ে ওঠে। অবশ্য ইরান ওইসব বাহিনীর সঙ্গে নিজেদের সংশ্লিষ্টতার কথা অস্বীকার করে। তারা শুধুমাত্র ওই বাহিনীগুলোর ইসরাইল ও যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী অবস্থানকে সমর্থন করে। গাজা, ইরাক, সিরিয়া, লেবানন, ইয়েমেন সব দেশেই ইরানের ওই প্রক্সি বাহিনী সক্রিয় আছে এবং লড়াই করে যাচ্ছে। ইসরাইল-গাজা যুদ্ধ কি হামলার পেছনের কারণ ৭ অক্টোবর গাজা যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর ইরান ও তাদের প্রক্সি বাহিনী যেসব হামলা চালিয়েছে তার প্রায় সবই গাজায় ইসরাইলের হামলার প্রতিক্রিয়া বলে দাবি করেছে। হুথি, হিজবুল্লাহ বা অন্যান্য দলগুলো ইঙ্গিত দিয়েছে, ইসরাইল ফিলিস্তিনিদের ওপর হামলা বন্ধ করলেই কেবল তারাও আক্রমণ বন্ধ করবে। তেহরান ও প্রক্সি বাহিনীর লক্ষ্য কি এক ইরান ও তাদের প্রক্সি বাহিনীর লক্ষ্য বলতে গেলে একই। তা হলো, গাজায় ইসরাইলের হামলা বন্ধ করা এবং মার্কিন বাহিনীকে ওই অঞ্চল থেকে পুরোপুরি তাড়িয়ে দেওয়া। তবে তাদের প্রত্যেকেরই নিজস্ব কিছু স্বার্থও রয়েছে। হিজবুল্লাহ লেবাননের নেতৃত্ব দিতে চায়, হুথি বিদ্রোহীরা ইয়েমেনে ক্ষমতায় যেতে চায়, পিএমএফ চায় ইরাকে আরও শক্তিশালী হয়ে উঠতে। আর হামাস ৭ অক্টোবর যা করেছে, সেটা শুধু শত্রুদের নয়, বরং তাদের মিত্রদেরও চমকে দিয়েছে। ইরানের ভেতরে যা চলছে ২০২২ ও ২০২৩ সালে ইরানজুড়ে বড় ধরনের বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছিল। ইরান সরকার নিষ্ঠুরভাবে সেই বিক্ষোভ দমন করে। তবে কয়েকটি সুন্নি জঙ্গি সংগঠন যেভাবে ইরানের ভেতর হামলা চালিয়েছে তাতে তেহরান সরকার দেশে তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারছে কিনা- দেশটির জনগণের মনে এ প্রশ্ন উঠেছে৷ রাশিয়ার ভূমিকা গত কয়েক বছরে রাশিয়া ও ইরান আরও ঘনিষ্ঠ হয়েছে। দুই দেশেরই ‘প্রধান শত্রু’ যুক্তরাষ্ট্র এবং ‘শত্রুর শত্রু বন্ধু’ নীতিতে তারা পরস্পরের পাশে দাঁড়াচ্ছে। ইরান-পাকিস্তান সর্বশেষ সংঘর্ষের বিষয়ে রাশিয়া উভয় দেশকে সতর্ক করে কূটনৈতিকভাবে সংকট সমাধান করার আহ্বান জানিয়েছে। পরিস্থিতি কি আরও উত্তপ্ত হবে পশ্চিমা ও আঞ্চলিক বিশ্লেষকদের একাংশ মনে করেন, তেহরান যুক্তরাষ্ট্র বা ইসরাইলের সঙ্গে সরাসরি সংঘর্ষে জড়াবে না, যদিও তাদের প্রক্সি বাহিনী ওই অঞ্চলে নানা শত্রুর লক্ষ্যে হামলা চালিয়ে যাবে। এক্ষেত্রে একটিমাত্র ভুলও বড় বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে।