এবার আমনের বাম্পার ফলন হয়েছে; সরকারি গুদামে চালের মজুতও পর্যাপ্ত; বাজারে পণ্যটির সরবরাহেও কোনো ঘাটতি নেই। তারপরও ভরা মৌসুমে চালের বাজারে চলছে অস্থিরতা, যা মেনে নেওয়া যায় না। কারসাজি করেই বাজারে অস্থিরতা সৃষ্টি করা হয়েছে। এ প্রবণতা নতুন নয়। প্রশ্ন হলো, যারা কারসাজি করে বাজারে অস্থিরতা সৃষ্টি করে, তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হয় না কেন? পরিস্থিতি এমন যে, গরিবের মোটা চালও এখন চড়া দামে কিনতে হচ্ছে। এদিকে মূল্য নিয়ন্ত্রণে খাদ্যমন্ত্রী কঠোর নির্দেশ দিলেও বাজারে এক ধরনের দায়সারা তদারকি চলছে। চাল নিয়ে মিলারদের চালবাজিতে ধরাশায়ী হচ্ছেন ভোক্তা। ধান-চালের অবৈধ মজুতবিরোধী অভিযানও চলছে। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের চলমান অভিযানে ভোক্তারা কী সুফল পাবে, এটাও এক প্রশ্ন। এটা যেন লোকদেখানো অভিযান না হয়, তা নিশ্চিত করা দরকার। অতীতে আমরা লক্ষ করেছি, যখন অবৈধ মজুতবিরোধী অভিযান শুরু হয়, তখন সংশ্লিষ্ট পণ্যটির সরবরাহে সংকট আরও তীব্র আকার ধারণ করে। বস্তুত এমন পরিস্থিতিতে কর্তৃপক্ষের আন্তরিকতাই প্রশ্নবিদ্ধ হয়। চালের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি রোধে করণীয় ঠিক করতে কয়েকদিন আগে মিল মালিক, আড়তদার ও পাইকারি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনার পর খাদ্যমন্ত্রী আশ্বস্ত করেছেন, হঠাৎ করে অস্থির হয়ে ওঠা চালের বাজার আগামী কয়েকদিনের মধ্যে আগের অবস্থায় ফিরবে। চালের উৎপাদন, মজুত ও সরবরাহে ঘাটতি নেই। এমন পরিস্থিতিতেও যদি কর্তৃপক্ষ বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে না পারে, তাহলে এর চেয়ে দুঃখজনক আর কিছু হতে পারে না। বস্তুত দেশের বাজারব্যবস্থা সিন্ডিকেটের হাতে জিম্মি হয়ে পড়েছে। অসৎ ব্যবসায়ীরা অসাধু পন্থা অবলম্বন করে অতি মুনাফা লুটছে। এ অবস্থায় কর্তৃপক্ষ কেবল দায়সারা নির্দেশ দিলে ভোক্তারা এর সুফল পাবে না। কেবল চাল নয়, গত কয়েক মাস ধরে প্রায় প্রতিটি নিত্যপণ্যের বাজারেই অস্থিরতা চলছে। গত তিন সপ্তাহে কিছু পণ্যের দাম আরেক দফা বেড়েছে। চালের দাম হঠাৎ বেড়ে যাওয়ার ঘটনায় বড় মিল মালিক ও করপোরেট কোম্পানিকে দায়ী করে আমদানির সুযোগ চেয়েছেন রাজধানীর পাইকারি ব্যবসায়ীরা। অতীতেও আমরা লক্ষ করেছি, বাজার অস্থিরতার ঘটনায় পরস্পরকে দোষারোপ করে বক্তব্য প্রদান করা হয়। ভোক্তারা বক্তব্য-বিবৃতি শুনতে আগ্রহী নয়। কেউ বাজারের শৃঙ্খলা নষ্ট করার চেষ্টা করলে তাকে সঙ্গে সঙ্গে আইনের আওতায় আনতে হবে। বাজারের অস্থিরতা রোধে যা যা করা দরকার, সবই করতে হবে।