চট্টগ্রামের সিএনজি ফুয়েলিং স্টেশনে প্রায় ৪০ ঘণ্টা পর গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিক হয়েছে। অনেক স্টেশনে বৃহস্পতিবার রাত থেকে সিরিয়ালে দাঁড়িয়ে শনিবার দুপুরের পর গ্যাস পান পরিবহণ চালকরা। সকালে গ্যাস সরবরাহ পেতে একটি স্টেশনে অপেক্ষমাণ চালকরা বিক্ষোভ শুরু করেন। তারা সড়ক অবরোধ করতে চাইলে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। অপরদিকে সকাল থেকে নগরীতে পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায় গ্যাসচালিত গণপরিবহণ। এতে ভোগান্তিতে পড়েন সাধারণ যাত্রীরা। পরিবহণ সংকটে অনেকে গন্তব্যে পৌঁছেন হেঁটে। বিকালের পর শুরু হয় ভাড়া নৈরাজ্য। দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়ে গ্যাস নেওয়ার মাশুল দিতে হয়েছে যাত্রীদের। গন্তব্যে পৌঁছতে তাদের গুনতে হয়েছে দ্বিগুণ ভাড়া। এদিকে গ্যাসলাইনে সরবরাহ বন্ধ থাকায় শনিবারও বাসবাড়িতে রান্না নিয়ে ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে। দ্বিতীয় দিনেও গ্যাস সংকটের সমাধান না হওয়ায় অনেকে বিকল্প ব্যবস্থা হিসাবে বৈদ্যুতিক চুলা ও গ্যাস সিলিন্ডার কেনেন। অনেকে রান্না করেন লাকড়ির চুলায়। বিকালের পর বাসাবাড়িতে গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিক হয়। বেলা সাড়ে ৩টায় নগরীর ফোর স্টার সিএনজি রি-ফুয়েলিং স্টেশনের ম্যানেজার মো. শাহাব উদ্দিন বলেন, বৃহস্পতিবার রাত ১০টা থেকে গাড়িতে গ্যাস দেওয়া বন্ধ হয়ে যায়। এরপর থেকে অনেক গাড়ি গ্যাসের জন্য সিরিয়ালে দাঁড়ায়। তারা গ্যাস পেয়েছে শনিবার দুপুর ২টায়। তিনি আরও বলেন, গ্যাস সরবরাহ শুরু হলেও চাপ তেমন নেই। একটি অটোরিকশায় সাধারণত ৮ লিটার গ্যাস দেওয়া যায়। কিন্তু চাপ কম থাকায় ৫ লিটারের মতো দেওয়া যাচ্ছে। বেলা সাড়ে ৩টার পর গ্যাসের চাপ স্বাভাবিক হয়েছে। কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (কেজিডিসিএল) কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, শুক্রবার রাত সাড়ে ১০টা থেকে পাইপলাইনে এলএনজি টার্মিনালের গ্যাস সরবরাহ শুরু হয়। কিন্তু চাপ অস্বাভাবিক কম। যেখানে ইদানীং নিয়মিত ২৫০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস পাওয়া যায়, সেখানে শনিবার বেলা ১১টা পর্যন্ত মাত্র ৭০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস পাওয়া গেছে। জানা গেছে, কক্সবাজারের মহেশখালীতে দুটি এলএনজি টার্মিনাল সচল থাকলে সেখান থেকে নিয়মিত ৭০০ থেকে ৮০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস পাওয়া যায়। অক্টোবরে একটি টার্মিনাল নিয়মিত সংস্কার কাজের জন্য সিঙ্গাপুরে নেওয়া হয়। এরপর একটি টার্মিনাল থেকে সরবরাহ ২৫০ মিলিয়ন ঘনফুটে নেমে আসে। সকালে নগরীর নয়াবাজার মোড়ে গাড়ির জন্য অপেক্ষমাণ মো. সোহানুর রহমান বলেন, দেওয়ানহাট যেতে ১ ঘণ্টা ধরে গাড়ির জন্য দাঁড়িয়ে আছি। কিন্তু প্রতিটি গাড়ি হালিশহর থেকে যাত্রী নিয়ে আসছে। সিট খালি না থাকায় দাঁড়াচ্ছে না। অফিসের দেরি হয়ে যাচ্ছে। তাই হেঁটেই যেতে হবে। গণপরিবহণ চালকদের বিক্ষোভ : ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকেও গ্যাস না পেয়ে বেলা ১১টায় বিক্ষোভ শুরু করেন অটোরিকশাচালকরা। নগরীর কোতোয়ালি থানার আটমার্সিং মোড়ে অবস্থিত ফোর স্টার সিএনজি রি-ফুয়েলিং স্টেশনে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় তারা সড়ক অবরোধের চেষ্টা করেন। খবর পেয়ে তাৎক্ষণিকভাবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে পুলিশ। কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এসএম ওবায়েদুল হক বলেন, গ্যাস না পেয়ে কয়েকজন চালক বিক্ষুব্ধ হয়েছিলেন। তারা সড়ক অবরোধ করার চেষ্টা করেছিলেন। তবে আমাদের মোবাইল টিম সেখানে গিয়ে তাদের শান্ত করে। সরেজমিন দেখা যায়, দীর্ঘ সময়েও গ্যাস না পেয়ে বেশ কয়েকজন চালক স্লোগান দিতে দিতে স্টেশনের সামনে সিআরবি অভিমুখী সড়কে জড়ো হন। এতে ওই সড়ক দিয়ে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। প্রায় ১৫ মিনিট পর পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। আবুল কাশেম নামের এক অটোরিকশাচালক বলেন, গ্যাস না থাকায় গত ২ দিন ধরে আমরা গাড়ি চালাতে পারছি না। আমাদের আয়-রোজগার বন্ধ হয়ে গেছে। যাদের টাকা-পয়সা আছে, তারা হোটেল থেকে রান্না করা খাবার কিনে খেতে পারছেন। কিন্তু আমাদের তো সে উপায়ও নেই। গ্যাস পাব ভেবে মালিকের কাছে থেকে গাড়ি নিয়ে বের হয়েছি। অথচ গ্যাস পেতেই দিনের অর্ধেক সময় চলে গেছে। মালিকের জমা কিভাবে পরিশোধ করব সে চিন্তায় আছি।