সরকারি খাতের সঞ্চয়পত্র ও সঞ্চয়বন্ড পর্যায়ক্রমে বন্ড মার্কেটে নিয়ে আসার সুপারিশ করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এতে বন্ড মার্কেটে বহুমুখী ও আকর্ষণীয় মুনাফার উপকরণের সরবরাহ বাড়বে। একই সঙ্গে সঞ্চয়পত্র ও সঞ্চয়বন্ডে বিনিয়োগকারী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানগুলো উপকৃত হবে। যে কোনো প্রয়োজনে সঞ্চয়ী উপকরণ বন্ড মার্কেটে বিক্রি করে টাকা নগদায়ন করতে পারবেন। একই সঙ্গে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রভিডেন্ট ফান্ডসহ নিরাপত্তা রয়েছে এমন সব তহবিল, পেনশন তহবিলও বন্ড মার্কেটে নিয়ে আসার প্রস্তাব করা হয়েছে। সোমবার প্রকাশিত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ‘সরকারি সিকিউরিটিজ প্রতিবেদন ২০২২-২৩’ শীর্ষক প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। প্রতি বছর কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ প্রতিবেদন প্রকাশ করে। তবে আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিলের (আইএমএফ) শর্তে এবার প্রতিবেদনকে আরও সমৃদ্ধ করা হয়েছে। সরকারি ঋণের বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত সংযোজন করা হয়েছে। আইএমএফের ঋণের একটি শর্ত ছিল সরকারি খাতের ঋণের পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন বার্ষিকভিত্তিতে প্রকাশ করা। এর আগে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বার্ষিক আর্থিক স্থিতিশীলতা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এতেও খেলাপি ঋণ নবায়নসহ এ সংক্রান্ত অনেক তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, সরকারের ঋণের জোগান এখনও ব্যাংক খাতনির্ভর। মোট ঋণের ৬২ শতাংশই নেওয়া হয় ব্যাংক খাত থেকে। আইএমএফ ব্যাংক খাত থেকে সরকারের ঋণ কমিয়ে বন্ড মার্কেটের মাধ্যমে ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান থেকে বেশি ঋণ নেওয়ার সুপারিশ করেছে। এটি করতে সরকার বন্ড মার্কেট উন্নয়ন করছে। বর্তমানে বন্ড মার্কেটে সরকারের বিভিন্ন ধরনের ট্রেজারি বিল ও বন্ড বেচাকেনা হচ্ছে। এগুলোর বেশির ভাগই ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বিমা কোম্পানিগুলোই বেচাকেনা করে। ব্যক্তি ও অন্যান্য করপোরেট প্রতিষ্ঠান এখনও এ খাতে বিনিয়োগ করছে না। এ খাতে ব্যক্তি ও করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিয়ে আসার জন্য সব ধরনের আকর্ষণীয় বন্ড মার্কেটে নিয়ে আসার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর অংশ হিসাবেই সরকারি খাতের সঞ্চয়পত্র ও সঞ্চয়ী বন্ডগুলো মার্কেটে নিয়ে আসা হবে। এগুলো এখনও বন্ড মার্কেটে বেচাকেনা হচ্ছে না। এখনও এসব সঞ্চয়পত্রে স্থায়ীভাবে সবচেয়ে বেশি মুনাফা দেওয়া হয়। এছাড়া রয়েছে সরকারি খাতের গ্যারান্টি। এসব কারণে সঞ্চয়ী উপকরণের ওপর বিনিয়োগকারীদের আস্থা রয়েছে। এসব বন্ড বাজারে এলে বিনিয়োগের আগমন বেশি হবে। কারণ তখন সঞ্চয়পত্র বা সঞ্চয়ী বন্ডের ক্রেতারা নিজেদের প্রয়োজনে জরুরি ভিত্তিতে এগুলো বিক্রি করে টাকা নগদায়ন করতে পারবে। বর্তমানে এগুলো মেয়াদ পূর্তি ও আগে বিক্রি করতে হলে ব্যাংক বা সঞ্চয় ব্যুরোতে যেতে হয়। বিক্রি করে অর্থ তুলে আনাও সময়সাপেক্ষ। আবার মুনাফা পাওয়া যায় কম। এসব ঝামেলা এড়াতে এগুলো বন্ড মার্কেটে সহজেই বিক্রি করা যাবে। তখন মুনাফাও বেশি পাওয়া যাবে। কারণ বন্ড মার্কেটের ঘোষিত মুনাফার চেয়ে বেশি মুনাফা পাওয়া যাচ্ছে। বর্তমানে বিভিন্ন কোম্পানি তাদের প্রভিডেন্ট ফান্ডসহ বিভিন্ন তহবিল সঞ্চয়পত্রে ও ট্রেজারি বন্ডে বিনিয়োগ করতে পারে। এসব ফান্ডের একটি অংশ সেন্ডেকান্ডি বন্ড মার্কেটেও নিয়ে আসা যেতে পারে। এতে বন্ড মার্কেটে তারল্যের প্রবাহ বাড়বে। প্রতিবেদনে বলা হয়, বাজারে ডলার সংকটের কারণে ব্যাংকগুলোতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে জোগান দিতে হয়েছে। এতে তারল্যের একটি বড় অংশ কেন্দ্রীয় ব্যাংকে চলে গেছে। এসব তারল্য আবার ট্রেজারি বিল পুনরায় কিনে নেওয়ার চুক্তি বা রেপোর মাধ্যমে ব্যাংকগুলোকে ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এ কারণে রেপোর নিলামের প্রবণতা বেড়েছে।