রাজধানীর হাজারীবাগে তানিয়া আক্তার (৩৫) হত্যাকাণ্ডে বাড়ির মালিক মোস্তাকিম আহমেদ এলাইম শাহিনকে গ্রেফতার দেখিয়েছে পুলিশ। তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ দুদিন রিমান্ডে পেয়েছে। গত রোববার দুপুরে হাজারীবাগ ১৭/১ মিতালি রোডের বাসার সপ্তমতলার কক্ষের ভেতরের বাথরুম থেকে তানিয়ার লাশ উদ্ধার করা হয়। এ সময় নিহতের গলায় আঘাতের চিহ্ন ছিল। এ ঘটনায় সোমবার তানিয়ার ভাই তন্ময় হাসান বাদী হয়ে অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে হাজারীবাগ থানায় হত্যা মামলা করেন। মামলার পর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বাড়ির মালিক শাহিনকে হেফাজতে নেয় পুলিশ। হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় শুরু থেকেই পুলিশের সন্দেহের তালিকায় ছিলেন শাহিন। পুলিশ জানিয়েছে, তানিয়া ও বাড়ির মালিক শাহিনের মধ্যে অনেক আগে থেকেই একটা সম্পর্ক ছিল। সেই সম্পর্কের সূত্র ধরেই হত্যাকাণ্ডের আগে তানিয়ার সঙ্গে আটবার ফোনে কথা হয় শাহিনের। প্রতিবারই ১০ থেকে ১৫ মিনিট কথা বলেন তিনি। ফলে হত্যাকারী হিসেবে সন্দেহের তালিকায় প্রথম অবস্থানে ছিলেন শাহিন। পুলিশের একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে, শাহিন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা। তবে তার পদ সম্পর্কে জানাতে পারেনি ওই সূত্র। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) রমনা বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মুহাম্মদ আশরাফ হোসেন (অতিরিক্ত ডিআইজি পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত) বলেন, সন্দেহভাজন হত্যাকারী হিসেবে বাড়ির মালিক শাহিনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাকে দুই দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। আমরা তার কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়েছি। তিনি আরও বলেন, তানিয়া ও শাহিনের মধ্যে অনেক আগে থেকেই সম্পর্ক ছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে শাহিনের রাজনৈতিক পদ-পদবি সম্পর্কে তিনি কিছু জানেন না বলে দাবি করেন। আরও পড়ুন: স্বামীর সঙ্গে থাকতেন না তানিয়া, বাড়ির মালিক শাহিনের সঙ্গে যেভাবে পরিচয় আরও পড়ুন: ভাড়া ছাড়াই তানিয়াকে ফ্ল্যাটে থাকতে দেন বাড়ির মালিক শাহিন! তানিয়ার মামা আলমগীর হোসেন দাবি করেন, হাজারীবাগ থানার ১৪ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী ও পদধারী নেতা শাহিন। তানিয়াও আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তাদের দীর্ঘদিনের পরিচয়, অতীতে বিভিন্ন নির্বাচনে তারা একসঙ্গে প্রচারণাও চালিয়েছেন। তানিয়ার মা আওয়ামী লীগের সক্রিয় রাজনীতি করেন। তানিয়াদের বাসায় শাহিনের নিয়মিত যাওয়া-আসা ছিল। সম্প্রতি ঘটা করে তানিয়ার জন্মদিনও পালন করেছেন শাহিন। স্বামী থাকার পরও শাহিনের বাসায় ওঠার বিষয়টিতে তিনিও অবাক হয়েছেন। আলমগীর হোসেন আরও বলেন, তানিয়া রাজধানীর লালমাটিয়া কলেজে পড়াকালীন ফেসবুকে প্রবাসী আজিজুরের সঙ্গে পরিচয় হয়। ২০১৭ সালের ৩১ মার্চ তাদের বিয়ে আমি নিজে থেকে দিয়েছি। তানিয়া স্বাধীনচেতা টাইপের ছিল। এদিকে গত ৫ জানুয়ারি হাজারীবাগের ১৭/১ মিতালি রোডের একটি ভবনের সপ্তমতলার ফ্ল্যাটে ওঠার বিষয়টি জানতেন না তানিয়ার স্বামী আজিজুর রহমান। আজিজুর রহমান বলেন, তার (তানিয়া) বাবার বাসা ছেড়ে শাহিনের ফ্ল্যাটে ওঠার বিষয়টি কেউ আমাকে জানায়নি। প্রেমের সম্পর্কে বিয়ে হলেও আমাদের সম্পর্ক ভালো যাচ্ছিল না। প্রথম থেকেই তানিয়া বাচ্চা নিতে চাইতো না। আমি তাকে একবার দুবাই নিয়ে যাই। সেখানেও সে থাকেনি। গত তিন বছর আমি দেশে চলে আসছি। কুমিল্লাতে থাকি কিন্তু তানিয়া বেশিরভাগ সময় ঢাকায় থাকত। সে আমার কাছে ডিভোর্স চাইতো। বিষয়টি নিয়ে আমাদের দুই পরিবারও উদ্বিগ্ন ছিল। তিনি আরও বলেন, তানিয়ার সঙ্গে আমার সর্বশেষ গত বুধবার কথা হয়। সে বলেছিল এক সপ্তাহের মধ্যেই কুমিল্লায় চলে আসবে। শাহিনের বিষয়ে তিনি বলেন, তানিয়া মাঝে-মধ্যে শাহিনের সঙ্গে কথা বলত। আমি জানতে চাইলে বলত ব্যবসায়িক ও রাজনৈতিক বিষয়ে কথা বলেছে। আমি সরল মনে বিশ্বাস করতাম। সোমবার হাজারীবাগের মিতালি রোডর ওই বাসায় গিয়ে দেখা যায়, সবাই আতঙ্কে আছেন। কেউ মুখ খুলতে চাননি। তানিয়ার রুমটির মেঝেতে রক্তে ভেসে গেছে। রুমের বাথরুমের দরজাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, তানিয়া বাথরুমে লুকাতে চেয়েছিলেন। মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে- ২০১৭ সালে কুমিল্লার কোতোয়ালি থানার মো. আজিজুর রহিমের সঙ্গে বিয়ে হয় তানিয়ার। তাদের কোনো সন্তানাদি ছিল না। হাজারীবাগ থানাধীন মিতালী রোডের একটি ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে গত ৫ জানুয়ারি থেকে বসবাস করছিলেন তানিয়া। ওই ফ্ল্যাটে দুটি রুমের অপরটিতে ইতি নামে একজন সাবলেট হিসেবে ভাড়া থাকেন। তানিয়া গত ১৯ জানুয়ারি হাজারীবাগে তার ভাইয়ের বাসায় যান। ওই দিন সন্ধ্যা ৭টার দিকে বাসা থেকে টিফিন বক্সে করে রাতের খাবার নিয়ে ভাড়া বাসায় ফেরেন তানিয়া। পরদিন তার মোবাইলে একাধিকবার ফোন করলেও বন্ধ পাওয়া যায়। পরে তানিয়ার বাসায় গিয়ে তারা ডাকাডাকি করেন; কিন্তু কোনো সাড়া না পেয়ে হাজারীবাগ থানা পুলিশকে সংবাদ দেন। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে মিস্ত্রি ডেকে রুমের দরজার তালা খুলে ভেতরে প্রবেশ করে দেখতে পায় বাথরুমে তানিয়ার গলাকাটা রক্তাক্ত লাশ পড়ে আছে।