স্বপ্নের থার্ড টার্মিনাল চালু হবে অক্টোবরে

প্রকাশিতঃ জানুয়ারী ২৪, ২০২৪ | ৮:৫২ পূর্বাহ্ন
অনলাইন নিউজ ডেক্স

অক্টোবরে চালু হচ্ছে স্বপ্নের থার্ড টার্মিনাল। আগামী ৫ এপ্রিল শেষ হবে থার্ড টার্মিনালের শতভাগ কাজ। ৬ এপ্রিল ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এভিয়েশন ঢাকা কনসোর্টিয়ামের (এডিসি) কাছ থেকে টার্মিনাল বুঝে নেবে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)। ইতোমধ্যে থার্ড টার্মিনালের অপারেশনাল রেডিনেস অ্যান্ড এয়ারপোর্ট ট্রান্সফার সংক্রান্ত প্রস্তাবনা মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া হয়েছে। শিগগিরই মন্ত্রণালয় থেকে এর অনুমোদন পাওয়া যাবে বলে জানা গেছে। বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল এম মফিদুর রহমান অক্টোবরে থার্ড টার্মিনাল চালুর তথ্য নিশ্চিত করেছেন মঙ্গলবার তিনি বলেন, আগামী এপ্রিল মাসের ৫ তারিখের মধ্যে থার্ড টার্মিনালের প্রথম পর্বের শতভাগ কাজ শেষ হচ্ছে। পরদিন নির্মাতা প্রতিষ্ঠান এডিসি’র কাছ থেকে স্বপ্নের এই থার্ড টার্মিনাল আমরা বুঝে নেব। সবকিছু যাচাই-বাছাই করে অক্টোবরের শুরুতেই টার্মিনালটি দেশি-বিদেশি বিমান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হবে। চেয়ারম্যান বলেন, গত বছর ৭ অক্টোবর ‘স্বপ্নের সঙ্গে বাস্তবতার সংযোগ’ স্লোগান নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালের উদ্বোধন করেন। চেয়ারম্যান বলেন, আমরা বলতে পারি তৃতীয় টার্মিনালটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বাংলাদেশকে একটি অ্যাভিয়েশন হাব হিসাবে গড়ে তোলার স্বপ্ন বাস্তবায়নের প্রথম মাইলফলক। ওইদিন প্রধানমন্ত্রী নতুন স্থাপনা থেকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটের পরীক্ষামূলক কার্যক্রমের মাধ্যমে নতুন দৃশ্যমান টার্মিনালের আংশিক উদ্বোধন করেন। সিএএবি চেয়ারম্যান বলেন, বিমানবন্দরের সিস্টেম ইন্টিগ্রেশন ও ক্যালিবারেশনের কাজ শেষ। ইতোমধ্যে একাধিকবার যাচাই-বাছাই সম্পন্ন হয়েছে। মোট কথা টার্মিনালটি এখন ফ্লাইট উড্ডয়ন-অবতরণের জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত। তিনি আশা করছেন নতুন টার্মিনালটি বিশ্বমানের সব সুযোগ-সুবিধা এবং যাত্রী পরিষেবা দিয়ে দেশের ভাবমূর্তি পালটে দেবে। তার মতে, নতুন টার্মিনালে পর্যাপ্ত প্রাকৃতিক আলোসহ ফ্লোর ও সিলিংয়ে নজরকাড়া প্যাটার্নের বৈশিষ্ট্যগুলো খুবই দৃষ্টিনন্দন হবে। যাত্রীরা নতুন টার্মিনালে বিশ্বমানের সুবিধার প্রশংসা করবেন, যা আমরা এখানে আগে কখনো পাইনি। তৃতীয় টার্মিনালের ডাবল এন্ট্রি ব্রিজসহ ১২টি বোর্ডিং গেট শুরুতে চালু হবে এবং পরে আরও ১৪টি বোর্ডিং সেতু স্থাপন করা হবে। ২১ হাজার ৩০০ কোটি টাকা ব্যয়ের তৃতীয় টার্মিনাল প্রকল্পটি ২০১৯ সালের ২৮ ডিসেম্বর শুরু হয়। সরকার পাঁচ হাজার কোটি টাকা দিয়েছে এবং জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা) অবশিষ্ট অর্থায়ন করেছে। পাঁচ লাখ ৪২ হাজার বর্গমিটার এলাকাজুড়ে তৃতীয় টার্মিনালে দুই লাখ ৩০ হাজার বর্গমিটারের একটি ফ্লোর স্পেস, ১১৫টি চেক-ইন কাউন্টার, ৬৬টি ডিপার্চার ইমিগ্রেশন ডেস্ক, ৫৯টি আগমন ইমিগ্রেশন ও তিনটি ভিআইপি ইমিগ্রেশন ডেস্ক রয়েছে। তৃতীয় টার্মিনাল চালু হওয়ার পর ঢাকা বিমানবন্দরের বার্ষিক যাত্রী ও কার্গো হ্যান্ডলিং ক্ষমতা দ্বিগুণ হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এতে বার্ষিক যাত্রী হ্যান্ডলিং ক্ষমতা হবে ২৪ মিলিয়ন (পুরোনো টার্মিনালসহ), যা এখন আট মিলিয়ন এবং বিমানবন্দরটি প্রতিবছর পাঁচ লাখ টন কার্গো হ্যান্ডেল করতে পারে। এখানে ৩৭টি নতুন এয়ারক্রাফ্ট পার্কিং এরিয়া এবং অ্যাপ্রোন এলাকায় সংযোগকারী দুটি ট্যাক্সিওয়ে রয়েছে। তৃতীয় টার্মিনালটি একটি মাল্টিমোডাল পরিবহণ ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত করার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে, যাতে যাত্রীরা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্রবেশ ও প্রস্থান করতে সক্ষম হয়। নতুন টার্মিনালটি এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, ভূগর্ভস্থ রেলপথ (এমআরটি-৫, কমলাপুর থেকে বিমানবন্দর অংশ) ও একটি ভূগর্ভস্থ টানেলের মাধ্যমে বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশনের সঙ্গে সংযুক্ত হবে। এছাড়া আশকোনা হজ ক্যাম্প থেকে আন্ডারগ্রাউন্ড টানেলের মাধ্যমে হজযাত্রীরা তৃতীয় টার্মিনালে যেতে পারবেন। তৃতীয় টার্মিনালটি সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্বের অধীনে একটি জাপানি কোম্পানি দ্বারা পরিচালিত ও রক্ষণাবেক্ষণ করা হবে বলে আশা করা হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তৃতীয় টার্মিনালের পূর্ণাঙ্গ কার্যক্রমের আগে বিভিন্ন বিদেশি এয়ারলাইন্স ঢাকা বিমানবন্দর থেকে তাদের কার্যক্রম শুরু করতে চায়। যা দেশের অ্যাভিয়েশন সেক্টরকে এগিয়ে নিয়ে যেতে একটি বড় ভূমিকা পালন করবে বলে আশা করা হচ্ছে। বিশ্বমানের এই টার্মিনালে ১০৪৪টি গাড়ি রাখার সক্ষমতাসহ বহুতল গাড়ি পার্কিং তৈরি করা হয়েছে। এই টার্মিনালে একসঙ্গে ৩৭টি উড়োজাহাজ পার্ক করে রাখা যাবে। এছাড়া তৃতীয় টার্মিনালে ১৬টি ব্যাগেজ বেল্ট স্থাপন করা হয়েছে। অতিরিক্ত ওজনের ব্যাগেজের জন্য চারটি পৃথক বেল্ট রয়েছে। একটি করিডরের মাধ্যমে পুরোনো দুটি টার্মিনালের সঙ্গে নতুন টার্মিনালকে যুক্ত করা হবে। কর্তৃপক্ষ বলছে, তৃতীয় টার্মিনালে যেতে এখন আর যানজটের ভোগান্তি পোহাতে হবে না। যানজট এড়ানোরও নানা অবকাঠামো তৈরি হয়েছে।