গবেষণাধর্মী পরিকল্পনা নিয়ে ইলিশের উৎপাদন আরও বাড়ানো হবে বলে জানিয়েছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী মো. আব্দুর রহমান। বুধবার দুপুরে মৎস্য অধিদপ্তরের সম্মেলন কক্ষে ‘মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান ২০২৩ এর মূল্যায়ন ও ভবিষ্যৎ করণীয়’ শীর্ষক কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী একথা জানান। মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সৈয়দ মো. আলমগীরের সভাপতিত্বে কর্মশালায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহা. সেলিম উদ্দিন। স্বাগত বক্তব্য দেন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. আবদুল কাইয়ূম। কর্মশালায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন মৎস্য অধিদপ্তরের উপ-প্রধান মাসুদ আরা মমি। প্রবন্ধের ওপর আলোচনা করেন বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন করপোরেশনের চেয়ারম্যান সাঈদ মাহমুদ বেলাল হায়দর, বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. মো. জুলফিকার আলী এবং নৌপুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি শফিকুল ইসলাম। মন্ত্রণালয় ও মৎস্য অধিদপ্তরের অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, গবেষক, মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযানে সম্পৃক্ত নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড, পুলিশ, নৌপুলিশ, র্যাব, বিজিবি ও আনসার ভিডিপির প্রতিনিধিসহ ইলিশ সংক্রান্ত বিভিন্ন অংশীজনরা কর্মশালায় উপস্থিত ছিলেন। এ সময় মন্ত্রী বলেন, ২০০১-০২ সালে ইলিশ উৎপাদনের যে প্রবৃদ্ধি ছিল এবং ২০০৮ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন রাষ্ট্র ক্ষমতায় এসেছিল, সে সময়ের তুলনায় বর্তমানে ইলিশ উৎপাদনের প্রবৃদ্ধি অনেক বেশি। এ প্রবৃদ্ধি দ্বিগুণেরও বেশি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তরিকতা, সদিচ্ছা এবং একটি জাতিকে গড়ে তোলার প্রয়াসের জন্য এটি হয়েছে। বর্তমানে ইলিশের উৎপাদন ৫ লাখ ৭১ হাজার মেট্রিক টন। তিনি আরও বলেন, ইলিশ যেমন আমাদের গৌরবের জায়গা, তেমনি ইলিশ জাতীয় অর্থনীতিতে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনেরও একটা বড় ক্ষেত্র। তাই এটিকে লালন-পালন, পরিচর্যা এবং বিভিন্ন গবেষণাধর্মী পরিকল্পনা নিয়ে সামনে আরও বেশি উৎপাদন বাড়ানো এবং এটিকে সত্যিকার অর্থে একটি বড় সম্পদ হিসেবে বিবেচনা করেই আমরা এগোতে চাই। সবার যার যার জায়গায় অবদান রাখলে ইলিশ উৎপাদনে আরও প্রবৃদ্ধি অর্জন সম্ভব হবে। ইলিশ উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন উল্লেখ করে মন্ত্রী আরও বলেন, দেশে ইলিশের অভয়াশ্রম কিছু চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। সে জায়গাগুলো থেকে উত্তরণ করা দরকার। ইলিশের বিচরণ পথ সুগম ও নিরাপদ করতে হবে। তা না হলে ইলিশের উৎপাদন বাধাগ্রস্ত হবে। এজন্য সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন। পাশাপাশি প্রকৃত মৎসীজীবীদের একটা সুনির্দিষ্ট তালিকা করা জরুরি। এক্ষেত্রে স্বজনপ্রীতি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। এছাড়া মৎস্যজীবী বিভিন্ন সংগঠনকে দায়িত্ব নিয়ে সুষ্ঠুভাবে তা পালনের মানসিকতা তৈরি করতে হবে। জাটকা নিধন বন্ধ করতে হবে এবং কেউ অবৈধ জাল ব্যবহার করলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এর পাশাপাশি অভয়াশ্রম সম্পৃক্ত এলাকার জেলে ও মৎস্যজীবীদের নিয়ে সামাজিক ক্যাম্পেইন করতে হবে। মাছ ধরা বন্ধ থাকাকালে তাদের জন্য ভিজিএফ এর পাশাপাশি বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হবে। এ সময় মধ্যস্বত্বভোগীদের উদ্যোক্তাদের চেয়েও দ্বিগুণ লাভ করার মানসিকতা পরিবর্তন হওয়া প্রয়োজন বলে জানান মন্ত্রী। দাদন ব্যবসায়ীদের হাত থেকে ইলিশ আহরণে সম্পৃক্ত জেলেদের রক্ষার উদ্যোগ নেওয়ার প্রয়োজনীতা তুলে ধরেন মন্ত্রী। বাজারে ইলিশের পর্যাপ্ততা থাকা সত্ত্বেও মধ্যস্বত্বভোগীদের জন্য ইলিশের দাম অনেক শ্রেণির মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে যায় বলেও উল্লেখ করেন মন্ত্রী। এ বিষয়ে তার মন্ত্রণালয় কাজ করবে বলে জানান তিনি। তিনি আরও বলেন, ২০২৩ সালে মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান যথাযথভাবে বাস্তবায়নের ফলে ৫২ দশমিক ৪ শতাংশ ইলিশ সফলভাবে ডিম ছাড়তে সক্ষম হয়েছে। যা ভিত্তি বছর ২০০১-০২ এর তুলনায় ১০৪ দশমিক ৮ শতাংশ বেশি। ফলে এ বছর প্রায় ৪০ দশমিক ৫৮ হাজার কোটি জাটকা নতুন করে ইলিশ পরিবারে যুক্ত হয়েছে। মা ইলিশ সংরক্ষণের সুফল পেতে হলে এ বছর উৎপাদিত ইলিশের পোনা (জাটকা) নিবিড়ভাবে সংরক্ষণ করতে হবে। মা ইলিশ সংরক্ষণ ও জাটকা রক্ষার মাধ্যমে ইলিশের উৎপাদন আরও বৃদ্ধি পাবে এবং ইলিশ সাধারণ মানুষের জন্য আরও সহজলভ্য হবে। এ সময় দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি সংক্রান্ত বিষয়ে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী বলেন, মানুষের মৌলিক বিষয়গুলোর নিশ্চয়তা দেওয়া বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের প্রধান কাজ। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির বিষয় ইদানিং বড় ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে। কৃত্রিম মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে যারা জড়িত থাকবে বা আছে তাদের চিহ্নিতকরণের প্রক্রিয়া চলছে এবং এ অসাধু ব্যবসায়ী যারা কারসাজি করে মূল্যবৃদ্ধি করে মানুষকে কষ্ট দিতে চায় তাদের কোনো অবস্থাতে ছাড় দেওয়া হবে না। তাদের বিরুদ্ধে কঠিন ও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া বর্তমান সরকারের অঙ্গীকার। মানুষের স্বস্তি, মানুষের শান্তি, তাদের জান-মালের নিরাপত্তা- এ মৌলিক বিষয়গুলো অবশ্যই বর্তমান সরকার প্রাধান্য দেবে। পরে মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান ২০২৩ এর প্রতিবেদন শীর্ষক প্রকাশনার মোড়ক উন্মোচন করেন মন্ত্রী।