গত ২৩ নভেম্বর চলতি আমন মৌসুমে রাজশাহী বিভাগের আট জেলায় সরকারিভাবে ধান ও চাল সংগ্রহ অভিযান শুরু হয়েছিল বেশ ঘটা করে। কিন্তু গত আড়াই মাসে রাজশাহী বিভাগের আট জেলায় ধান সংগ্রহ অভিযান সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। এই সময়ে কিছু চাল সংগ্রহ হলেও তা লক্ষ্যমাত্রার কাছাকাছি পৌঁছেনি। আগামী ২ ফেব্রুয়ারি ধান-চাল সংগ্রহ অভিযান শেষ হবে। তবে সংগ্রহ অভিযানের সময় বাড়বে কিনা তা এখনো নিশ্চিত নন খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তারা। এদিকে রাজশাহী অঞ্চলের খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, চলতি আমন মৌসুমে খোলা বাজারে ধান-চালের দাম সরকারি ক্রয়মূল্যের চেয়ে কিছুটা বেশি। এ কারণে কৃষক সরকারি খাদ্যগুদামে ধান দিচ্ছেন না। আবার বাজারে চালের দাম বাড়তি থাকায় চুক্তিবদ্ধ মিলাররাও লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী চাল দিতে পারেননি। অভিযোগ রয়েছে- গত আড়াই মাসে মিলাররা সরকারি খাদ্যগুদামে যে চাল দিয়েছেন সেগুলো নিম্নমানের। কোথাও কোথাও গুদামে পড়ে থাকা আগের মৌসুমের নষ্ট চালও কিনেছেন গুদাম কর্মকর্তারা। তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন রাজশাহী আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক দপ্তরের কর্মকর্তারা। অন্য দিকে কৃষকরা বলছেন উলটো কথা। তাদের মতে, সরকারি খাদ্যগুদামে দালাল সিন্ডিকেট সক্রিয় থাকায় কৃষকরা সরাসরি গুদামে ধান বিক্রি করতে নানা ঝামেলার মুখে পড়েন। খাদ্যগুদামের কর্মকর্তাসহ খাদ্য বিভাগের সংশ্লিষ্টরা নিজেদের লাভের কথা চিন্তা করে এসব দালাল ফড়িয়াকে প্রশ্রয় দিচ্ছেন। কৃষক ধান নিয়ে গেলে গুদাম কর্মকর্তারা বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে ধান ফিরিয়ে দেন। একই ধান দালাল ফড়িয়ারা নিয়ে গেলে তা গ্রহণ করেন। আবার কৃষককে সরকারি গুদামে ধান বিক্রি করতে বিভিন্ন আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। কৃষক এসব আনুষ্ঠানিকতা এড়াতে গত কয়েক বছর ধরে সরকারি গুদামে ধান দিতে অনীহা দেখিয়ে আসছেন। রাজশাহীর আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক দপ্তর সূত্র জানায়, রাজশাহী অঞ্চলের আট জেলায় ৩০ টাকা কেজি দরে ৩১ হাজার ৫৫৬ টন ধান, ৪৪ টাকা কেজি দরে ৮২ হাজার ৭৫১ টন সিদ্ধ চাল ও ১৩ হাজার ২৮৩ টন আতপ চাল কেনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। সংগ্রহ বিবরণী থেকে প্রাপ্ত তথ্যে দেখা গেছে, গত ২৯ জানুয়ারি পর্যন্ত দুই হাজার ৩৯০ টন ধান সংগ্রহ করা হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে সংগ্রহের এ হার মাত্র ৭ দশমিক ৫৮ শতাংশ। অন্যদিকে সংগ্রহ লক্ষ্যমাত্রা ৮২ হাজার ৭৫১ টনের বিপরীতে সিদ্ধ চাল সংগৃহীত হয়েছে ৪৭ হাজার ১৪২ টন। সিদ্ধ চাল সংগ্রহের হার ৭৮ দশমিক ২৮ শতাংশ। একই সময়ে ১৩ হাজার ২৮৩ টন আতপ চাল সংগ্রহ লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ছয় হাজার ৫৮৩ টন আতপ চাল সংগৃহীত হয়েছে। আতপ চাল সংগ্রহের হার ৪২ দশমিক ২৩ শতাংশ। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে ধান ক্রয়ের কথা বলা হলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে সরকারি খাদ্যগুদামে ধান দিচ্ছে দালাল ও ফড়িয়ারা। ফড়িয়াদের সঙ্গে গুদাম কর্মকর্তাদের রয়েছে অলিখিত সখ্য। ফড়িয়ারা কাঁচা ধান বাজার থেকে কিনে সরাসরি গুদামে দিচ্ছেন। রাজশাহীর তানোরের কামারগাঁও এলাকার কৃষক মহিউদ্দিন মৃধা বলেন, এলাকার গুদামে সরকারিভাবে ধান কেনা হচ্ছে এটা এলাকার অধিকাংশ কৃষকই জানে না। এলাকায় এ ব্যাপারে কোনো প্রচারও চালানো হয়নি। তিনি আরও বলেন, হাট-বাজার থেকে কৃষকের ধান কিনে দালালরা গুদামে ধান দিয়েছে। ফলে সরকারি ধান চাল সংগ্রহ থেকে কৃষক কোনোভাবেই উপকৃত হচ্ছে না। অন্যদিকে চুক্তি করলেও চাল সংগ্রহের ক্ষেত্রেও বড় বড় মিলাররা কেউ চাল দেয়নি সরকারি গুদামে। মিলারদের বদলে বিভিন্ন চাতাল মালিকের কাছ থেকে চাল কেনা হয়েছে। আবার অনেক বন্ধ চালকল থেকেও কেনা হয়েছে বেশি পরিমাণ চাল। চালকল বন্ধ থাকলেও কীভাবে কোন উৎস থেকে তারা চাল সংগ্রহ করছেন সে তথ্যও অনেকের কাছে অজানা। ধান-চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না হওয়া প্রসঙ্গে রাজশাহীর সহকারী আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক শেখ জাহেদুল ইসলাম বলেন, ধান-চাল সংগ্রহ অভিযান ব্যর্থ হয়েছে এটা বলা যাবে না। তবে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি। এখনো ধান-চাল কেনা হচ্ছে। বাইরে বাজারে ধানের দাম সরকারি মূল্যের চেয়ে কিছুটা বেশি হওয়ায় কৃষক সরকারি গুদামে ধান দিচ্ছে না। যদিও চাল সংগ্রহ লক্ষ্যমাত্রার কাছাকাছি রয়েছে।