দেশে সাইবার অপরাধের শিকার হচ্ছেন সব শ্রেণির মানুষ। মাধ্যমটিকে ব্যবহার করে আর্থিক প্রতারণাও বেড়েছে। তবে এ অপরাধের সবচেয়ে বেশি শিকার হচ্ছে নারী ও শিশু। অপরাধের নতুন উপকরণ হিসাবে যুক্ত হয়েছে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। যা সাইবার স্পেসে প্রয়োগ করা হচ্ছে। এর মাধ্যমে নারীদের প্রতিনিয়ত ভিকটিম করা হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বছর তিনেক আগে গঠিত ‘পুলিশ সাইবার সাপোর্ট ফর উইমেনে’ গত বছর এ ধরনের ১০ হাজারের বেশি অভিযোগ এসেছে, যার মধ্যে ডক্সিংয়ের (এক ধরনের সাইবার আক্রমণ, যার মাধ্যমে একজন ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর প্রকৃত পরিচয় ও ব্যক্তিগত তথ্য, যেমন-বাড়ির ঠিকানা, ফোন নম্বর, ক্রেডিট কার্ড নম্বর, ব্যক্তিগত ছবি ইত্যাদি সংগ্রহ করা সম্ভব) শিকার ৩৮ শতাংশ, আইডি হ্যাক ১৯ শতাংশ, ব্ল্যাকমেইলিং ১৭ শতাংশ এবং ইমপার্সোনাল (ছদ্মবেশে হয়রানি) ১০ শতাংশ। এছাড়া সাইবার বুলিং ৮ শতাংশ এবং আপত্তিকর কনটেন্ট ছড়ানো ও মোবাইল হ্যারাসমেন্টের (ফোন করে বা এসএমএস দিয়ে হয়রানি) অভিযোগ আছে ৪ শতাংশ। সাম্প্রতিক সময়ে এআই’র শিকার অনেক নারীকে সেবা দিয়েছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সংশ্লিষ্ট ইউনিটগুলো। পাশাপাশি সাইবার অপরাধীদের আইনের আওতায়ও আনা হয়েছে। আসলে অনলাইনের প্রতি মানুষের আগ্রহ বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রতারকরাও এ মাধ্যমটিকে ব্যবহার করছে। আমরা মনে করি, সব ধরনের সাইবার অপরাধ, এমনকি যে কোনো অপরাধ দমনেই দৃষ্টান্তমূলক সাজার বিকল্প নেই। এটা সত্যি, সাইবার অপরাধের বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তৎপর, তবে তাদের কাছে ভুক্তভোগীদের আসতে হবে। যার অর্থ হচ্ছে, এসব অপরাধ ঠেকাতে সবার আগে প্রয়োজন অনলাইন ব্যবহার ও আইনি সুবিধা পাওয়ার ব্যাপারে সচেতনতা। এর আগে এক গবেষণা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছিল, ভুক্তভোগীদের মধ্যে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার প্রবণতা কম থাকার পেছনে তাদের অজ্ঞতাই প্রধান কারণ। তাই কোনো ধরনের হয়রানির শিকার হলে তা মোকাবিলায় কীভাবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শরণাপন্ন হতে হয়, তা জানতে সচেতনতা বৃদ্ধি প্রয়োজন। সরকারকেও সাইবার নিরাপত্তার বিষয়টিকে হালকাভাবে দেখলে চলবে না। জনগণের তথ্য একটা দেশের সম্পদ। সেই তথ্য রক্ষায় এবং নিরাপত্তা জোরদারে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। সবার সচেতনতা, কঠোর আইন ও এর কার্যকর প্রয়োগের মাধ্যমে সাইবার সুরক্ষা নিশ্চিত হবে, এটিই প্রত্যাশা।