নিরাপদ ক্যাম্পাসের দাবিতে আন্দোলনের ডাক দিয়েছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। মঙ্গলবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহিদ মিনারসংলগ্ন রাস্তায় ‘নিপীড়ন বিরোধী মঞ্চ’র ব্যানারে মানববন্ধন থেকে প্রক্টর আ স ম ফিরোজ উল হাসান এবং হল প্রভোস্ট অধ্যাপক সাব্বির আলমের পদত্যাগসহ চার দফা দাবি জানানো হয়েছে। দাবি বাস্তবায়ন না হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটসহ সব কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়েছে। চার দাবি হলো-আবাসিক হলে অবৈধভাবে অবস্থান করা অছাত্রদের বের করা, প্রক্টর ও মীর মশাররফ হোসেন হল প্রভোস্টের পদত্যাগ, ছাত্রীকে যৌন নিপীড়নে অভিযুক্ত শিক্ষক মাহমুদুর রহমান জনিকে চাকরিচ্যুত করা এবং ধর্ষণের ঘটনায় জড়িতদের সনদ বাতিল ও শাস্তি নিশ্চিত করা। মানববন্ধনে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী আরিফ সোহেল বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে অপরাধীরা ক্রমাগত অপরাধ করে যাচ্ছে। কিন্তু তাদের বিচার হচ্ছে না। বিচার না হতে হতে আজ তারা ধর্ষকে পরিণত হয়েছে। আমরা আগে বলতাম জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় সবার জন্য নিরাপদ। কিন্তু আজ সেই বিশ্ববিদ্যালয়ে ধর্ষণের মতো ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটছে। ধর্ষক তৈরি হয় গণরুম থেকে। তাই গণরুম গেস্টরুম কালচার বন্ধ করতে হবে।’ দর্শন বিভাগের অধ্যাপক রাইহান রাইন বলেন, ‘ক্যাম্পাসে যত কিছুই হোক উপাচার্য সাহেব নির্বিকার থাকেন। আমাদের সাধারণ শিক্ষার্থীদের কোনো অভিভাবক নেই। অভিভাবক আছে ধর্ষক, চাঁদাবাজ, মাদক ব্যবসায়ীদের। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়ে হলে রাখছে। এ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আমরা অছাত্রদের হল থেকে বের করতে চাই, অপরাধীদের বিচার চাই, ক্যাম্পাসের নির্বিকার প্রশাসনের নিরসন চাই।’ ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক গোলাম রাব্বানী বলেন, ‘হল প্রশাসন প্রথমে ধর্ষণের কথা অস্বীকার করে। এরপর তারা ধর্ষককে পালিয়ে যেতে সাহায্য করে। প্রশাসন সিন্ডিকেটে যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা বাস্তবায়ন না হলে আমরা একদফা দাবিতে আন্দোলনে যাব। উপাচার্যকে বলতে চাই, আপনি আপনার চেয়ার খুবই পছন্দ করেন। আপনি যদি এ চেয়ারে থাকতে চান তাহলে দ্রুত এ ঘটনার বিচার করুন।’ ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক পারভীন জলি বলেন, ‘৫ দিনের ৩ দিন পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত অছাত্রদের তালিকা প্রকাশ করতে পারেনি। ধর্ষণের ঘটনায় এখন পর্যন্ত কোনো মামলা না করে থানায় শুধু একটি অভিযোগ দায়ের করেছে। উপাচার্য বারবার বলেন আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি। কমিটমেন্ট দেন কিন্তু তা বাস্তবায়ন করেন না। যেমনটি হয়েছে মাহমুদুর রহমান জনির ক্ষেত্রে। প্রায় দেড় বছর পার হয়েছে এখন পর্যন্ত তার বিচার হয়নি।’ তিনি আরও বলেন, ‘তদন্ত কমিটির প্রধান করা হয়েছে একজন সিন্ডিকেট সদস্যকে। তাহলে তদন্ত কমিটি নিরপেক্ষ হবে কীভাবে। ধর্ষককে যারা পালাতে সাহায্য করেছে তারা ছাত্রলীগের কর্মী। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর মোস্তাফিজকে খুঁজে আনতে পাঠিয়েছিলেন ছাত্রলীগের দুজন কর্মীকে। তাহলে প্রক্টরিয়াল টিমের কাজ কি? এখান থেকে বোঝা যায় অভিযুক্তদের আটক করতে প্রক্টরের কোনো সদিচ্ছা ছিল না। এই প্রক্টর পদে বহাল থাকার সব প্রকার নৈতিক অধিকার হারিয়েছেন।’ মানববন্ধনে আরও বক্তব্য দেন, ফার্মেসি বিভাগের অধ্যাপক মাফরুহী সাত্তার, দর্শন বিভাগের অধ্যাপক এএসএম আনোয়ারুল্লাহ ভূঁইয়া ও অধ্যাপক মোহাম্মদ কামরুল আহসান, সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক শামসুল আরেফিন। উপস্থিত ছিলেন আইবিএর অধ্যাপক আইরিন আক্তার, প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সোহেল আহমেদ, ফার্মেসি বিভাগের অধ্যাপক সোহেল রানা ও অধ্যাপক বোরহান উদ্দিন, প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মনোয়ার হোসেন তুহিন, অর্থনীতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক রনি হোসাইনসহ প্রায় ২০ জন শিক্ষক এবং শতাধিক শিক্ষার্থী। চার দফা দাবিতে সন্ধ্যায় বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেন শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রান্সপোর্ট চত্বর থেকে মিছিল শুরু হয়ে শহিদ মিনার ও সব ছাত্রীহল হয়ে পুনরায় ট্রান্সপোর্ট চত্বরে এসে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ হয়। এতে নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের শিক্ষার্থী ফাইজা মেহজাবিন প্রিয়ন্তী, প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষার্থী রাবেয়া বসরী তাপস্বী, আইআইটি বিভাগের শিক্ষার্থী সোয়াতি, অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী অনামিকা নূরাইন বিত্ত প্রমুখ বক্তব্য দেন। সমাবেশ থেকে আজ দুপুর ১টায় শহিদ মিনারের পাদদেশে কালো পতাকা মিছিলের ঘোষণা দেওয়া হয়। গাইবান্ধায় বিক্ষোভ : গাইবান্ধা প্রতিনিধি জানান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সংঘবদ্ধ ধর্ষণের আসামি ছাত্রলীগ নেতা মোস্তাফিজ ও তার সহযোগীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে এদিন দুপুরে জেলা শহরে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ হয়েছে। সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট ও নারীমুক্তি কেন্দ্র গাইবান্ধা জেলা যৌথভাবে এই কর্মসূচি পালন করে। শহরের ১নং ট্রাফিক মোড়ে আয়োজিত সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন নারীমুক্তি কেন্দ্রের সভাপতি সুভাসিনী দেবী। বক্তব্য দেন, সগঠনটির সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. নিলুফার ইয়াসমিন শিল্পী, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট গাইবান্ধা জেলা সভাপতি পরমানন্দ দাস, সাধারণ সম্পাদক রাহেলা সিদ্দিকা প্রমুখ।