জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ধর্ষণের ঘটনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেছেন, আমাদের শিক্ষা কাঠামোয় অবশ্যই কোনো সমস্যা আছে নয়তো বা এ ধরনের ঘটনা ঘটে না। প্রজাতন্ত্রের দায়িত্ব হবে সেটি চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়া। মঙ্গলবার দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যৌন হয়রানি এবং ধর্ষণের কারণ উল্লেখ করতে গিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য আরেফিন সিদ্দিক বলেন, এ ধরনের ঘটনা শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘটছে তা নয়। সমাজের সর্বস্তরেরই আমি দেখতে পাচ্ছি। প্রতিদিন বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় আমরা দেখি যে, নারীদের নানাভাবে হেনস্তা করা হচ্ছে, এমনকি ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে। এটার একটা বড় কারণ হচ্ছে তাদের (যারা ধর্ষণ করে) মধ্যে আমরা বাংলাদেশের ঐতিহ্য, নৈতিকতা ইত্যাদি দিতে পারিনি। এটা আমাদের ব্যর্থতা। পরিবার থেকেই তাদের এ শিক্ষাটা দেওয়া উচিত ছিল। প্রাথমিক পর্যায়ে তাদের মধ্যে এই শিক্ষা দেওয়া উচিত ছিল যে, নারীদের সম্মান করতে হবে। বাড়িতে আমরা আমাদের মা-বোনকে যেভাবে সম্মান করি অন্য মহিলাদেরও ঠিক একইভাবে সম্মান করতে হবে। কোনো কোনো কারণে তারা হয় তো এই শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হয়েছে। তাদের মধ্যে নারীদের আনন্দ ভোগের বিষয় হিসাবে ব্যবহার করার একটা মন্দ সংস্কৃতি-অপসংস্কৃতি তৈরি হয়েছে। এমন শিক্ষার্থী কীভাবে ছাত্রলীগের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে প্রশ্ন তুলে আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, এখন জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ে যে ঘটনাটা ঘটল তা সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থী করেছে, সেটা অচিন্তনীয়। এটা কোনো মানুষের পক্ষে করা সম্ভব নয়। যারা অমানুষ শুধু তারাই এটা করতে পারে। আর এ অমানুষ বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিজড়িত ছাত্রলীগের মতো একটা ঐতিহ্যবাহী সংগঠনে কীভাবে যুক্ত হলো, তাকে কে রিক্রুট করল সেই বিষয়গুলোও এখন দেখার দরকার আছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আর এই যে অপরাধী তাকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চিরজীবনের জন্য বহিষ্কার করতে হবে। সে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক পদে রয়েছে। তাই তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। এছাড়াও প্রজাতন্ত্রের যে ফৌজদারি আইন আছে, সেই আইনে নিয়ে তাকে ধর্ষণের জন্য সর্বোচ্চ শাস্তির বিধান করা উচিত। আর এভাবে যদি অপরাধীদের চিহ্নিত করে দ্রুত আইনের আওতায় আনা যায় তাহলে এই অপরাধ কিছুটা হলেও কমানো যাবে। প্রাথমিক শিক্ষার ওপর জোর দেওয়ার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, তবে শিক্ষারও যে একটা অভাব তাদের মধ্যে রয়েছে সেটিও কিন্তু আমাদের স্বীকার করতে হবে। পরিবার থেকেই এই শিক্ষা দেওয়া উচিত ছিল। প্রাথমিক পর্যায় থেকেও তাকে (ধর্ষক) শিক্ষা দিতে পারেনি। বিশ্ববিদ্যালয়ে আসার পর ওই শিক্ষার্থীকে আর নৈতিকতার শিক্ষা দেওয়া যায় না। তখন তারা প্রাপ্তবয়স্ক শিক্ষার্থী হিসাবে বিশ্ববিদ্যালয়ে আসে আর ইতোমধ্যে তার মনমানসিকতা কিন্তু গড়ে উঠেছে। অতএব তাকে যে খুব বেশি পরিবর্তন করা সেটি কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় পারে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশটাও যদিও তাকে ভালো মানুষ হওয়ার শিক্ষাটা দেয়। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ কিন্তু অত্যন্ত ভালো সেখানে তার মতো একটা অমানুষ এতদিন পড়াশোনা করেছে সেটিই বোধগম্য হয় না। যৌন নির্যাতন ধর্ষণ ইত্যাদি বন্ধ করার জন্য পরামর্শ দিয়ে আরেফিন সিদ্দিক বলেন, আমার পরামর্শ হচ্ছে যে, আমাদের বর্তমান শিক্ষাকে পরিবর্তন করে, পাঠ্যবইতে নৈতিক শিক্ষা, মানুষকে ভালোবাসার শিক্ষা এবং দেশকে ভালোবাসার শিক্ষা অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। তবে সেই গুরুত্বটা আমরা দিচ্ছি না। আমরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তার জিপিএ-৫ পাওয়ার শিক্ষা, তাকে পাঠ্যক্রমের শিক্ষার মধ্যে আটকে রাখার চেষ্টা করি। অভিভাবকরা অনেক সময় মনে করে যে, পাঠ্যবইয়ের বাইরে অন্য কোনো বই পড়লে কিংবা খেলাধুলা করলে তাদের সময় নষ্ট হবে। অনেক সময় পরিবারের সীমিত চিন্তাভাবনার কারণে এ বিষয়গুলো ঘটে। আমাদের প্রাথমিক শিক্ষার প্রতি মনোযোগ দেওয়া উচিত। শুধু জাহাঙ্গীরনগরেই নয় এর আগে সিলেটের এমসি কলেজেও একই ঘটনা ঘটেছে। যার দ্বারা বোঝা যায় প্রায়শই এ ধরনের ঘটনা আমাদের দেশে ঘটছে। আমাদের শিক্ষা কাঠামোতে অবশ্যই কোনো সমস্যা আছে নয়তো বা এ ধরনের ঘটনা ঘটে না। প্রজাতন্ত্রের দায়িত্ব হবে সেটি চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়া।