টঙ্গীর তুরাগ তীরে নিজামুদ্দিন মারকাজের অনুসারীদের বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বে তাবলিগের শীর্ষ মুরুব্বি মাওলানা সাদ কান্ধলবীকে আসার অনুমতির দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছে সাধারণ মুসল্লি পরিষদ। বুধবার সন্ধ্যা ৭টার মধ্যে মাওলানা সাদের ভিসা নিশ্চিত করে ইজতেমায় আসতে অনুমতি দেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীর প্রতি জোরালো আহ্বান জানিয়েছেন তারা। অন্যথায় বিক্ষুব্ধ মুসল্লিরা কোনো ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি করলে তার সব দায়ভার সরকারকে নিতে হবে বলেও হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন তারা। বুধবার সকালে বিশ্ব ইজতেমা ময়দানে বিদেশি মেহমানদের প্রবেশ গেটের (প্রধান গেট) সামনে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন- বাংলাদেশ মুসল্লি পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক মুফতি মুয়াজ বিন নূর। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন- মুফতি আজিম উদ্দিন, মুফতি মিজানুর রহমান, মুফতি আরিফ হোসেন, মাওলানা আনাস, সৈযদ মাসুম, আতাউর রহমান, আতাউল্লাহ প্রমুখ। মুফতি মুয়াজ বিন নূর তার বক্তব্যে বলেন, আপনার জানেন বিগত ৫৭ বছর যাবত টঙ্গীতে বিশ্ব ইজতেমা হচ্ছে। ২০১৮ সালের আগপর্যন্ত তাবলিগ জামাতে কোনো বিভক্তি ছিল। ’১৮ সালে কোনো এক কারণে ইজতেমায় বিভাজন সৃষ্টি হয়। এরপর থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত (করোনাকালীন সময় ছাড়া) যে কয়বছর ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়েছে এর মধ্যে একচেটিয়াভাবে একটি পক্ষকে প্রত্যেকবার প্রথমপর্বে ইজতেমা করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। মাওলানা জোবায়ের অনুসারীরা কাকরাইল মসজিদ ও টঙ্গীর ইজতেমা মাঠ পুরো বছর ব্যবহার করার সুযোগ পাচ্ছেন। একচেটিয়াভাবে তারা সব মসজিদগুলোতে কাজ করতে পারছেন। পক্ষান্তরে আরেক পক্ষকে দ্বিতীয়পর্বে ইজতেমা করতে বাধ্য করা হচ্ছে। দ্বিতীয় পর্বের ইজতেমা আয়োজক কমিটি কাকরাইল মসজিদে মেহনত করার সময় পাচ্ছে মাত্র দুই সপ্তাহ। সারা বছরও তাদের (দ্বিতীয় পর্বের মুসল্লি) ইজতেমা ময়দানে প্রবেশের কোনো সুযোগ নেই। তারা কেবল ময়দানের পশ্চিম পাশে একটি ছোট মসজিদ সংস্কার করে দাওয়াতি কাজ পরিচালনা করার চেষ্টা করেন। তারপরও তাদের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হচ্ছে। এমনকি মসজিদ থেকে বের করে দেওয়া হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, প্রথমপর্বের ইজতেমা আয়োজক কমিটি প্রতি বছরই তাদের শীর্ষ মুরুব্বিদের ময়দানে আনতে পারলেও দুঃখজনক হলেও সত্য যে, দ্বিতীয় পক্ষের (নিজামুদ্দিন মারকাজের অনুসারীরা) তাদের শীর্ষ মুরুব্বি মাওলানা সাদ কান্ধলভীকে ময়দানে আনতে পারছেন না। একপক্ষ সরকারি সুযোগ সুবিধা লাভ করছে; আরেকপক্ষ গত ৫ বছর যাবত বিভিন্ন জুলুম নির্যাতন এবং লাঞ্ছনা বঞ্চনার শিকার হচ্ছে। মুফতি মুয়াজ বলেন, ২০২৩ সালের ১৫ নভেম্বর বিশ্ব ইজতেমার সভায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছিলেন, এবারের ইজতেমায় (২০২৪ সালের) মাওলানা সাদকে আসার অনুমতি দেবেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে মন্ত্রী না হলেও তিনি মাওলানা সাদকে আসার ব্যবস্থা করবেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কথায় তখন আমরা আশ্বস্ত হয়েছিলাম এবং দ্বিতীয় পর্বে ইজতেমা করতে রাজি হয়েছিলাম; কিন্তু মাওলানা সাদ কান্ধলবীকে টঙ্গী ইজতেমা ময়দানে আসার ব্যাপারে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আমাদের নিরাশ ও হতাশ করেছেন। যেহেতু মাওলানা সাদ সাহেবকে ২০২৪ সালের বিশ্ব ইজতেমায় আনার ব্যাপারে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহোদয় আমাদের আশ্বাস দিয়েছিলেন, সেই মোতাবেক আমরাও দেশ-বিদেশের সাথীদের বিষয়টি তাৎক্ষণিক জানিয়েছিলাম; কিন্তু এখন যখন তিনি (স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী) আমাদের হতাশ করলেন- সারা দেশের সাথীরা এখন বিক্ষুব্ধ, তারা জানালেন তাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। তিনি প্রশ্ন রেখে আরও বলেন, মাওলানা সাদ সারা পৃথিবী যেতে পারলে, বাংলাদেশে কেন আসতে পারবেন না। এর সঠিক কোনো জবাব রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে এখনো আমাদের দেওয়া হয়নি। আমরা জানতে চাই, যিনি বিদেশি মেহমানদের নিরাপত্তা বিধান করেন; তিনি কি মাওলানা সাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয়েছেন? তিনি কি কোনো উগ্রমহলকে ভয় পান? যে সাদ সাহেব বাংলাদেশে আসলে কোনো উগ্রমহল দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সৃষ্টি করবে। দেওবন্দের প্রধান মাওলানা আরশাদ মাদানী বাংলাদেশে অবস্থান করছেন জানিয়ে সম্মেলনে বলা হয়, আরশাদ মাদানী সাহেব সুষ্পষ্ট ভাষায় গতকাল বলেছেন, মাওলানা সাদ সাহেবের সাথে দেওবন্দের কোনো বিরোধ নেই। যেখানে দেওবন্দের প্রধান বলে গেলেন মাওলানা সাদের সঙ্গে তাদের কোনো বিরোধ নেই। সেখানে মাওলানা সাদকে নিয়ে দেওবন্দের রেফারেন্সে কেউ যদি গুজব ছড়াতে চায় তাহলে সরকারের উচিত বিষয়টির তদন্তসাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া। মুফতি মুয়াজ আরও বলেন, মাওলানা সাদ বিশ্ব ইজতেমায় না আসলে বিদেশি মেহমানরা আসবেন না। বিশ্ব ইজতেমা দিন দিন ঐতিহ্য হারাচ্ছে। আর এ রকম চলতে থাকলে ভবিষ্যতে বিশ্ব ইজতেমা আঞ্চলিক সম্মেলনে পরিণত হবে। তাই এবারের ইজতেমায় মাওলানা সাদের আসা নিশ্চিত করতে আজ (বুধবার) সন্ধ্যা ৭টার মধ্যে ভিসা কনফার্ম করার জন্য ইজতেমার লাখো মুসল্লির পক্ষ থেকে দাবি জানাই। তা না হলে বাংলাদেশের বিক্ষুব্ধ মুসল্লিরা কোনো প্রকার অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সৃষ্টি করলে তার দায় সরকারকেই নিতে হবে। অতএব আমরা চাই উল্লেখিত সময়ের মধ্যেই সরকারের শুভবুদ্ধির উদয় হোক এবং আমাদের নিয়ে তারা যে খেলা খেলছেন তা থেকে ফিরে আসুক। তিনি আরও বলেন, মূল কথা হলো- প্রথম পর্বের ইজতেমা আয়োজক কমিটি যেমন তাদের শীর্ষ মুরুব্বিদের নিয়ে ইজতেমা করেছেন; তেমনি আমরাও চাই দ্বিতীয় পর্বের বিশ্ব ইজতেমা আয়োজক কমিটির শীর্ষ মুরুব্বি মাওলানা সাদ কান্ধলবীকে নিয়েই ইজতেমা করতে চাই। এদিকে ইজতেমার প্রধান গেটের ভেতরে বিদেশি কামরার সামনে স্থাপিত জেলা প্রশাসনের সমন্বয় কক্ষে সাধারণ মুসল্লি পরিষদ সংবাদ সম্মেলন করতে চাইলে পুলিশ বাধা দেয়। তারপর তারা গেটের বাইরে এসে সম্মেলন করেন।