আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে সবখানে

প্রকাশিতঃ ফেব্রুয়ারী ১১, ২০২৪ | ৯:২৮ পূর্বাহ্ন
মোঃ রাছেল রানা, প্রধান সম্পাদক

১৯৫২ সালের এ সময়ে একুশের আন্দোলনের ডালপালা ছড়িয়ে যেতে থাকে সারা দেশে। এতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে ছাত্রসমাজ। ঢাকার বাইরে সবচেয়ে বলিষ্ঠ আন্দোলন গড়ে ওঠে নারায়ণগঞ্জে। এছাড়া দেশের অন্যান্য জেলা ও মহকুমায়ও ছাত্ররা দলে দলে বাংলা ভাষার মর্যাদা রক্ষার অন্দোলনে রাস্তায় নেমে পড়েন। একুশের দিনলিপি বইয়ে উল্লেখ করা হয়েছে, ১৯৫২ সালের এগারোই ফেব্রুয়ারি দিনটি একাধিক ঘটনার তাৎপর্যে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। একুশের কর্মসূচি পালন উপলক্ষ্যে বিস্তারিত খবর ও নির্দেশ জানতে জেলা ও মহকুমা শহর থেকে দুই-একজন করে ছাত্র-যুবনেতা ঢাকায় আসছেন, ফেরত যাচ্ছেন। চলছে এরকম আসা-যাওয়া। আবার ঢাকা থেকে কখনো দূত, কখনো বার্তা যাচ্ছে কোনো কোনো জেলা শহরে। এককথায়-রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চলছে পূর্ববঙ্গজুড়ে। পতাকা দিবস যত না অর্থ সংগ্রহের তাগিদে, তার চেয়ে বেশি গণসংযোগের উদ্দেশ্যে। এ কাজে যেমন যুবলীগের কর্মী, তেমনই ছাত্রাবাসের তরুণ কর্মীদের দেখা গেছে বিশেষ তৎপরতায়। রাজধানী ঢাকা ও বন্দরনগরী চট্টগ্রাম এদিক থেকে বলা যায় আন্দোলনের কেন্দ্রবিন্দু। একুশ উপলক্ষ্যে নারায়ণগঞ্জ হয়ে ওঠে উত্তাল। সেজন্য তাকে অভাবিত মাশুলও গুনতে হয়েছে। শামসুজ্জোহা, সফি হোসেন, মমতাজ বেগমসহ কয়েকজনের নেতৃত্বের গুণে একুশের ইতিহাসে নারায়ণগঞ্জ বিশিষ্টতায় লিপিবদ্ধ। ঢাকার মতো এখানেও অল্পবয়সি ছাত্রছাত্রীরা একুশের প্রেক্ষাপট তৈরিতে স্কুল ছেড়ে পথে নেমেছে। মিছিলে স্লোগানে ব্যস্ত সময় কাটিয়েছে। এক অদ্ভুত আবেগ তাদের তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে। ঢাকার সঙ্গে নারায়ণগঞ্জের রাজনৈতিক যোগাযোগ বরাবরই নিবিড়। ব্রিটিশ শাসনামল পেরিয়ে পাকিস্তানেও তা একই রকম। ঢাকা জেলার অন্য দুই মহকুমা শহর মুন্সীগঞ্জ ও মানিকগঞ্জের তুলনায় নারায়ণগঞ্জ অতিমাত্রায় রাজনীতি সচেতন। তাই এখানে একুশ উপলক্ষ্যে পোস্টার, ব্যানার ও দেওয়াললিপির রক্তিম বর্ণমালা শোভা পাচ্ছে দেওয়ালে দেওয়ালে। নারায়ণগঞ্জের বিশেষ খ্যাতি শ্রমিক অঞ্চল হিসাবে। একুশের নেতৃত্বসহ সংশ্লিষ্টদের প্রত্যাশা-এখানকার শ্রমজীবী মানুষ একুশের ডাকে ছাত্রদের পাশে এসে দাঁড়াবে। সেই প্রত্যাশা মিথ্যা হয়নি। একুশের প্রতিবাদী পাথর এখানে দ্রুতই গড়াতে শুরু করে। শুধু নারায়ণগঞ্জ নয়, ছাত্রদের ডাকে একুশকে সফল করে তুলতে দেখা গেল শহরে-শহরে, গ্রামে-গঞ্জে শিক্ষায়তন ঘিরে ছাত্রসমাজের প্রতিবাদী কর্মসূচির প্রস্তুতিতে। বেলতলার আহ্বান আর সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের তাতে সমর্থন বৃথা যায়নি। একেকটি দিন যাচ্ছে আর প্রতিবাদী চিন্তার সাংগঠনিক প্রস্তুতি চলছে সুদূর রাজশাহী, রংপুর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে দক্ষিণে বন্দরনগরী চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, বরিশাল, ফরিদপুর, খুলনা এবং উত্তর-পূর্বে সিলেট, ময়মনসিংহ, গারো পাহাড়ের হাজং এলাকা, মধ্যখানে কুমিল্লা এবং যশোর, বগুড়া, পাবনা-সর্বত্র এক ধরনের ছাত্র-গণজাগরণ।