মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের ৭০টি দেশ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানিয়েছে এবং এ সরকারের সঙ্গে কাজ করার অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ। মঙ্গলবার রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবের অডিটরিয়ামে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের বার্ষিক সাধারণ সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা জানান। ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ৭ জানুয়ারি নির্বাচন করার ক্ষেত্রে দেশি-বিদেশি অনেক ষড়যন্ত্র ছিল। এগুলো মোকাবিলা করে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। নির্বাচনে প্রায় ৪২ শতাংশ মানুষ ভোট দিয়েছে। ইউরোপভুক্ত দেশ পুর্তগালে ২ বছর আগে অনুষ্ঠিত হওয়া নির্বাচনে ৩৯ শতাংশ ভোট পড়েছে। আয়ারল্যান্ডের নির্বাচনেও ৪০ শতাংশ ভোট পড়েছিল। বাংলাদেশে ইতোপূর্বে অনুষ্ঠিত সব নির্বাচনের তুলনায় ৭ জানুয়ারি নির্বাচন সহিংসতামুক্ত হয়েছে। সত্যিকার অর্থে নির্বাচন উৎসব হয়েছে। তিনি বলেন, অনেকে ধারণা করেছেন- যারা নির্বাচন ও গণতন্ত্রকে বাধাগ্ৰস্ত করার জন্য অপচেষ্টা চালিয়েছিল, নির্বাচনের পর বিশ্ববাসী কী প্রতিক্রিয়া দেয়, তা দেখার জন্য অপেক্ষা করছিল। ৭০টি দেশের সরকারপ্রধান প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানিয়েছে এবং এ সরকারের সঙ্গে কাজ করার অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সরকারপ্রধান (প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন) চিঠি লিখে বর্তমান সরকারের সঙ্গে কাজ করার অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছেন। একই সঙ্গে মার্কিন সরকারের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক আরও দৃঢ় ও বিস্তৃত করার কথা বলেছেন। সেই সঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়ন কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট ও ইউরোপীয় কমিশন অভিনন্দন জানিয়েছে। যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক অভিনন্দন বার্তা পাঠিয়েছেন। এ ছাড়া জাতিসংঘ, ওআইসিসহ ২০টি আন্তর্জাতিক সংস্থা প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানিয়েছে। তাই যারা বিদেশিদের প্রতিক্রিয়া নিয়ে ভাবছে, তাদের চেহারা মলিন হয়ে গেছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর মুক্তি পেয়ে বলেছেন- আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করেও হেরে গেছে। বিশ্ববাসী সরকারকে অভিনন্দন জানানো ও বিএনপির নির্বাচন বর্জন করার কারণে তারা তাদের নেতাকর্মীদের তোপের মুখে পড়েছে। কর্মীদের কাছে তারা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। এর হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য এসব বক্তব্য দিচ্ছে। বর্তমান সরকার অতীতের সরকারগুলোর ছেয়ে অনেক শক্তিশালী। জার্মানির মিউনিখে অনুষ্ঠিত নিরাপত্তা সম্মেলনে অন্যতম মধ্যমণি ছিলেন শেখ হাসিনা। সময়ের অভাবে তিনি সেখানে অনেক রাষ্ট্রপ্রধানের সঙ্গে বৈঠক করতে পারেননি। অনুষ্ঠানে হাছান মাহমুদ বলেন, সাংবাদিকরা সমাজের আলোকবর্তিকা হিসেবে কাজ করেন। মানুষের মনন গঠন ও সমাজ এবং রাষ্ট্রকে সঠিক বার্তা দেওয়া ও সঠিক পথে পরিচালিত করার ক্ষেত্রে সাংবাদিকরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকেন। তিনি বলেন, মানুষের মনন গঠন করার ক্ষেত্রে সাংবাদিকদের লেখনি ও সংবাদ বিরাট ভূমিকা পালন করে থাকে। আমাদের প্রতিটি গণতান্ত্রিক আন্দোলনে সাংবাদিকদের লেখনি, রিপোর্টিং ও সাংবাদিক ইউনিয়নগুলোর বক্তব্য প্রতিবাদ বিরাট ভূমিকা পালন করেছে। আজকে যখন জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাচ্ছে, তখনও আমাদেরকে নানা প্রতিবন্ধকতা অতিক্রম করতে হচ্ছে। সেই ক্ষেত্রে সাংবাদিকদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সিনিয়র সাংবাদিকদের অনুরোধ জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, আমাদের দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হলে অপরাজনীতির বিরুদ্ধে কলম ধরতে হবে। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থায় অবশ্যই সরকারের সমালোচনা হবে। সরকারের ভুল কর্মের জন্য প্রতিবাদ হবে। কিন্তু রাজনীতির নামে জীবন্ত মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করার রাজনীতি চিরতরে অবসান হওয়া দরকার। দেশের ভাষা আন্দোলন ও স্বাধিকার আন্দোলনে সাংবাদিকরা যেভাবে অবদান রেখেছিলেন, সত্যিকার অর্থে একটি গণতান্ত্রিক সমাজ গড়তে সেভাবে আপনাদের অগ্ৰণী ভূমিকা পালন করতে হবে। বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সমাজকল্যাণমন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, সাধারণ মানুষ বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ ও দায়িত্বশীলতা এবং সংবাদ মাধ্যমের ইতিবাচক ভূমিকা আশা করে। কিন্তু সকালে পত্রিকা খুললেই যেভাবে নেতিবাচক সংবাদের প্রাধান্য থাকে, তখন মনে হয়, প্রচন্ড নেতিবাচকতা দিয়ে যদি দিন শুরু হয়, তাহলে তার ভেতরে থাকা ইতিবাচক শক্তিটা দুর্বল হয়ে পড়ে। নেতিবাচক সংবাদ ছাড়া নাকি কাটতি হয় না। পাঠকের মননশীলতা তৈরি করার জন্য সংবাদ মাধ্যমের ইতিবাচক ভূমিকা দরকার। দেশে নতুন নতুন মিডিয়া তৈরি হচ্ছে। এর ব্যাপ্তি বাড়ছে। সেটার সঙ্গে তাল মিলিয়ে নতুন মানুষ যুক্ত হবে। কেউ নতুন মিডিয়ার কনসেপ্টের সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে না নিতে পারলে পেশা থেকে বাদ পড়বেন। এজন্য বিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে আমাদের সবাইকে চলতে হবে। নিত্য নতুন অনেক চ্যালেঞ্জ আসছে, সেগুলো নিয়ে ভাবতে হবে এবং এর সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়ার মানসিকতা তৈরি করতে হবে। প্রধানমন্ত্রীর সাবেক তথ্য বিষয়ক উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী বলেন, একটি অসাম্প্রদায়িক ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশ গড়তে সাংবাদিকরা যার যার অবস্থান থেকে কাজ করবে। বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন-বিএফইউজের সাবেক মহাসচিব মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল বলেন, ১৯৭২ সালে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নে যে বক্তৃতা দিয়েছিলেন, তা আজও প্রাসঙ্গিক। কারা সাংবাদিক হবেন, সংবাদপত্রের মালিক হবেন, তা নিয়ে বঙ্গবন্ধু কথা বলেছিলেন। তার সেই প্রশ্নগুলো আজও উত্থাপিত হচ্ছে। কারা সংবাদপত্র চালাচ্ছে। কোত্থেকে টাকা পাচ্ছে। আজকে দেশে এতগুলো সংবাদপত্র প্রকাশিত হচ্ছে, মাঠে পাওয়া না গেলেও তালিকায় রয়েছে। এগুলো সাংবাদিক ইউনিয়কে দেখতে হবে। জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, আমি সংবাদ পত্রেরই মানুষ। জাতীয় সংসদে দাঁড়িয়ে সাংবাদিকদের বিষয়ে বেশি কথা বলব। জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শ্যামল দত্ত বলেন, গণমাধ্যমের নানা সংকট রয়েছে। আমাদের সংকট থেকে উত্তরণ ঘটাতে হলে আরও বেশি সংঘবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি ও যুগান্তর সম্পাদক সাইফুল আলম বলেন, বাংলাদেশে এই মুহূর্তে অনেক বেশি সংবাদপত্র, টেলিভিশন, এফএম রেডিও এবং অন্যান্য রেডিও রয়েছে। সাংবাদিকের সংখ্যা অনেক বেড়েছে। সব সাংবাদিক ভালো নেই- এটাও সত্য কথা। যারা রুটি-রুজির সংগ্রামে আমাদের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। আত্মমর্যাদাবোধ প্রতিষ্ঠার সন্ধানে আমাদের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। আত্মমর্যাদাবোধ প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে আমাদের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। সেই বিএফইউজে, ডিইউজের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নেতাদের বক্তব্যের মধ্য দিয়ে সেগুলো প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বিএফইউজের দাবিগুলো সাধারণভাবে সমগ্র সাংবাদিক সমাজের দাবি। তিনি বলেন, এখন প্রশ্ন হচ্ছে- অবিলম্বে দশম বোর্ড ও ৭০ ভাগ মহার্ঘ্য ভাতা, নবম ওয়েজ বোর্ডের বকেয়া আদায়, পেনশন, গণমাধ্যমকর্মী আইন, টেলিভিশনের অভিন্ন বেতন কাঠামো, সব সাংবাদিকের নিয়োগপত্র, বেতন-ভাতা নিয়মিত করা, আবাসিক সমস্যা সমাধান করা, জাতীয় সম্প্রচার আইন করার দাবি। প্রশ্নটা এই জায়গায়, দাবিগুলো তো সব আছে, দীর্ঘদিন ধরে আছে এটি চলমান দাবিতে পরিণত হয়েছে। এখন এই দাবিগুলো কিভাবে আদায় হবে, দাবিগুলো কিভাবে প্রতিষ্ঠিত হবে, সেই রণকৌশলটা ঠিক করতে হবে। সেই পদ্ধতিটা ঠিক করতে হবে এবং এই দাবি আদায়ের জন্য ঐক্যবদ্ধভাবে সবার সম্মিলিত চেষ্টা, ক্ষমতায়, শক্তিতে, আমাদের একটি অভিন্ন কর্মকৌশল নির্ধারণ ছাড়া আর কোনো পথ নেই। আমি ব্যক্তিগতভাবে বিশ্বাস করি আমরা যতটা শক্তিশালী হয়ে দাঁড়াতে পারি ততটাই আমাদের দাবি আদায় হবে। সাংবাদিক সমাজের জন্য কল্যাণ বয়ে আনতে পারব। নিশ্চয়ই যারা নেতৃত্ব দিচ্ছেন তাদের ওপর আমাদের বিশ্বাস আছে, আস্থা আছে। আমরা সেদিনের স্বপ্ন দেখছি, যাতে আমরা যেই স্বপ্ন নিয়ে এই পেশায় আত্মনিয়োগ করছি, সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন হবে। ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি সোহেল হায়দার চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক আকতার হোসেনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন বিএফইউজের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব শেখ মামুনুর রশিদ, বিএফইউজের কোষাধ্যক্ষ খায়রুজ্জামান কামাল, জাতীয় প্রেস ক্লাবের যুগ্ম সম্পাদক আলী আশরাফ প্রমুখ। অনুষ্ঠানে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের সম্মাননা ক্রেস্ট প্রদান করা হয়।