খাদ্যপণ্যে মূল্যস্ফীতির কারণে গরিব মানুষের দুর্ভোগ কতটা বেড়েছে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। সম্প্রতি প্রকাশিত বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, বাংলাদেশে এখনো ১৮ শতাংশ পরিবার খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে, যা গত অক্টোবরে ছিল ২১ শতাংশ। দেশে এখনো খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের চেয়ে খাদ্যপণ্যের দাম বেশি হারে বাড়ছে। এ কারণে খাদ্যবহির্ভূত খাতের চেয়ে খাদ্যপণ্যে মূল্যস্ফীতির হারও বেশি বাড়ছে। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, বাংলাদেশে এখনো মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশের উপরে। বিশ্বব্যাংকের হিসাবে গত ডিসেম্বরে খাদ্য খাতে মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৯ দশমিক ৬ শতাংশের বেশি। তবে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসাবে এ হার ৯ দশমিক ৫৬ শতাংশ। বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের খুচরা বাজারে মোটা চালের দাম এখন করোনা-উত্তর স্তরের চেয়ে ৪০ শতাংশ বেশি রয়েছে। সংস্থাটির আগের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, বাংলাদেশে মোটা চালের দাম বিশ্বের মধ্যে সর্বোচ্চ। যদিও আলোচ্য সময় মজুরি (কৃষি মজুরিসহ) বেড়েছে, তবে এখনো খাদ্যমূল্য বৃদ্ধির চেয়ে মজুরি বাড়ার হার কম। বস্তুত বাজারভেদে মোটা চালের দামে ভিন্নতা লক্ষ করা যায়। দাম বৃদ্ধির কারণে গরিব মানুষের কষ্ট বেড়ে যায়। এদিকে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের ফুড প্ল্যানিং ও মনিটরিং ইউনিটের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশে অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে খাদ্য উৎপাদন যেমন বেড়েছে, তেমনই বেড়েছে খাদ্যপণ্যের মজুত। ফলে সরবরাহও বেড়েছে। বাস্তব পরিস্থিতি হলো কোনো খাদ্যপণ্যের উৎপাদন বাড়লেও বাজারে এর প্রভাব খুব একটা পড়ে না। এমনকি ফসল কাটার মৌসুমেও ধান-চালের বাজারে অস্থিরতা লক্ষ করা যায়। সিন্ডিকেটের কারণেই এমনটি হচ্ছে। কাজেই সিন্ডিকেটের কারসাজি বন্ধ করতে হবে। একই সঙ্গে মধ্যস্বত্বভোগীদের কারসাজি বন্ধ করতেও বাস্তবমুখী পদক্ষেপ নিতে হবে। খাদ্যপণ্যের অপচয় ও পচন রোধেও নিতে হবে যথাযথ পদক্ষেপ। দেশে কোনো পণ্যের দাম নির্ধারণ করে দিলেও কেন তা বাস্তবায়ন করা যায় না, সে রহস্য খুঁজে বের করা দরকার। মজুতদারদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনাকালে কেন সংশ্লিষ্ট পণ্যের সংকট তীব্র আকার ধারণ করে, সে রহস্যও উদঘাটন জরুরি। এক্ষেত্রে সরষের ভেতরের ভূত তাড়ানোর পদক্ষেপ নিতে হবে, নয়তো মানুষের দুর্ভোগ কমবে না। ডলার সংকট অব্যাহত থাকলে বাজার নিয়ন্ত্রণে যত পদক্ষেপই নেওয়া হোক না কেন, তাতে আমদানিকৃত পণ্যের বাজারের অস্থিরতা কমবে কি না, সন্দেহ থেকেই যায়।