এ সপ্তাহে ব্রাজিলে যখন ২০টি দেশের প্রতিনিধিরা (জি-২০) মিলিত হন, তখন গাজায় যুদ্ধে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৩০ হাজারের কাছাকাছি পৌঁছেছে। আমি আশা করি, বিষয়টি রিও ডি জেনিরোতে আমন্ত্রিত পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের মধ্যে এ হত্যাকাণ্ড বন্ধে তাদের দেশ কী করেছে ও কী করেনি, সে সম্পর্কে ভাবার অবকাশ তৈরি করেছে। গাজার যুদ্ধকে নির্মম এবং সম্পূর্ণ মানবিক ব্যর্থতার উদাহরণ বললেও কম বলা হবে। এ নিয়ে আবার বর্ণনা করার কোনো প্রয়োজন নেই। এর পরিবর্তে, আমার মানবিক সহকর্মীদের পক্ষ থেকে আপনাদের শুধু আজকের বিষয়ে নয়, বরং আগামীর জন্যও আমি যা ভয় পাই সে সম্পর্কে সুস্পষ্ট সতর্ক করার অনুমতি চাইছি। ১৩৮দিন ধরে গাজায় যা ঘটেছে তা এর তীব্রতায়, বর্বরতায় ও পরিধিতে তুলনাহীন। হাজার হাজার মানুষ হতাহত হয়েছে, ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়েছে অসংখ্য মানুষ। আশপাশের পুরো এলাকা মাটিতে মিশে গেছে। শত-সহস্র মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে, শীত শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতিতে তাদের বসবাস করতে হচ্ছে। অন্তত ৫ লাখ মানুষ দুর্ভিক্ষের দ্বারপ্রান্তে। সবচেয়ে বেশি মৌলিক যে চাহিদাগুলো প্রয়োজন অর্থাৎ খাবার, পানি, চিকিৎসাসেবা, পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থা, তা পাওয়ার সুযোগ নেই। পুরো জনগোষ্ঠীর মানবতা কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। গাজার জনগণের ওপর যে নৃশংসতা চলছে এবং তারা যে মানবিক কষ্ট সহ্য করছে, তা কেউ না জানার ভান করতে পারে না, কারণ এসব ঘটছে পুরো বিশ্বের সামনেই। সাহসী ফিলিস্তিনি সাংবাদিকরা তা প্রচার করায় তাদের অনেককে হত্যাও করা হয়েছে। সাহায্য সংস্থাগুলো যে তাদের যথাসাধ্য চেষ্টা করছে, তা কেউ না জানার ভান করতে পারে না : আমাদের প্রায় ১৬০ সহকর্মীকে হত্যা করা হয়েছে, তবুও আমাদের দলগুলো খাদ্য, চিকিৎসা সরবরাহ এবং নিরাপদ পানীয় জল সরবরাহ করে চলেছে। নিরাপত্তার ঝুঁকি, আইনশৃঙ্খলার অবনতি, অবরুদ্ধ অঞ্চলে প্রবেশের সীমাবদ্ধতা এবং ব্যক্তিগত ট্র্যাজেডি সত্ত্বেও আমরা যা যা করতে পারি, তা করছি। গাজায় জাতিসংঘের বৃহত্তম সংস্থাকে অর্থ প্রদানে বাধাদান সত্ত্বেও। এবং ইচ্ছাকৃতভাবে আমাদের বদনাম করার চেষ্টা সত্ত্বেও। আমি যে মানবিক সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্ব করি, তাতে সম্প্রতি গাজা অঞ্চলজুড়ে সাহায্যের প্রবাহ বাড়ানোর জন্য আমাদের কী প্রয়োজন, সে সম্পর্কে একটি পরিকল্পনা প্রকাশ করা হয়েছে। নিরাপত্তা গ্যারান্টি; ঝুঁকি কমাতে একটি উন্নত মানবিক ঘোষণার ব্যবস্থা; টেলিযোগাযোগ যন্ত্রপাতির ব্যবহার; সব সম্ভাব্য প্রবেশ পয়েন্টে অবিস্ফোরিত অস্ত্র অপসারণ : এর কোনোটিই অযৌক্তিক নয়। যদিও আমি প্রায়ই বলেছি যে, এটি পরিচালনার জন্য আমাদের যা যা প্রয়োজন, কর্তৃপক্ষ তাতে সহযোগিতা করবে বলে আমার মনে হয় না। সেক্ষেত্রে আমি যে ভুল, তা প্রমাণিত হওয়া ছাড়া আর কিছুই চাই না। সন্দেহাতীতভাবেই আমরা জানি যে, গাজায় আমাদের সব দলের সাহস, প্রতিশ্রুতি ও ত্যাগ সত্ত্বেও সেখানে সাহায্যের অভাবের জন্য মানবিক সংস্থাগুলোকেই দায়ী করা হবে-ইতোমধ্যেই আমাদের দোষ দেওয়া হচ্ছে। তবে কোনো ভুল করবেন না : গাজার জনগণ যে বঞ্চনা সহ্য করে আসছে তা এতটাই গুরুতর যে, তা পূরণে কোনো পরিমাণ সাহায্যই যথেষ্ট নয়। পথের প্রতিটি ধাপে আমরা যে বাধার সম্মুখীন হচ্ছি, তা এতই বিশাল যে, আমরা খুব সামান্যই এগোতে পারি। ইসরাইলের ওপর ৭ অক্টোবরের হামলাটি ছিল ভয়ংকর। আমি এজন্য বারবার নিন্দা করেছি এবং তা অব্যাহত রাখব। তবে গাজার প্রত্যেক শিশু-নারী ও পুরুষের সঙ্গে যা ঘটছে, তার ন্যায়সঙ্গত যুক্তি তারা (ইসরাইল) দিতে পারে না। তাই এ সপ্তাহে জি-২০ সম্মেলনে আসা পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের কাছে আমার বার্তাটি পরিষ্কার : যত সামান্যই হোক, সাহায্য বিতরণের সুবিধার জন্য আমরা গাজায় দখলদার শক্তি হিসাবে ইসরাইলের কাছে অনুরোধ করছি। আমরা সব জিম্মিদের অবিলম্বে ও নিঃশর্ত মুক্তির আহ্বান জানাচ্ছি। হয়তো কোনো লাভ নেই, তবুও আমরা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের অধীনে তাদের বাধ্যবাধকতাগুলো মেনে চলার জন্য আহ্বান জানিয়ে আসছি। আমরা সিদ্ধান্ত ফিরিয়ে নিতে সেইসব দেশকে অনুরোধ করছি, যারা UNRWA-কে অর্থায়ন বন্ধ করে দিয়েছে। আমরা G-20 সদস্যদের অনুরোধ করেছি, আপনাদের রাজনৈতিক নেতৃত্ব ও প্রভাব ব্যবহার করে এ যুদ্ধের অবসান ঘটান এবং গাজার জনগণকে বাঁচাতে সাহায্য করুন। আপনাদের যা করার ক্ষমতা আছে, তা ব্যবহার করুন। শুধু আপনাদের নীরবতা ও পদক্ষেপের অভাব গাজার আরও নারী ও শিশুকে খোলা কবরে নিক্ষিপ্ত করবে। মানবিক সংস্থাগুলো তো যা যা করা সম্ভব করছে; কিন্তু আপনি? আলজাজিরা থেকে ভাষান্তর : খালিদ বিন আনিস মার্টিন গ্রিফিথস : জাতিসংঘের জেনারেল ফর হিউম্যানিটারিয়ান অ্যাফেয়ার্সের আন্ডার সেক্রেটারি এবং জরুরি ত্রাণ সমন্বয়কারী