আবারও গ্রাহক পর্যায়ে বাড়ছে বিদ্যুতের দাম। নতুন মূল্য অনুযায়ী ১ থেকে ৫০ ইউনিট ব্যবহারকারীদের জন্য প্রতি ইউনিটে বাড়বে ৩৪ পয়সা। পরবর্তী স্লাব অনুযায়ী সর্বোচ্চ ৭০ পয়সা বাড়বে। এদিকে বিদ্যুৎ উৎপাদনে গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়েছে ইউনিটপ্রতি ৭৫ পয়সা। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী বলেছেন, উৎপাদন খরচের চেয়ে কম দামে বিদ্যুৎ বিক্রি করা হয়। ঘাটতি মেটাতে দাম সমন্বয় করা হচ্ছে। আগামী তিন বছর ধাপে ধাপে দাম সমন্বয় করা হবে। গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির কারণে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য আরও ব্যয়বহুল হয়ে পড়বে। এতে দেশীয় উদ্যোক্তারা প্রতিযোগিতায় সক্ষমতা হারালে দেশের অর্থনীতির ওপর পড়বে এর বিরূপ প্রভাব। এতে অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পোদ্যোক্তারা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে পড়বেন। বিশেষজ্ঞদের মতে, বিদ্যুৎ ও গ্যাস খাতে আয় বাড়ানোর উদ্যোগের পাশাপাশি সরকার ব্যয় সাশ্রয়ে যথাযথ পদক্ষেপ না নিলে দুর্নীতিবাজরা আরও উৎসাহিত হতে পারে। এদিকে মূল্যস্ফীতির কারণে মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে। নতুন করে বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি মূল্যস্ফীতির ওপর আরও নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। কয়েক বছর ধরে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধসহ নানা অভিঘাত মোকাবিলায় হিমশিম খাচ্ছে মানুষ, বিশেষ করে দেশের শিল্প খাত। এ অবস্থায় বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’ হয়ে দেখা দিতে পারে। বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য গ্যাসের দাম বৃদ্ধির প্রতিক্রিয়ায় বিটিএমএ সভাপতি বলেছেন, এ মুহূর্তে গ্যাসের দাম বাড়ানোর কোনো যৌক্তিকতা নেই। এমনিতে গ্যাসের সংকট, চাহিদার তুলনায় সরবরাহ অনেক কম। ইতোমধ্যে গ্যাস সংকটের কারণে অনেক প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে। এখন বাকিগুলোও ধীরে ধীরে বন্ধ হবে। বস্তুত দফায় দফায় গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি ভোক্তার জীবনকে অতিষ্ঠ করে তুলছে। এছাড়া বিভিন্ন পণ্যের দামও ক্রমাগত বাড়ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, সারা বছরই বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতার উল্লেখযোগ্য অংশ অলস থাকে। ফলে এর বিপরীতে বসিয়ে বসিয়ে বিপুল অঙ্কের কেন্দ্র ভাড়া দিতে হয়, যা ক্যাপাসিটি চার্জ নামে পরিচিত। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কম খরচে বিদ্যুৎকেন্দ্র চালালে, প্রতিযোগিতামূলক দরপত্রের ভিত্তিতে বিদ্যুৎকেন্দ্র করা হলে উৎপাদন ব্যয় এত বাড়ত না। মানুষ কম খরচে বিদ্যুৎ পেত। আমরা লক্ষ করেছি, সরকার বিদ্যুৎ উৎপাদনে গ্যাসের ওপর বিশেষভাবে জোর দিয়েছে। দেশে গ্যাসের সংকট শুরু হওয়ার পরও সরকার বিদ্যুৎ উৎপাদনে গ্যাসের ওপর নির্ভরতা উল্লেখযোগ্যভাবে কমায়নি। বিশেষজ্ঞরা অনেকদিন ধরেই বলে আসছেন, আমরা এখনো কয়লা উত্তোলন ও গ্যাসক্ষেত্র অনুসন্ধানে অনেক পিছিয়ে আছি। জ্বালানি স্বনির্ভরতা অর্জনের জন্য অভ্যন্তরীণ সম্পদের সুষ্ঠু ও সাশ্রয়ী ব্যবহার করা দরকার। একই সঙ্গে অপচয় রোধ করে জ্বালানি ব্যবস্থাপনায় সুশাসন নিশ্চিত করা জরুরি। আমরা মনে করি, বিদ্যুতের দাম না বাড়িয়ে এ খাতের সিস্টেম লস দূর করার বিষয়ে মনোনিবেশ করা উচিত সরকারের। ঘনঘন বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হলে আক্ষরিক অর্থেই সাধারণ মানুষের জীবন সংকটাপন্ন হয়ে পড়বে। নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি, পরিবহণ ভাড়া বৃদ্ধি ইত্যাদিতে নাকাল হয়ে আছে মানুষের জীবন। এ পরিপ্রেক্ষিতে সরকারকে গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর পদক্ষেপ থেকে সরে আসার অনুরোধ জানাব আমরা।