অগ্নিঝরা মার্চের চতুর্থ দিন আজ। ১৯৭১ সালের ৪ মার্চ গণবিক্ষোভে টালমাটাল ছিল চারদিক। দিনটি ছিল দেশব্যাপী লাগাতার হরতালের তৃতীয় দিন। এদিন সামরিক জান্তার সান্ধ্য আইন ভঙ্গ করে রাজপথে নেমে আসে হাজার হাজার সাধারণ মানুষ। দ্রোহ-ক্ষোভে বঞ্চিত-শোষিত বাঙালি তখন ক্রমেই ফুঁসে উঠছিল ঔপনিবেশিক পাকিস্তানি শাসক-শোষকদের বিরুদ্ধে। প্রদেশের বেসামরিক শাসনব্যবস্থা সম্পূর্ণ ভেঙে পড়ে। এদিন রেডিও পাকিস্তান ঢাকা কেন্দ্র ‘ঢাকা বেতার কেন্দ্র’ এবং পাকিস্তান টেলিভিশন ‘ঢাকা টেলিভিশন’ হিসাবে সম্প্রচার শুরু করে। আন্দোলনের পাশাপাশি ৭ মার্চের জনসভা সফলে আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতারা দফায় দফায় বৈঠকে বসেন। তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) চলতে থাকে জনসভার প্রস্তুতি। পাশাপাশি ঢাকাসহ সারা দেশেই গঠন হতে থাকে সংগ্রাম কমিটি। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ওয়েবসাইটের তথ্যমতে, ১৯৭১ সালের এই দিনে জাতীয় পরিষদ অধিবেশন স্থগিত ঘোষণা ও গণহত্যার প্রতিবাদে আওয়ামী লীগ প্রধান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে ঢাকাসহ সারা বাংলায় সকাল ৬টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত সর্বাত্মক হরতাল পালিত হয়। প্রদেশের বেসামরিক শাসনব্যবস্থা সম্পূর্ণ ভেঙে পড়ে। হরতাল চলাকালে খুলনায় সেনাবাহিনীর গুলিতে ৬ জন শহিদ হন। চট্টগ্রামে দুদিনে প্রাণহানির সংখ্যা দাঁড়ায় ১২১ জনে। বঙ্গবন্ধুর আহ্বানের পর স্বাধিকার আন্দোলনে গুলিতে আহত মুমূর্ষু বীর সংগ্রামীদের প্রাণরক্ষার্থে শত শত নারীপুরুষ ও ছাত্রছাত্রী ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করে ঢাকা মেডিকেল কলেজের ব্লাড ব্যাংকে স্বেচ্ছায় রক্তদান করেন। বেতার-টেলিভিশনশিল্পীরা ঘোষণা করেন, যতদিন দেশের জনগণ ও ছাত্রসমাজ সংগ্রামে লিপ্ত থাকবেন, ততদিন ‘বেতার ও টেলিভিশন অনুষ্ঠানে তারা অংশ নেবেন না। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এক বিবৃতিতে বলেন, চরম ত্যাগ স্বীকার ছাড়া কোনোদিন কোনো জাতির মুক্তি আসেনি। তিনি উপনিবেশবাদী শোষণ ও শাসন অব্যাহত রাখার ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বানে সাড়া দেওয়ায় বীর জাতিকে অভিনন্দন জানান। আওয়ামী লীগ প্রধান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ৫ ও ৬ মার্চ সকাল ৬টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত হরতাল পালনের আহ্বান জানিয়ে বলেন, যেসব সরকারি ও বেসরকারি অফিসে কর্মচারীরা এখনো বেতন পাননি, শুধু বেতন প্রদানের জন্য সেসব অফিস আড়াইটা থেকে সাড়ে ৪টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। করাচি প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এয়ার মার্শাল (অব.) আজগর খান দেশকে বিচ্ছিন্নতার হাত থেকে রক্ষার উদ্দেশ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠ দল আওয়ামী লীগের কাছে অবিলম্বে ক্ষমতা হস্তান্তরের দাবি জানান। পিডিপি প্রধান নূরুল আমীন এক বিবৃতিতে ১০ মার্চ রাজনৈতিক নেতাদের সম্মেলনে যোগদানের আমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান করে প্রেসিডেন্টের প্রতি অবিলম্বে জাতীয় পরিষদের অধিবেশন ঢাকায় আহ্বান করার দাবি জানান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫৫ জন শিক্ষক পৃথক বিবৃতিতে ঢাকার ‘পাকিস্তান অবজারভার’ পত্রিকার গণবিরোধী ভূমিকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন।