অন্যের জমিতে দিনমজুরের কাজ করেন দরিদ্র কৃষক শিবু সেন। স্বল্প আয়ের সংসারে সন্তানদের উচ্চশিক্ষিত করে গড়ে তোলার স্বপ্ন বুনছিলেন তিনি; কিন্তু দারিদ্র্য সেই স্বপ্নপূরণে অনিশ্চয়তা তৈরি করেছে। পাবনা সরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন দরিদ্র পরিবারের সন্তান শান্তা সেন। এতে খুশি হওয়ার কথা থাকলেও তার মুখে হাসি নেই। কারণ তার পড়াশোনার খরচ কিভাবে চলবে তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। অর্থের অভাবে তার মেডিকেলে পড়াশোনা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। মেয়ের চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্নপূরণে সমাজের বিত্তবানদের সহযোগিতা কামনা করেছেন তার বাবা-মা। নড়াইল সদর উপজেলার তুলারামপুর ইউনিয়নের মিতনা গ্রামের দরিদ্র কৃষক শিবু সেন ও শিবানী সেনের এক ছেলে এক মেয়ে নিয়ে ছোট পরিবার তাদের। একমাত্র ছেলে সমিরণ নড়াইল ভিক্টোরিয়া কলেজে স্নাতক (সম্মান) পড়ছেন। শান্তা এসএসসিতে সদর উপজেলার চাঁচড়া নাছেল উদ্দিন বিশ্বাস মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এবং এইচএসসিতে নড়াইল সরকারি ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে জিপিএ-৫ পেয়ে এ বছর পাবনা সরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তি হয়েছেন। শিবানী সেন গ্রামের বিভিন্ন বাড়ি থেকে গরুর দুধ সংগ্রহ করে প্রতিদিন প্রায় ১২ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে নড়াইল শহরে গিয়ে বিক্রি করেন। ছেলে সমিরণ ও কন্যা শান্তাকে লেখাপড়া শেখাতে গিয়ে বাবার একমাত্র সম্বল ২৫ শতাংশ ফসলি জমি চার বছর আগেই বিক্রি করে দিয়েছেন। বাকি শুধু বসতভিটার মাত্র ৫ শতাংশ জমি অবশিষ্টাংশ আছে। এখন স্বামী-স্ত্রীর উভয়ের আয়ে টেনেটুনে চলছে সংসার। এর ওপর শান্তা প্রথমে মেডিকেলে ভর্তি হবার কোনো অর্থ ছিল না। এ সময় স্থানীয়দের সহযোগিতায় ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করলেও এখন বাকি শিক্ষাজীবন ভালোভাবে সম্পন্ন করার উপায় খুঁজে পাচ্ছেন না তারা। মেয়ের চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্নপূরণে অর্থই বড় বাধা, ভেবে কান্নায় ভেঙে পড়েছেন বাবা-মা। শিবু সেন বলেন, আমরা গরিব মানুষ, এত টাকা খরচ করে মেয়েকে কিভাবে পড়াব? দুজনে আয় রোজগার করে যা পাই, তা দিয়েই সংসার চালানোই কষ্ট হয়ে পড়ে। ভাগ্যের ওপর সব ছেড়ে দিয়েছি। আমাদের সামর্থ্য না থাকা সত্ত্বেও বড় আশা নিয়ে সবার সহযোগিতায় মেডিকেলে ভর্তি করিয়েছি। এখন তো অন্ধকার দেখছি। সবার প্রতি অনুরোধ, আপনারা একটু সহযোগিতা করেন। আমার মেয়েটার স্বপ্ন ভাঙতে দিয়েন না। মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পাওয়ায় বন্ধু-বান্ধব ও এলাকাবাসীর শুভেচ্ছায় সিক্ত হলেও আর্থিক সংকটে পড়াশোনা বন্ধের শঙ্কায় শান্তা সেন। তিনি বলেন, আমার ছোট বেলা থেকেই স্বপ্ন ছিল চিকিৎসক হবার। সেই স্বপ্নপূরণের পথে একটি ধাপ এগিয়েছি। এখন তো সাহায্য না পেলে পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যাবে। বাবা-মা ও অন্যরা কষ্ট করে ভর্তি করাইছে, এখন যদি টাকার জন্য পড়তে না পারি, তাহলে সবার স্বপ্ন ভেঙে যাবে। আমার জীবনটাই শেষ হয়ে যাবে।