সিরাজগঞ্জ শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজে শিক্ষকের ছোড়া গুলিতে আহত চিকিৎসাধীন ছাত্র আরাফাত আমীন তমালের পাশে বসে মা সেলিনা আক্তার মঙ্গলবার দুপুরে প্রশাসনের উদ্দেশে প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে বলেন, ‘শিক্ষকের হাতে পিস্তল থাকবে কেন? আমার ছেলে যদি গুলিতে মারা যেত!’ তমালের বাড়ি বগুড়া সদর উপজেলার নাটাইপাড়া ধানসিঁড়ি মহল্লায়। তার বাবা অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য আব্দুল্লাহ আল-আমীন। সেলিনা আক্তার বলেন, তমাল ও তনু নামে আমার দুই সন্তান। তমাল বড়। ছোট ছেলে তনু উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করেছে। অনেক বড় স্বপ্ন নিয়ে তমালকে সিরাজগঞ্জ শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজে ভর্তি করেছি। কিন্তু এই মেডিকেল কলেজের একজন শিক্ষকের হাতে পিস্তল থাকবে এটা ভাবাই যায় না। তার হাতে পিস্তল থাকবে কেন? তিনি নাকি পিস্তল নিয়েই ক্লাস নিতেন। তার ভয়ে শিক্ষার্থীরা হয়তো মুখ খুলতে সাহস পায়নি। অন্য শিক্ষক ও কলেজ প্রশাসন এসব আগে থেকে জানলেও কেন তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হলো না। আমার ছেলে যদি গুলিতে মারা যেত, তাহলে কেউ কি আমার ছেলেকে ফিরিয়ে দিত পারত? কেউ ফিরে দিতে পারত না। আমি এই শিক্ষকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি। জানা যায়, বিসিএস ৩৯ ব্যাচের চিকিৎসক মেডিকেল কলেজের কমিউনিটি মেডিসিন বিভাগের শিক্ষক রায়হান শরীফ সিরাজগঞ্জ সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে। তমালের সহপাঠী মাসুম শিক্ষক রায়হান শরীফের বিরুদ্ধে নারী শিক্ষার্থীদের যৌন হয়রানির অভিযোগ এনে জানান, রায়হান শরীফ পিস্তল নিয়ে ক্যাম্পাস ও ক্লাসে আসায় আমরা সব সময় ভয়ে থাকতাম। তিনি ক্লাসের টেবিলে পিস্তল রেখে পাঠদান করাতেন। আমরা কিছু বললে পরীক্ষায় ফেল করানোর ভয় দেখাতেন। আরেক সহপাঠী আক্তারুজ্জামান জানান, রায়হান শরীফ মূলত কমিউনিটি মেডিসিন বিভাগের শিক্ষক। তিনি গায়ের জোরে ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগেও ক্লাস নিতেন। এদিকে শ্রেণিকক্ষে পিস্তল নিয়ে পাঠদান করানোর বিষয়টি জানা নেই বলে জানিয়ে শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান আব্দুল্লাহেল কাফী বলেন, পিস্তল টেবিলে রেখে ক্লাস নিতেন আগে এমন অভিযোগ কোনো শিক্ষার্থী দেয়নি। শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ আমিরুল হোসেন চৌধুরী বলেন, এ ঘটনার আগে কোনো শিক্ষার্থী ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ দেয়নি। তবে বিষয়টি নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে তদন্ত চলমান আছে। তদন্ত শেষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে স্বাস্থ্য বিভাগ।