কমছে কি জ্বালানি তেলের দাম?

প্রকাশিতঃ মার্চ ৬, ২০২৪ | ৯:৫৫ পূর্বাহ্ন
অনলাইন নিউজ ডেক্স

চার দিনব্যাপী জেলা প্রশাসক (ডিসি) সম্মেলন আজ বুধবার শেষ হচ্ছে। রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়েছে এবারের সম্মেলন। গত রোববার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের শাপলা হলে ডিসি সম্মেলন-২০২৪ এর উদ্বোন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজ সন্ধায় বঙ্গবন্ধু আন্তজাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে নৈশভোজের মাধ্যমে এবারের ডিসি সম্মেলন শেষ হচ্ছে। গত রোববার সকালে শুরু হওয়া এ সম্মেলন আজ বুধবার রাত সাড়ে ৯টায় মন্ত্রিপরিষদ সচিবের বক্তব্য ও নৈশভোজের মাধ্যমে শেষ হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার কার্যালয়ে জেলা প্রশাসক সম্মেলন-২০২৪ উদ্বোধন করেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি জেলা প্রশাসকদের খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধির ওপর জোর দেওয়া, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সাশ্রয়ে ব্যবস্থা গ্রহণসহ ২৫টি নির্দেশনা দেন। সম্মেলনের প্রথম দিন ৭টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সঙ্গে ১৩ টি কার্য-অধিবেশন হয়। দ্বিতীয় দিন ৯টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সঙ্গে ২৪টি অধিবেশন হয়। তৃতীয় দিন ৭টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সঙ্গে ১৬ কার্য-অধিবেশন হয়েছে। চতুর্থ দিন শেষ ৭ টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সঙ্গে ৯টি কার্য-অধিবেশন হবে ডিসিদের। এর মধ্যে রয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সংক্রান্ত বিষয়াদি, ফিডব্যাক অধিবেশন ও সম্মেলনের মূল্যায়ন, সমাপনী অধিবেশন। বাংলাদেশ সুপ্রীম কোটর্ ভবনে প্রধান বিচারপতির সঙ্গে ডিসিদের সৌজন্য স্বাক্ষত এবং সদয় নির্দেশনা গ্রহণ। প্রধান বিচারপতির সৌজনৌ ডিসিদের আপ্যায়ন। এর পরে বঙ্গবন্ধু আন্তজাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস এসোসিয়েশনের সভা। সব শেষে সন্ধ্যায় বঙ্গবন্ধু আন্তজাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ডিসিদের নৈশভোজ হবে। এবার সম্মেলনে মোট ৩০টি অধিবেশন হয়। এর মধ্যে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সঙ্গে কার্যঅধিবেশন ২৫টি। মোট অংশগ্রহণকারী মন্ত্রণালয় ৫৬টি এবং ৩৫৬টি প্রস্তাবের উপর আলোচনায় হয়েছে। এদিকে অনিয়ম-দুর্নীতি রোধে জেলা প্রশাসকদের মনিটরিং বাড়ানোর পাশপাশি দক্ষ কর্মকর্তা হিসেবে তাদের ভালো গুণগুলো অধীন কর্মকর্তাদের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়ার নির্দেশনা, বিভাগীয় পর্যায়েও বন এবং পরিবেশ উন্নয়ন কমিটি গঠন, পরিবেশ রক্ষায় ইটিপি পর্যবেক্ষণ করতে ডিভাইস বসানো, মিথ্যা ও বানোয়াট তথ্য ছড়ানোর বিরুদ্ধে চালানো লড়াইয়ে জেলা প্রশাসকদের কাছে সহায়তা এবং বিশ্ববাজারের সঙ্গে তেলের দাম সমন্বয়ের গেজেট প্রকাশ করা হবে মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীরা ডিসিদের জানিয়েছেন। এ গুলো বাস্তবায়নের জন্য তাদের সহযোগিতা চেয়েছেন তারা। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে জেলা প্রশাসকদের (ডিসি সম্মেলনে) সঙ্গে বৈঠক শেষে মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী পৃথক পৃথক ভাবে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। জনপ্রশাসন মন্ত্রী মো. ফরহাদ হোসেন বলেছেন, অনিয়ম-দুর্নীতি রোধে জেলা প্রশাসকদের মনিটরিং বাড়ানোর পাশপাশি দক্ষ কর্মকর্তা হিসেবে তাদের ভালো গুণগুলো অধীন কর্মকর্তাদের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তাদের একটি ছোট ভুলের জন্য যেন বিব্রত না হতে হয়। সেজন্য তাদের সতর্ক করেছি। প্রশাসন মন্ত্রী বলেন, জেলা প্রশাসকের কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে যেন তার অধীন কর্মকর্তারা শিখতে পারে, কীভাবে প্রশাসন চালাতে হয়, ম্যানেজিরিয়াল কাজের দক্ষতা, আচরণগত যে বিষয় আছেৃ আমরা বলেছি আপনি একজন অভিভাবক, প্রশিক্ষক, মেন্টর হিসেবে কাজ করছেন। আপনার যে ভালো গুণ আছে সেগুলো তুলে ধরা। দেশপ্রেম, মানবিকতা থাকবে। মানুষ যারা সেবা নিতে আসবে তাদেরকে যথেষ্ট মর্যাদা-সম্মান দিয়ে করতে হবে। মাঠ প্রশাসন নিয়ে এক প্রশ্নে তিনি বলেন, মাঠ প্রশাসনের শৃঙ্খলা নিয়ে এই আলোচনা হয়েছে। আমাদের বিভাগীয় কমিশনাররা নিবিড়ভাবে জেলাগুলোকে দেখেন। সেক্ষেত্রে যদি আমাদের মাঠ প্রশাসনের বিভাগীয় জায়গায় আরও জনবল বাড়াতে হয়, অর্গানোগ্রাম পরিবর্তন হয় সেটা ভবিষ্যতে করবো। আমরা সতর্কও করে দিয়েছি যে ছোট ভুলের জন্য সারাদেশে কর্মকর্তারা যেন বিব্রত না হয় সে বিষয়টি সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে।’ জেলা প্রশাসক সম্মেলনের তৃতীয় দিনের ষষ্ঠ অধিবেশন শেষে পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, সার্বক্ষণিক ইটিপি পর্যবেক্ষণ করতে ডিভাইস বসানো হবে। বর্তমানে আড়াইহাজার এফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট (ইটিপি) আছে, যেগুলো আমাদের পক্ষে মনিটরিং করা সম্ভব না। ইটিপি অনেকের আছে, কিন্তু চালায় না। যখন কোনো পরিদর্শক যাওয়ার খবর তারা পায়, তখনই চালু করেন। ইটিপি যখন তারা একদিন বন্ধ রাখেন তাহলে লাখখানেক টাকা বেঁচে যাবে। কাউকে যদি আমরা তিন মাস পর জানিয়ে দিই, অমুকে ইটিপি চালাচ্ছেন না, তখন তাকে জরিমানা করা হয় ১০ হাজার টাকা। এই টাকা জরিমানা দিয়ে একটা অবৈধ কার্যক্রমকে আমরা বৈধতা দিচ্ছি। উপজেলা ও জেলার মতো বিভাগীয় পর্যায়েও বন এবং পরিবেশ উন্নয়ন কমিটি করা হবে। পরিবেশ রক্ষায় অনেক সময় স্থানীয় চাপ থাকে সেই বিষয়ে তারা কিছু বলেছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, না, সেই বিষয়ে তারা কিছু উল্লেখ করেনি। এ ধরনের সম্মেলনের দুটি উদ্দেশ্য। এক হচ্ছে মাঠ প্রশাসনের কথাগুলো আমরা শুনি, আর এক হচ্ছে আমাদের যে প্রত্যাশা ওনাদের কাছ থেকে সেগুলো আমরা একটু স্পষ্ট করার চেষ্টা করি। পরিবেশ অধিদপ্তরের মূল উদ্দেশ্য এবং দায়িত্ব হচ্ছে মানমাত্রা নির্ধারণ করা। ইনফোর্সমেন্টের দায়িত্ব হচ্ছে মাঠ পর্যায়ে। আমরা প্রায় প্রতিটা কাজের জন্যই ডিসিদের ওপর নির্ভরশীল। কেননা স্থানীয় পর্যায়ে সেগুলো ওনারা বাস্তবায়ন করেন। আমরা এখন টেকসই উন্নয়নের কথা বলছি। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেছেন, বিশ্ববাজারের সঙ্গে জ্বালানি তেলের দাম সমন্বয় করে চলতি সপ্তাহে গেজেট জারি হতে পারে। এতে তিনি জ্বালানি তেলের দাম আরও সাশ্রয়ী করার কথা জানান। তিনি বলেন, তেলের দাম নির্ধারণ হবে বিশ্ববাজারের সঙ্গে (সমন্বয় করে)। সেখানে একটা ফর্মুলা করা হয়েছে এরই মধ্যে। আমরা প্রধানমন্ত্রীর অনুমতি পেয়েছি। এ সপ্তাহেই আমরা গেজেট আকারে প্রকাশ করবো। প্রতিমন্ত্রী বলেন, জেলা প্রশাসকদের আমরা বলেছি যে, সামনে যে সময়টা আসছে বিশেষ করে মার্চ মাসসহ আমাদেরকে বিদ্যুৎ নিরবচ্ছিন্ন রাখতে হবে। আমরা চাচ্ছি জ্বালানিও যেন নিরবচ্ছিন্ন থাকে। এই বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হয়েছে, পরিবেশ সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সোলারের (সৌরবিদ্যুৎ) পরিধি আমরা কীভাবে বাড়াতে পারি সে বিষয়েও আলোচনা হয়েছে। আরেকটি বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে, সেটি হল জ্বালানির দাম আমরা কীভাবে সাশ্রয়ী রাখতে পারি। তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি এরই মধ্যে জ্বালানির ক্ষেত্রে আমরা ডায়নামিক প্রাইসিংয়ের দিকে চলে গেছি। আমরা যদি তেলের কথা বলি, এ সপ্তাহে ডাইনামিক প্রাইসিংয়ের দিকে যাবে। আশা করছি জ্বালানির একটা সাশ্রয়ী মূল্যের সমন্বয়ে আমরা যেতে পারবো। ডিসিদের প্রস্তাবনায় বিভিন্ন বিষয় ছিল। যেমন, অবৈধভাবে গ্যাস ব্যবহারকারীদের বিরুদ্ধে আমরা কীভাবে ব্যবস্থা নিতে পারি? আরও কঠোর হতে পারি কি না? আমরা বলেছি যে পরিকল্পিত শিল্প এলাকা ছাড়া আমরা কোথাও গ্যাস এবং বিদ্যুতের সংযোগ দেবো না। আমরা অনুরোধ করেছি বিষয়টি দেখার জন্য। তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত বলেছেন, সংবাদ মাধ্যমে দায়বদ্ধতা ও শৃঙ্খলা নিশ্চিত করতে কেবল মাত্র নিবন্ধিত ও পেশাদার অনলাইন নিউজ পোর্টালগুলোকে চালানোর অনুমতি দেওয়া হবে। মিথ্যা ও বানোয়াট তথ্য ছড়ানোর বিরুদ্ধে চালানো লড়াইয়ে জেলা প্রশাসকদের কাছে সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে।